গত বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি শিল্প ধর্মঘটের সময় রাজ্য সরকার কর্মীদের হাজিরার বিষয়ে কঠোর নির্দেশ জারি করে। সেই নির্দেশে রাজ্য সরকার পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দেয় বন্ধে গরহাজির থাকলে কর্মীদের এক দিনের বেতন কাটা ছাড়াও এক দিন সার্ভিস ব্রেক হবে।এই নির্দেশের পরও কয়েকজন অধ্যাপক ওই দিন অনুপস্থিত থাকেন। তার পর এবছর ২০ ও ২১ ফেব্রুয়ারি ফের ৪৮ ঘণ্টা ব্যাপী ধর্মঘটের ডাক দেয় ১১ টি কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠন। এক্ষেত্রেও রাজ্য সরকার একই নির্দেশ জারি রাখে। কিন্তু এবছরও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। বেশ কয়েকজন অধ্যাপক এবছরও অনুপস্থিত থাকেন।
গত বছরের গর হাজিরার বিষয়ে সম্প্রতি রাজ্য সরকারের তরফে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে রিপোর্ট চাওয়া হয়। সেই নির্দেশের ফলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত অধ্যাপকদের অনুপস্থিতির কারন জানতে চেয়ে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি চিঠি দেন। ১৯ ফেব্রুয়ারি সেই চিঠি হাতে পান অধ্যাপকেরা। চিঠি পাবার তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তীব্র অসন্তোষ ছড়িয়েছে অধ্যাপক মহলে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যপকদের সংগঠন বুটা -র সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক পার্থ মিত্র বলেন, বিষয়টি নিয়ে অধ্যাপক মহলে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। কারন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২০০ অধ্যাপক এবং ৩১ জন বিভাগীয় প্রধান সকলকেই এই চিঠি দেওয়া হয়েছে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বন্ধের এক বছর পর চিঠি পাঠানোর বিষয়টি বিস্ময়কর। তাঁদের সংগঠনের তরফে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া রাজ্যের আর কোনও বিশ্ববিদ্যালয়েই এই ধরনের নির্দেশ যায়নি। বিষয়টি নিয়ে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি সংগঠনের সাধারণ সভায় আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পাশাপাশি পার্থ বাবু আরও জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের কোনও হাজিরা খাতা নেই। এক বছর আগের বিষয়টি মনে রাখাও সম্ভব নয়। তবে এবারের বন্ধে উপাচার্য প্রতিটি বিভাগে নিজে পরিদর্শন করে প্রায় ৪০ জন অধ্যাপকের অনুপস্থির বিষয়ে রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন বলে জানতে পেরেছেন।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্মৃতি কুমার সরকার জানিয়েছেন, গত বারের বন্ধের গরহাজিরার বিষয়ে রিপোর্ট চেয়ে রাজ্য সরকার সম্প্রতি একটি নির্দেশ পাঠিয়েছে। আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে সেই রিপোর্ট পাঠানোর জন্য নির্দেশে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকদের কোনও হাজিরা খাতা নেই। তাই বিষয়টি অধ্যাপকদের উপরেই ছেড়ে দিতে সকলকেই চিঠি দেওয়া হয়েছে। এবারের বন্ধে গরহাজিরার জন্য ৩৩ জন অধ্যাপককে শো-কজ করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৩ জন বিভাগীয় প্রধানও রয়েছেন।
অধ্যাপকদের হাজিরা খাতা রাখার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে টিচার্স কেরিয়ার অ্যাডভান্স স্কীমে একটি প্রস্তাব এসেছে। বিষয়টি নিয়ে এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলের সভায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। শোকজের সন্তোষজনক উত্তর না পাওয়া গেলে সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।