বর্ধমান, ১৮ জুনঃ- পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে প্ররোচনায় পা দিয়ে গন্ডগোলে জড়িয়ে না পড়ার জন্য দলের নেতা ও কর্মীদের সতর্ক করলেন তৃণমূলের মহাসচিব তথা শিল্প ও পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। গন্ডগোলে জড়ালে দল যে পাশে দাঁড়াবেনা সেকথাও সাফ জানিয়েছেন তিনি। দলের বন্দুকবাজ নেতা-কর্মীদেরও সতর্ক করেছেন তিনি। এরই পাশাপাশি দলের গোঁজ প্রার্থীদের বোঝানোর দায়িত্ব অফিসিয়াল প্রার্থীদেরই নিতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তাতেও কাজ না হলে গোঁজ প্রার্থীদের তিনি নিজে চিঠি দিয়ে দলের পক্ষে কাজ করার জন্য অনুরোধ জানাবেন। মঙ্গলবার বর্ধমান শহরের সংস্কৃতি লোকমঞ্চে দলের জেলাপরিষদ ও পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী এবং ব্লক সভাপতিদের নিয়ে এক প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করে জেলা তৃণমূল কংগ্রেস (গ্রামীণ)। শিবিরে দলের মহাসচিব ছাড়াও জেলা সভাপতি তথা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, বিধায়ক বনমালি হাজরা, উজ্জ্বল প্রামানিক, তপন চট্টোপাধ্যায়, শাহনওয়াজ হোসেন, দলের জেলা পর্যবেক্ষক অলক দাস, পুলক চক্রবর্তী প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সভায় দলের প্রার্থী ও ব্লক সভাপতিদের উদ্দেশ্যে বলেন, কুৎসা এবং মিথ্যাচার করে চারিদিকে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। সিপিএম বিভিন্ন জায়গায় আমাদের কর্মীদের উপর সন্ত্রাস চালাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াই করতে হবে। সিপিএম এবং কংগ্রেস এক হয়ে অপপ্রচার করছে। কংগ্রেসের এমন কোনও নেতা নেই যাঁরা সিপিএমের দাক্ষিণ্য পাননা। সেজন্য কংগ্রেস কখনও সিপিএমের বিরুদ্ধে জোটবদ্ধ আন্দোলন করেনা। পঞ্চায়েত ভোটের পর সিপিএম নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। কংগ্রেসের সাইন বোর্ড খুলে যাবে। একই হাল হবে বিজেপিরও। বহু জায়গায় দলেরই লোকজন অফিসিয়াল প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছ। এনিয়ে তৃণমূলের মহা সচিব বলেন, দলে কোনও গোষ্ঠী থাকবেনা। গোষ্ঠী থাকা উচিত নয়। সবাই নেতা হতে পারেনা। সবাইকে প্রার্থী করাও সম্ভব নয়। দলের কেউ নির্দল হয়ে দাঁড়াতে পারবেননা। দলের সিদ্ধান্ত সবাইকে মেনে চলতে হবে। গোঁজ প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে তাঁর পরামর্শ, দলের বাইরে যাবেন না। মনে রাখবেন, অফিসিয়াল প্রার্থীর বিরুদ্ধে দাঁড়ানো মানে দলকে বিপদে ফেলা। মমতা বন্দোপাধ্যায়কে জব্দ করা। অভিমান করে দলের ক্ষতি করবেননা। এর আগে অনেকেই দল ছেড়েছেন। টিভিতে তাঁদের প্রায়ই মুখ দেখা যায়। কিন্তু, তাঁরা ভোটে জিততে পারেননা। তবে, গোঁজ প্রার্থীদের দূরে না ঠেলার জন্য অফিসিয়াল প্রার্থীদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, দলের প্রার্থীদেরই এব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। দলের গোঁজ প্রার্থীদের অভিমান ভাঙাতে তাঁদের কাছে যেতে হবে। তাতেও কাজ না হলে আমি নিজে চিঠি দেব। ভোটের প্রচারে মানুষের ক্ষোভের কথা, সমস্যার কথা জেনে তা মেটানোর জন্য প্রার্থী ও ব্লক সভাপতিদের পরামর্শ দেন পার্থ বাবু। কামদুনিতে মুখ্যমন্ত্রীর বিক্ষোভের মুখে পড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিপিএমের মদতেই বিক্ষোভ হয়েছে। মূল অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হওয়ার পরও কেন এই বিক্ষোভ। আর অনুন্নয়নের জন্য যদি বিক্ষোভ হয় তার জন্য দায়ী সিপিএম। সেখানকার পঞ্চায়েত সিপিএমের দখলেই রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়েই ভোট হবে বলে জোরের সঙ্গে জানান তিনি। তবে, পিছন থেকে কেউ কেউ কলকাঠি নেড়ে ভোট বন্ধ করার চেষ্টা করছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। হাতে সময় কম। তাই দলীয় কর্মীদের ভোটের প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়ার পরামর্শ দেন স্বপন বাবু। এলাকার মহিলা, বুদ্ধিজীবী, ছাত্র-যুবদের নিয়ে প্রার্থীদের প্রচারে বেড়িয়ে পড়ার নির্দেশ দেন তিনি। যেসব জায়গায় পঞ্চায়েতে দল বিনাপ্রতিদন্দ্বিতায় জিতেছে, সেখানেও জোরদার প্রচারে নামার নির্দেশ দেন তিনি। পঞ্চায়েত সমিতির সব বুথে বড় ব্যবধানে না জিতলে পঞ্চায়েত সমিতি হাতছাড়া হতে পারে বলে সতর্ক করেন স্বপন বাবু। গ্রামীণ এলাকায় জেলাপরিষদের ৫৫ আসনই দলজিতবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।