E Purba Bardhaman

আদালতে হাজির থাকা সত্বেও নিখোঁজ প্রনবানন্দ সমবায় সমিতির কর্তাকে পুলিশ খুজে পাচ্ছেনা

ফাইল চিত্র - ভাস্কর মুখোপাধ্যায়
ফাইল চিত্র – ভাস্কর মুখোপাধ্যায়

বর্ধমান, ১৮ ফেব্রুয়ারিঃ- বর্ধমান জেলার বিভিন্ন থানায় অন্ততঃ ছ’টি অর্থ আত্মসাত ও প্রতারণার মামলা রয়েছে বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রনবানন্দ সমবায় সমিতির কর্তা ভাস্কর মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে যে সব ধারায় কেস রুজু হয়েছে তার বেশিরভাগই জামিন অযোগ্য। গ্রেপ্তারি এড়াতে তিনি গা-ঢাকা দিয়েছেন। পুলিশের দাবি, তাঁকে ধরার সব রকমের চেষ্টা চলছে। তা সত্ত্বেও পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে অর্থ আত্মসাত এবং প্রতারনার মামলায় তিনি দিব্যি আদালতে হাজির হলেন। অভিযুক্তদের জন্য নির্ধারিত ডকেও উঠলেন। আদালত চত্বরেই দীর্ঘক্ষণ কাটালেন। কিন্তু, পুলিশ তাঁর হদিশ পেলনা। এই ঘটনায় পুলিশের নজরদারি নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। শুধু একটি ক্ষেত্রেই নয়, এর আগেও অভিযুক্ত সমবায় কর্তার বিরুদ্ধে চলা মামলাগুলি সরকারি সাক্ষীদের গা-ছাড়া মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। বাজেয়াপ্ত হওয়া বহু নথি বিচার চলাকালীন আদালতে পেশ করতে পারেনি সরকার পক্ষ। এমনকী বাজেয়াপ্ত হওয়া বহু নথির দুই জিম্মাদারের হদিশই পাওয়া যায়নি। ফলে, তাঁদের জিম্মায় থাকা বহু গুরুত্বপূর্ণ নথি আদালতে পেশ করতে পারছেনা সরকার পক্ষ। ফলে, আদালতে মুখ পুড়ছে সরকারের। ন্যায় বিচারের স্বার্থে বাজেয়াপ্ত হওয়া নথিগুলি আদালতে পেশ হওয়া অত্যন্ত জরুরি বলে জানিয়েছেন সরকারি আইনজীবী।

    পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, আমানত কারীদের জমা রাখা অর্থ ফেরত দিতে না পেরে ২০০০ সালে বর্ধমানের প্রনবানন্দ সমবায় ব্যাঙ্ক বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাঙ্কটিকে চালু করতে সেখানে সরকারি প্রশাসক বোর্ড বসায় তৎকালীন রাজ্য সরকার। সমবায় দপ্তরের তদন্তে ব্যাঙ্কে বিস্তর আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি ধরা পড়ে। এনিয়ে জেলার বিভিন্ন থানায় ব্যাঙ্কের কর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে সমবায় দপ্তর। সেই মামলাগুলির বেশির ভাগই বিচার বর্ধমানের প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতে চলছে। বিচার চলাকালীন আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে বহু গুরুত্বপূর্ণ নথি আদালতে পেশ করতে পারেনি সরকার পক্ষ। ঘটনার সময় ব্যাঙ্কের বহু নথি বাজেয়াপ্ত করে রাজ্য দুর্নীতি দমন শাখা। সেইসব নথি ব্যাঙ্কের দুই কর্মীকে জিম্মাদার করে তাঁদের কাছেই রাখা হয়। কিন্তু, তাঁদেরই হদিশ পাওয়া যাচ্ছেনা। ফলে, তাঁদের জিম্মায় থাকা নথি আদালতে পেশ করতে পারছেনা সরকার।

ফাইল চিত্র – ভাস্কর মুখোপাধ্যায়

    আমানতকারীদের অর্থ ফেরত না দিয়েই রাজ্য সরকার এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ব্যাঙ্কটিকে লিক্যুইডেশনে পাঠিয়ে দেয়। ব্যাঙ্কের লাইসেন্সও বাতিল করে দেয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এসবের মাঝেই ২০১১ সালে ফের সমিতিটি চালু হয়। বর্ধমানের গন্ডি ছাড়িয়ে বিভিন্ন জেলায় প্রনবানন্দ সমবায় সমিতির শাখা খোলা হয়। আমানতকারীরাও সেখানে টাকা জমা রাখেন। কয়েকমাস আগে বেআইনি কার্যকলাপের অভিযোগে সমিতিটিকে বন্ধ করার নির্দেশ দেয় রাজ্য সমবায় দপ্তর। বিভিন্ন সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে সরকারি সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। সরকারি নির্দেশে বিভিন্ন থানায় নতুন করে সমিতির কর্তাদের বিরুদ্ধে কেস রুজু হয়। কাটোয়া থানা সমিতির কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করে। যদিও ভাস্কর বাবু সহ সমিতির বাকি কর্তারা এখনও অধরা। তারা জামিনও নেননি। এর মাঝে গত ১২ ফেব্রুয়ারি একটি মামলায় প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতে হাজির হন। ঘণ্টা খানেক আদালত চত্বরে থাকলেও পুলিশ তাঁকে ধরতে পারেনি। কেসটির সরকারি আইনজীবী পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে আর কোনও কেস আছে কীনা তা আমার জানা নেই। তাঁকে ধরার দায়িত্ব পুলিশের। তবে, জিম্মাদারদের কাছে থাকা নথি আদালতে পেশ না হওয়ায় খুব সমস্যা হচ্ছে। বিভিন্ন মহলে জানিয়েও বহু নথি আদালতে আসছেনা। অন্যদিকে বর্ধমান থানার আই সি দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, বিষয়টা আমার জানা ছিলনা। আগেভাগে জানতে পারলে ফাঁদ পেতে অবশ্যই ধরতাম। আর আদালত চত্বরে আমার কিছুই করনীয় নেই। ঘটনার তদন্ত রাজ্য দুর্নীতি দমন শাখা করেছিল। তাই  এনিয়ে বিশেষ কিছু জানা নেই। তবে, জিম্মাদারদের হদিশ না মেলায় বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।

Exit mobile version