E Purba Bardhaman

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হসপিটালে নতুন শিশু বিভাগের উদ্বোধন করলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

বর্ধমান, ১৫ জানুয়ারিঃ-শিশুদের আরও উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে এবং শিশু মৃত্যুর হার কমানোর লক্ষ্যে  বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হাসপাতালে উদ্বোধন হ’ল নতুন শিশু বিভাগ। আগে ৬০ টি বেড নিয়ে একটি শিশু বিভাগ ছিল। এখন তার পরিবর্তে নতুন ভবনে ২১০ বেডের একটি আধুনিক মানের শিশু বিভাগ চালু হ’ল। নতুন এই বিভাগের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্য ও আইন বিভাগের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য্য।

    নতুন শিশু বিভাগে সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিট (এস এন সি ইউ), পেডিয়াট্রিক ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট ( পিকু), নিওনেটাল ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট ( নিকু),  বেবি ওয়ারর্মার সহ শিশুদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সমস্ত ইউনিট থাকবে। যদিও এখনই সমস্ত পরিষেবা চালু হচ্ছে না। সম্পূর্ণ রূপে চালু হতে আরও কিছুদিন লাগবে।

    শিশু বিভাগ ছাড়া পুরুষ এবং মহিলা যক্ষা রুগীদের জন্য দুটি পৃথক ওয়ার্ড এবং ১ টি বিশ্রামালয়েরও উদ্বোধন করেন মন্ত্রী।

    স্বাস্থ্য মন্ত্রী ছাড়া এদিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, কৃষি মন্ত্রী তথা রুগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান মলয় ঘটক, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বাস্থ্য বিষয়ক হাই পাওয়ার টাক্স ফোর্সের চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায়, জেলা শাসক ওঙ্কার সিং মিনা, সি এম ও এইচ , মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষা মঞ্জুশ্রী রায় এবং হসপিটাল সুপার অসিত বরন সামন্ত।Inaugural programme of Paediatric Ward, Tuberculosis Ward & Biometric attendance. Inaugurated by Minister of state for Health & Law Chandrima Bhattacharya. At Burdwan Medical College & Hospital in Burdwan.

    রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্রমউন্নতি সম্বন্ধে বলতে গিয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, গত বছর অনেক শিশু মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে হৈ হৈ হয়েছিল। এই মৃত্যুর অনেকগুলি কারনের মধ্যে অন্যতম জায়গার অভাব।  এখন এখানে শিশুদের বেডের সংখ্যা ৬০ থেকে বাড়িয়ে ২১০ করা হল। এতে ভাল ফল পাওয়া যাবে। তিনি আরও বলেন, পোস্ট গ্যাজুয়েটে আসন সংখ্যা বাড়ানোর ফল হিসাবে আগামী দুত-তিন বছরের মধ্যে আমাদের রাজ্যে আর ডাক্তারের সমস্যা  থাকবে না। বি এম সি এইচ –এর সুপারস্পেশালিটি বিভাগ ‘অনাময়’ প্রসঙ্গে আগের সরকারের ভুল নীতি নিয়েও বলতে ছেড়েননি স্বাস্থ্য অধিকর্তা। তিনি বলেন, অনাময় –এর স্থান নির্বাচন ভুল হয়েছিল। ওটা চালাতে কিছুকিছু সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু আমরা সমস্ত সমস্যাগুলিকে যত তাড়াতাড়ি  সম্ভব দূর করে আক্ষরিক অর্থেই সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল হিসাবে ওটাকে তুলে ধরব।

    হাই পাওয়ার টাক্স ফোর্সের চেয়ারম্যান ত্রিদিব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আগের সরকারের আমলে এস এন সি ইউ ছিল মাত্র ৬ টি। বি এম সি এইচে আজকের উদ্বোধনের পরে  নতুন সরকারের মাত্র দেড় বছর সময়ে তা দাড়াল ২৮ টি। আগামী মার্চ মাসের মধ্যে এই সংখ্যা দাড়াবে ৪০ টি বলে জানান ত্রিদিব বাবু।

    স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য্য বলেন, স্বাস্থ্য কাউকে ভিক্ষা করে পেতে হবে না। এটা ভারতের সংবিধান বলে প্রতিটি নাগরিকের অধিকারের মধ্যে পরে। এতদিন যে শিশুগুলি জন্ম নিচ্ছিল তাদের একটা বড় অংশ অপুষ্টি সহ নানা সমস্যায় ভুগছিল। ফলে শিশু মৃত্যু এবং নানা জটিল রোগের দেখা দিচ্ছিল। এখন স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। শিশু মৃত্যুর হার সহ জটিল রোগের প্রকোপ কমছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিবর্তন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, এই পরিবর্তন আনতে কোনও আধিকারিক পাল্টাননি, আমরা কাউকে বার করে দিইনি। মানষিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। রাজ্য সরকার এই পরিবর্তন করেছে।

    রাজ্যে ৬ টা থেকে ২৮ টা এস এন সি ইউ তৈরী হল। পাশাপাশি মাদার এন্ড চাইল্ড হেলথ কেয়ার হাব (এম সি এইচ হাব ) তৈরী হবে বলেও জানান মন্ত্রী। রাজ্যে প্রথম দফায় ১১ টি এম সি এইচ হাব তৈরী হবে। যেগুলি যেকোনো কর্পোরেট স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্রের থেকেও উন্নত হবে। ১১ টির মধ্যে কোলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতেলে ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি হবে। বাকি ১০ টির প্রত্যেকটি ১৬ কোটি টাকা ব্যায়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ এন্ড হসপিটাল, এস এস কে এম, এন আর এস, বি সি রায়, মালদা, নর্থ বেঙ্গল সহ ১০ টি জায়গায় তৈরী হবে। বি এম সি এইচ –এ শীঘ্রই ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান এবং এম আর আই ইউনিট চালু হবে। রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য নীতি নিয়ে বলতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার স্বাস্থ্যকে এতটাই গুরুত্ব দিয়েছে যে আমাদের রাজ্যে ১৯ টি জেলা হওয়া সত্ত্বেও, ঠিকমত স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে রাজ্যে ২৮ টা স্বাস্থ্য জেলা তৈরী করা হয়েছে। যেমন আসানসোলে আলাদা স্বাস্থ্য জেলা তৈরী করে কাজ হচ্ছে।

    জেলা শাসক ওঙ্কার সিং মিনা বলেন, বি এম সি এইচের স্বাস্থ্য পরিষেবা উন্নতির জন্য যে পরিকল্পনা গুলি নেওয়া হয়েছিল তা দ্রুত গতিতেই সম্পন্ন হচ্ছে। অনেক নতুন পরিকাঠামো গড়ে উঠছে। এক্ষেত্রে যেখানে আমাদের সহযোগিতা দরকার তা আমদের জানালে আমরা অবশ্যই তা করব। কিন্তু, শুধুমাত্র পরিকাঠামো ঠিক থাকলে হবে না, আপনারা পরিষেবাটাও ঠিকমত করে দেবেন। তানাহলে সমস্ত পরিকল্পনাই ব্যর্থ হবে।

Exit mobile version