Site icon E Purba Bardhaman

বিচারের মাঝ পথে সরকারি আইনজীবী বদলের দাবি জানালেন গুইর গ্রামে সিপিএমের হামলায় মৃত শেখ ইউসুফের স্ত্রী

বর্ধমান, ১৪ ফেব্রুয়ারিঃ- বিচারের মাঝ পথেই সরকারি আইনজীবী বদলের দাবি জানালেন খন্ডঘোষ থানার গুইর গ্রামে সিপিএমের হামলায় মৃত শেখ ইউসুফের স্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, সরকারি আইনজীবী ঠিকমতো কাজ করছেননা। সরকারি আইনজীবী খুনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে লঘু ধারায় (৩০৪ পার্ট টু) চার্জ গঠন করেছেন। এর ফলে অভিযুক্তরা সুবিধা পাবে। লঘু ধারায় চার্জ গঠনের পিছনে রহস্যের গন্ধ পাচ্ছেন মৃতের স্ত্রী। সরকারি আইনজীবী পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে মঙ্গলবার তিনি জেলাশাসক, পুলিশ সুপার সহ প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে চিঠি দিয়েছেন। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মীর্জা বলেন, ঘটনার সময় আমি ছিলাম না। তাছাড়া এপিপি নিয়োগের বিষয়টি আমার এক্তিয়ারে নয়। এটা সম্পূর্ণ পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) দেখেন। তবে, অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নেব।

     আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮ সালের ২ জুন সকাল সাড়ে ৮ টা নাগাদ বাইকে চেপে বাজারে যাচ্ছিলেন ইউসুফ। সিপিএমের অত্যাচারে দীর্ঘদিন ঘর ছাড়া থাকার পর আগের দিনই তিনি বাড়ি ফেরেন। সিপিএমের লোকজন তাঁকে বেশ কয়েকবার প্রানে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল বলে তাঁর পরিবারের লোকজনের দাবি। বাড়ি থেকে কিছুদূর এগানো মাত্র ক্যানেলের বাঁধে সিপিএমের লোকজন টাঙি, তরোয়াল, লাঠি প্রভৃতি নিয়ে তাঁর উপর হামলা চালায়। তাঁর মাথায় টাঙির কোপ বসায় সিপিএমের লোকজন বলে অভিযোগ। আর্তনাদ শুনে রেজিনা খাতুন বাবাকে বাঁচাতে গেলে হামলাকারীরা তাঁকে মারধর করে ঘরে ঢুকিয়ে দেয়। তাঁর শ্লীলতাহানিও করে বলে অভিযোগ। গুরুতর জখম অবস্থায় ইউসুফকে প্রথমে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভরতি করা হয়। পরে তাঁকে কলকাতার এসএসকেএমে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানেই ৭ জুন রাতে তিনি মারা যান। সিপিএমের হামলায় তৃণমূল কর্মীর মৃত্যুর ঘটনা রাজ্য রাজনীতিতে আলোড়ন ফেলে। মৃতের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে গুইর গ্রামে এসেছিলেন তৃণমূলের দুই শীর্ষ নেতা মুকুল রায় এবং মদন মিত্র। ঘটনার দিন ইউসুফের স্ত্রী আজেমা বিবি খন্ডঘোষ থানায় সিপিএমের ৮ জনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করেন। প্রথমে খন্ডঘোষ থানা হামলা, লুঠতরাজ, মারাত্মক ভাবে জখম করা প্রভৃতি ধারায় কেস রুজু করে। ইউসুফের মৃত্যুর পর অনিচ্ছাকৃত মৃত্যু ঘটানোর ধারায় (৩০৪ আইপিসি) কেস রুজু করে। যদিও দীর্ঘদিন অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। এমনকী মৃতের স্ত্রী এবং মেয়ের গোপন জবানবন্দিও রেকর্ড করায়নি পুলিশ। এনিয়ে মৃতের স্ত্রী এবং মেয়ে সিজেএম আদালতে এফিডেফিট পেশ করেন। পরে আদালতের গুঁতোয় অভিযুক্তদের মধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। যদিও মূল অভিযুক্তরা আগাম জামিন পেয়ে যায়।

     তদন্ত শেষ করে আদালতে চার্জশিট পেশ করে পুলিশ। বর্ধমানের দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতে মামলাটির বিচার চলছে। বিচার পর্বের মাঝেই সরকারি আইনজীবী পরিবর্তনের দাবি জানালেন মৃতের স্ত্রী। যিনি এই কেসের অন্যতম সাক্ষীও। বৃহস্পতিবার বর্ধমান আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে আজেমা বলেন, আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হল। অথচ সরকারি আইনজীবী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে লঘু ধারায় চার্জ গঠন করেছেন। মামলা শুরুর দিন থেকে অভিযুক্তদের বাঁচানোর চেষ্টা চলছে। সিপিএমের আমলে পুলিশ নানাভাবে অভিযুক্তদের আড়াল করেছে। আর এখন অন্যভাবে অভিযুক্তদের বাঁচানোর চেষ্টা হচ্ছে। কেসের সরকারি আইনজীবী মলয় ধর বলেন, কেস ডায়েরি অনুযায়ী চার্জ গঠন করা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে আদালতে যে নথি পেশ করেছে তাতে খুনের ধারায় চার্জ গঠন করা যায়না। সরকারি আইনজীবী পরিবর্তনের দাবি যে কেউ করতেই পারেন।

Exit mobile version