E Purba Bardhaman

বুকের দুধ খাইয়ে দেড় মাসের এক শিশুর প্রাণ বাঁচালেন মেমারি থানার কনস্টেবল

Maa-er marer hat theke bachia ek Sishu-ke buker dudh kমেমারি, ১১ মার্চঃ- বুকের দুধ খাইয়ে দেড় মাসের এক শিশুর প্রাণ বাঁচালেন মেমারি থানার এক কনস্টেবল। যে শিশুটির প্রাণ বাঁচালেন ওই মহিলা কনস্টেবল, সেই শিশুটিকে মায়ের হাত থেকে বাঁচিয়েছে পুলিশই। মহিলা কনস্টেবলের এই ভূমিকা প্রশংসা কুড়িয়েছে থানার অন্য পুলিশ কর্মীদের। মহিলা কনস্টেবলের মানবিক আচরণে মুগ্ধ জেলার পুলিশ সুপারও। পুলিশ কর্মীর এই কাজে মুদ্ধ শিশুটির পরিবারের লোকজন।

     পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্ধমান শহরের ঝাপানতলা এলাকার গৃহবধূ পুষ্প সিংহ সোমবার সকাল ৯ টা নাগাদ দেড় মাসের পুত্রসন্তানকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। রবিবারও তিনি শ্বশুর বাড়ি ছেড়েছিলেন, যদিও রাতেই তিনি ফিরে আসেন। তাই, শ্বশুরবাড়ির লোকজন বিষয়টিকে নিয়ে তেমন গা করেননি। বেলা ১১ টা নাগাদ মেমারি থানায় একটি ফোন আসে। ফোনে জানানো হয়, হৈর গ্রামের রাস্তায় এক মহিলা একটি শিশুকে মারধর করছে। তড়িঘড়ি ব্যবস্থা না নিলে মারধরের ফলে শিশুটির মৃত্যু হতে পারে। পুলিশকে খবর দেওয়ার পাশাপাশি গ্রামবাসীরা মহিলার হাত থেকে ছেলেকে মারধর থেকে নিরস্ত করেন।

     খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সঙ্গে যায় বাচ্চা ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন মহিলা। পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মহিলারা মাও-শিশুটিকে নিয়ে মেমারি থানায় আসে। শিশুটি তখন ঠকঠক করে কাঁপছে। কোকিয়ে কোকিয়ে কাঁদছে। আর মাঝে মাঝেই হাতের আঙুল চুষছে। মায়ের অস্বাভাবিক আচরণে ভীত হয়ে ছেলেকে তাঁর কাছে দেওয়ার সাহসও হচ্ছিলনা পুলিশের এবং সংস্থার মহিলাদের। বাচ্চাটিকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে করণীয় কী তাও বুঝে উঠতে পারছিলেন না তাঁরা।

     মহিলা সেলে ডিউটি করছিলেন কনস্টেবল সুমনা ঘোষ (নায়েক)। হঠাৎই শিশুটির দিকে তাঁর নজর যায়। তাঁর কথায়, বাচ্চাটাকে দেখেই আমার ৭ মাসের মেয়ে মেঘনার কথা মনে পরে। আচরণ দেখেই বুঝতে পারি, বাচ্চাটার মায়ের স্নেহ এবং বুকের দুধ দরকার। এরপর আর দেরি করিনি। বাচ্চাটাকে কোলে তুলে বুকের দুধ দিই। আর মাতৃস্নেহে আদর করতে শুরু করি। কিছুক্ষণের মধ্যেই কান্না বন্ধ হয়ে যায়। থেমে যায় কাঁপুনিও। আতঙ্কের চাহনি বদলে স্বাভাবিক হয়ে যায়। তখনই বুঝতে পারি, স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে বাচ্চাটা। কিন্তু, দৃষ্টান্ত স্থাপনকারিণী এই কাজের অনুপ্রেরণা পেলেন কোথা থেকে? সুমনা বলেন, ঘরে মেয়ে আছে। তাই অপরের সন্তানের মর্মটাও উপলব্ধি করতে পারি। আর রয়েছে পুলিশ সুপারের ভূমিকা। ভালো কাজে তিনি সবসময় আমাদের উৎসাহিত করেন। পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মীর্জা বলেন, ভালো কাজের জন্য ওই কনস্টেবলকে আজই পুরস্কৃত করা হবে। আর শিশুটির বাবা সুহাষ সিংহ বলেন, পুলিশের বিশেষ করে ওই মহিলা কনস্টেবলের ভূমিকা কোনওদিন ভুলতে পারব না। স্ত্রী এবং ছেলেকে উদ্ধার করে বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়ায় পুলিশের কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ থাকব।

Exit mobile version