Site icon E Purba Bardhaman

মঙ্গোলকোটের নিখোজ ব্যক্তির ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ উদ্ধার হল বর্ধমানে।

বর্ধমান, ২৩ জানুয়ারিঃ- মঙ্গলকোট থানার ন’পাড়ার এক তৃণমূল কর্মীর রহস্যজনক অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বর্ধমান থানার বিজয় রাম এলাকায় ডিভিসি –র পশ্চিম পাড়ে ঝোপঝাড় থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ প্রথমে মৃতের পরিচয় জানতে পারেনি। পরে রাতে মৃতের পরিবারের লোকজন বর্ধমান থানায় এসে দেহটি শনাক্ত করে। মৃতের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। মাথায় গভীর ক্ষত চিহ্ন থাকায় পুলিশের অনুমান, ভারী কোনও কিছু দিয়ে মাথায় আঘাত করে তাঁকে খুন করা হয়েছে। অন্য কোথাও খুনের পর দেহটি নির্জন জায়গায় ঝোপঝাড়ে ফেলে যায় দুষ্কৃতীরা। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম শেখ সফিক (৩২)। তিনি কাগজ এবং লোহা কেনাবেচার পাশাপাশি হকারিও করতেন। পুলিশের দাবি, পারিবারিক বিবাদ জনিত পূর্ব শত্রুতার জেরে তাঁকে খুন করা হয়েছে। এই বক্তব্যের স্বপক্ষে পুলিশের যুক্তি, তিনি দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে থাকতেন। বছর খানেক আগে প্রথম পক্ষের স্ত্রী তাঁর বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতনের মামলা করেন। তার ভিত্তিতে তিনি গ্রেপ্তারও হন। সেই থেকে প্রথম পক্ষের স্ত্রীর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের অবনতি হয়। যদিও পুলিশের এই দাবি এবং যুক্তি পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন মৃতের স্ত্রী হামিদা বিবি। তাঁর অভিযোগ, কয়েকদিন ধরেই ন’পাড়ায় তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে মারপিট চলছে। তৃণমূলের একটি গোষ্ঠীর লোকজনই রাজনৈতিক শত্রুতার জেরে তাঁর স্বামীকে খুন করেছে বলে হামিদার পালটা দাবি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার সকালে পূর্ব ন’পাড়ার বাড়ি থেকে বর্ধমানে আসেন সফিক। নির্ধারিত সময়ে তিনি বাড়ি না ফেরায় তাঁর স্ত্রী মঙ্গোলকোট থানায় কয়েকজনের বিরুদ্ধে অপহরণ এবং জোর করে আটকে রাখার অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্তরা সকলেই তৃণমূলের কর্মী-সমর্থক। অভিযোগ তাঁর স্বামীকে খুন করা হতে পারে বলে আশংকাও প্রকাশ করেছিলেন হামিদা। যদিও সেই অভিযোগকে বিশেষ আমল দেয়নি পুলিশ। কিন্তু বিজয়রাম এলাকা থেকে অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার পরই পুলিশের টনক নড়ে। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর কেস রুজু করে মঙ্গোলকোট থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে বর্ধমান থানা। পরে মৃতের পরিবার দেহটি শনাক্ত করার পর বিষয়টি অন্য মোড় নেয়।

বুধবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের মর্গে হামিদা বলেন, সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও স্বামী বাড়ি না ফেরায় তাঁর মোবাইলে ফোন করি। ভয়ার্ত গলায় স্বামী প্রথমে বলেন ভাতারের নরজা মোড়ে আছি। কিছুক্ষন পর বাড়ি ফিরছি। কিন্তু, তাঁর কথাবার্তায় সন্দেহ হওয়ায় আধ ঘণ্টা পরে ফের ফোন করি। অন্য এক জন ফোন ধরে বলে, তোঁর স্বামীকে অপহরণ করা হয়েছে। বাড়িতে সাদা থান কিনে রাখ। এর পরই মঙ্গোলকোট থানায় অভিযোগ করি। কিন্তু, অভিযুক্তরা তৃণমূলের একটি গোষ্ঠীর হওয়ায় পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি। গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের জেরেই স্বামীকে খুন হতে হল। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মীর্জা বলেন, ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। বছর খানেক আগে সফিকের স্ত্রী বধূ নির্যাতনের অভিযোগ করেন। তার ভিত্তিতে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। পারিবারিক বিবাদের জেরে তাঁকে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। তদন্ত চলছে। অভিযুক্তদের ধরার চেষ্টা চলছে।

Exit mobile version