বর্ধমান ও মন্তেশ্বর, ২৮ জানুয়ারিঃ- মন্তেশ্বর থানার মালডাঙ্গায় খুন হলেন এক বৃদ্ধা। রবিবার হুগলির চুঁচুড়ায় পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে রাতে বাড়ি ফেরার পর পরিবারের লোকজন তাঁর মৃতদেহ দেখতে পান। দেহটি ঘরের মেঝেয় পড়েছিল। মৃতদেহের পাশে জমাট রক্তের দাগ ছিল। মৃতার গলায় কালশিটে দাগ ছিল। ঘর থেকে একটি মাফলার এবং লোহার চেন উদ্ধার হয়েছে। যা থেকে পুলিশের অনুমান, মাফলার ও লোহার চেন গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে তাঁকে খুন করা হয়েছে। বৃদ্ধাকে খুনের ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। দেহ উদ্ধার করতে গেলে মন্তেশ্বর থানার পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় স্থানীয় বাসিন্দারা। খুনের কিনারায় পুলিশ কুকুর এনে তদন্তের দাবি জানান মৃতার পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়রা। সেই মতো বর্ধমান পুলিশ লাইন থেকে ট্র্যাকিং ডগ সিমিকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়। যদিও খুনীকে ধরার ব্যাপারে পুলিশকে তেমন কোনও ক্লূ দিতে পারেনি সিমি। পুলিশ কুকুরের সাহায্যে তদন্ত পর্ব শেষ হওয়ার পর দেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তে পাঠানো হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম সাধনা চট্টোপাধ্যায় (৭০)।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা, গিয়েছে, স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ছোট ছেলে মলয় চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে থাকতেন সাধনা দেবী। তাঁর স্বামী মালডাঙ্গাতেই বড় ছেলের বাড়িতে থাকেন। ঘটনার দিন সকালে বাবা, স্ত্রী এবং ছেলেকে নিয়ে চুঁচুড়ায় একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যান মলয় বাবু। রাত সাড়ে ৮ টা নাগাদ তাঁরা বাড়িতে ফেরেন। ঘরের প্রধান দরজা খোলা থাকায় মলয় বাবুর সন্দেহ হয়। ভিতরে ঢুকে ঘরের অন্যান্য দরজাও খোলা অবস্থায় দেখতে পান তিনি। মায়ের ঘরে ঢুকে তাঁকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন তিনি। তাঁর চিৎকার চেঁচামেচিতে প্রতিবেশিরা বাড়িতে জড়ো হন। সাধনা দেবীর ঘরের বিছানাপত্র ছড়ানো ছিটানো ছিল। আলমারিও ছিল খোলা। ঘর থেকে প্রায় ১০ ভরি সোনার গয়না এবং কিছু টাকা লোপাট হয়েছে বলে পরিবারের লোকজনের দাবি। কিন্তু, কেন বৃদ্ধাকে খুন করা হল তা নিয়ে ধন্দে পুলিশ।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, কিছুদিন আগে তাঁর সম্পত্তির অংশ ছোট ছেলের নামে লিখে দেন সাধনা দেবী। আলমারি এবং বিছানাপত্র এলোমেলো অবস্থায় পড়ে থাকায় পুলিশের অনুমান, কোনও কিছুর খোঁজে এসেছিল আততায়ী। সেটা সম্পত্তির কাগজ পত্রও হতে পারে। যদিও মৃতার ছোট ছেলে এই তত্ত্ব সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, মা সম্পত্তি আমার নামে লিখে দিয়েছেন বলে জানা নেই। তাছাড়া বাড়ি থেকে সোনার গয়না এবং টাকাও চুরি হয়েছে। ফলে, শুধুই সম্পত্তির কারনে মাকে খুন করা হয়েছে একথা মানা যাচ্ছে না। খুনী মায়ের পরিচিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারন খুনীরা দরজা ভেঙে ঘরে ঢোকেনি। পরিচিত হওয়ায় সম্ভবত মা-ই দরজা খুলে দিয়েছিলেন। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মীর্জা বলেন, কিছু ক্লূ মিলেছে। তদন্ত চলছে। তাই, সব কিছু এখনই বলা সম্ভব নয়। ঘটনাস্থল থেকে একটি চটির ছাপ পাওয়া গিয়েছে। সবদিক খোলা রেখেই তদন্ত চলছে।