বর্ধমান, ২৫ ফেব্রুয়ারিঃ- বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষককে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল স্কুলেরই পরিচালন সমিতির এক সদস্যের বিরুদ্ধে। ঘটনাচক্রে অভিযুক্ত পরিচালন সমিতির সদস্য তৃণমূল ট্রেড ইউনিয়নের নেতাও বটে। প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া নিয়ে দুই শিক্ষকের পাশেই দাঁড়িয়েছে তৃণমূলের একটি গোষ্ঠী। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ১ মার্চ স্কুলে সেক্রেটারি নির্বাচন আছে। সেই নির্বাচনে তৃণমূলের অনেকেই প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে আছেন। সেক্রেটারি নির্বাচনের আগে দুই শিক্ষককে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ এবং তা নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হওয়া তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেরই বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছেন অনেকেই। তাঁকে এবং তাঁর সহকারীকে হুমকি দেওয়া নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। সোমবার প্রধান শিক্ষক শম্ভুনাথ চক্রবর্তী বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিষয়টি পুলিশ সুপারকেও জানিয়েছেন তিনি। বর্ধমান থানার আই সি দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। এবিষয়ে তদন্ত করে আইনমাফিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি স্কুলে শিক্ষানুরাগী প্রতিনিধি নির্বাচন হয়। তাতে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর দু’জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাতে তৃণমূল নেতা সুশান্ত ঘোষকে ৭-৪ ভোটে হারিয়ে দেন তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর থাকহরি ঘোষ। নির্বাচনের ফল বেরনোর পরই সিপিএমের মদতে থাকহরি বাবু নির্বাচনে জিতেছে বলে অভিযোগ তোলে সুশান্ত বাবুর গোষ্ঠীর লোকজন। তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্বও সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে দলের অফিসিয়াল প্রার্থীকে হারানোর অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেয়। এরই মাঝে সেক্রেটারি নির্বাচনের আগে পরিচালন সমিতির সদস্য সুব্রত কুশারির বিরুদ্ধে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষককে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠায় পুরো বিষয়টি অন্যমাত্রা পেয়েছে।
পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগে প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, রবিবার রাত ১০ টা ৫ মিনিট নাগাদ সুব্রত বাবু তাঁর মোবাইলে ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। তাঁকে এবং স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক অরুণাভ চক্রবর্তীকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। পরিচালন সমিতিতে শিক্ষানুরাগী প্রতিনিধি নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থী পরাজিত হওয়ার কারনেই তাঁরা সুব্রত বাবুর রোষানলে পড়েছেন বলে প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ। অন্যদিকে, তাঁর বিরুদ্ধে দুই শিক্ষককে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ এনেছেন সুব্রত বাবু। তিনি বলেন, লটারির পরিবর্তে স্কুলে সরাসরি চার ছাত্রকে ভরতি করা হয়েছে। ভরতিতে আর্থিক লেনদেন হয়ে থাকতে পারে। তাছাড়া স্কুলে ৩ বছর অডিট হয়নি। সিপিএমের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কিছুলোক স্কুলে নানা অনিয়ম করছে। এনিয়ে উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী, বিজ্ঞান ও প্রযূক্তি মন্ত্রী, জেলা শাসক ও বিদ্যালয় পরিদর্শককে জানিয়েছি। তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে। এসবই সিপিএমের মদতে হচ্ছে। তৃণমূলের কিছু লোককে ম্যানেজ করে সিপিএম স্কুলে ক্ষমতায় ফিরতে চাইছে। ছাত্র ভরতি নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য, জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের সুপারিশেই কয়েকজনকে ভরতি নেওয়া হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ঘটনার কথা জানা নেই। তবে, এব্যাপারে খোঁজ খবর নেব। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক নিলামী গিরি বলেন, ভরতি নিয়ে কিছু সমস্যা হওয়ায় এধরনের কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। তবে, পৃথক ভাবে কোথায়, কতজন ছাত্রকে ভরতির ব্যবস্থা করা হয়েছে তা এই মূহুর্তে বলা সম্ভব নয়। আর স্কুলের অনিয়ম নিয়ে কোনও চিঠি পাইনি, পেলে তা খতিয়ে দেখা হবে।