বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়াদ অনুত্তীর্ণ ৩টি ফিক্সড ডিপোজিটের প্রায় ২ কোটি টাকা অবৈধভাবে আত্মসাতের ঘটনায় বর্ধমান থানার পুলিশ গ্রেপ্তার করল সুব্রত দাস নামে এক ব্যক্তিকে। ধৃত সুব্রত দাস যাদবপুরের বাসিন্দা। এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হল। ধৃতের কাছ থেকে তাঁর চার চাকার একটি গাড়ি, মোবাইল ফোন, আধার, প্যান ও ভোটার কার্ড পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে। বুধবার ধৃতকে বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়। উল্লেখ্য, মেয়াদের পূর্বেই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ টি ফিক্সড ডিপোজিট থেকে ফিনান্স অফিসার ও রেজিস্ট্রারের সই নকল করে ফিক্সড ডিপোজিট ভেঙে টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে স্থানান্তরিত করার অভিযোগ ওঠে। সই ও অ্যাডভাইসড্ নোট নকল করে টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যদিও এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি আভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করে। কিন্তু তা নিয়ে প্রবল আপত্তি ওঠার পর সেই তদন্ত কমিটি বাতিল করে বর্ধমান থানার হাতে সমস্ত তদন্তভার তুলে দেয়। ঘটনার সূত্রপাত ঘটে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি। মেয়াদ উত্তীর্ণের আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ লক্ষাধিক টাকার ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙানোর চেষ্টা করা হয় ইউকো ব্যাংকের বর্ধমানের বড়বাজার শাখায়। ফিক্সড ডিপোজিটকে অবৈধভাবে ভাঙিয়ে টাকা তুলে নেবার চেষ্টা করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রাক্তন কর্মী এবং বর্তমান এক কর্মীর বিরুদ্ধে এফ আই আর দায়ের করেন বর্ধমানের বড়বাজারের ইউকো ব্যাংকের সিনিয়র ম্যানেজার নেহা রানি। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী কর্মী সেখ এনামূল হক-কে গ্রেপ্তার করে। যদিও আরেক অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মী ভক্ত মণ্ডল এখনও পলাতক। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই ব্যাপক চাঞ্চল্য দেখা দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্ধমান থানায় লিখিত অভিযোগে নেহা রানি জানান, সম্প্রতি তাঁর কাছে একটি চিঠি আসে যেখানে একটি ফিক্সড ডিপোজিট যার আর্থিক মূল্য ২১.৫৫ লক্ষ টাকা, মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই তুলে নেবার কথা জানানো হয়। নিয়মানুযায়ী স্বাক্ষরকারীর স্বাক্ষর সংক্রান্ত সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকূলে এই ধরনের কোনো চিঠিই দেওয়া হয়নি। এরপরই সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে এব্যাপারে এফআইআর করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয়েরই অস্থায়ী কর্মী সেখ এনামূল হক এবং স্থায়ীকর্মী ভক্ত মণ্ডলের বিরুদ্ধে বর্ধমান থানায় লিখিত অভিযোগ রুজু করা হয়। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে অন্যান্য ব্যাংকের শাখাতেও এই বিষয়ে অবগত করে চিঠি দেয়। এরপরই জেলখানা মোড়ের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে জানানো হয়, তাদের শাখা থেকে তিনটি ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙিয়ে অন্য অ্যাকাউন্টে প্রায় ২ কোটি টাকা স্থানান্তরিত করা হয়েছে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার সুজিত কুমার চৌধুরি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৩ টি ফিক্সড ডিপোজিট থেকে প্রায় ১ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা অন্য অ্যাকাউন্টে তাঁদের অজ্ঞাতেই চলে গেছে। অর্থাৎ তিনটি ক্ষেত্রেই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ও ফিনান্স অফিসারের সই ও অ্যাডভাইসড্ নোট নকল করা হয়েছে। এরপরই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত ২২ ফেব্রুয়ারি বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে যে, তিনটি ফিক্সড ডিপোজিট সই জাল করে প্রিম্যাচিওর করে সুব্রত দাস ও সাগ্নিক এন্টারপ্রাইজের নামে ট্রান্সফার করা হয়েছে। এরপরই মঙ্গলবার যাদবপুর থেকে সুব্রত দাসকে গ্রেপ্তার করে। এবং বুধবার পুলিশি হেফাজতের আবেদন জানিয়ে তাকে বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়। আদালত তাকে ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেয়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সুব্রত দাসই সাগ্নিক এন্টারপ্রাইজের মালিক। জানা গেছে, এই ১ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকা সুব্রত দাসের নিজের অ্যাকাউন্টেই স্থানান্তরিত হয়। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আগের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী কর্মী সেখ এনামূলের চাকরি বাতিল করা হয়েছে এবং স্থায়ীকর্মী ভক্ত ঘোষকে শোকজ করা হয়েছে।