E Purba Bardhaman

দুর্ঘটনাগ্রস্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে সফররত বর্ধমানের যাত্রী শোনালেন ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা

1 dead, 1 injured in Purba Bardhaman district in Kanchanjunga Express accident

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- সোমবার উত্তরবঙ্গের রাঙাপানি এবং চটেরহাট স্টেশনে মাঝে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ডাউন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসেই বর্ধমান ফিরছিলেন ক্রীড়াবিদ অমর দাস ওরফে পিণ্টু। পূর্ব বর্ধমানের লোকো কলোনির বাসিন্দা অমরবাবু অক্ষতই আছেন। কিন্তু ঘটনার ভয়াবহতায় তিনি বেশ ঘাবড়ে গেছেন। টেলিফোনে অমরবাবু জানিয়েছেন, “গত তিনি এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন গ্রাম মেঘালয়ের মাওলিনং (মাওলাইনং) গ্রামে ট্রেকিং সেরে গুয়াহাটি থেকে ফিরছিলাম। গুয়াহাটি থেকে ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন পর্যন্ত ভালোভাবেই আসেন। এরপর এনজিপি থেকে ট্রেন বেড়িয়ে রাঙাপানি স্টেশন পার করে চটেরহাট স্টেশন ঢোকার আগে সিগন্যাল লাল হওয়ায় ট্রেনটি গতি কমিয়ে একেবারে থামতে শুরু করে। সিগন্যালের আগেই ট্রেন যখন থামতে চলেছে সেই সময় পরপর ৪ বার বিকট আওয়াজ করে ঝাঁকুনি দেয় ট্রেনটি। তিনি ছিলেন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের প্রায় মাঝামাঝি এস-৭ কামরার ৭২নং লোয়ার বার্থে। ঝাঁকুনির চোটে হাতের কাছে রডটিকে চেপে ধরেন। তাঁর চোখের সামনে আপার ও মিডল বার্থের যাত্রীরা আছড়ে পড়লেন কামরার মেঝেতে। তাঁদের একজনের হাতও ভেঙে গেল। কিছু বোঝার ওঠার আগেই আবার একটা বড় ঝাঁকুনি। এরপর চারিদিক থেকে কেবল চিৎকার। তিনি কামরা থেকে বেড়িয়ে গিয়ে দেখলেন পিছনের কয়েকটা কামরা দুমড়ে মুচড়ে গেছে। স্থানীয় মানুষজন ছুটে আসছেন। চোখের সামনে দেখলেন প্রথম এক মহিলাকে বার করতে। তিনি মারা গেছেন। চারিদিকে কান্না আর চিৎকার। কাঞ্চনজঙ্ঘার পিছনে বগিটি ছিল পার্সেল বগি। নাহলে আরও ভয়াবহ ঘটনা ঘটে যেতে পারত। এরপর প্রায় দেড় থেকে দুঘণ্টা সুস্থ যাত্রী এবং স্থানীয়রাই উদ্ধারের কাজ করেছেন। প্রশাসন, রেলের কর্তারা এসেছেন ঘটনার প্রায় দেড় – দুঘণ্টা পরে। সকাল ৮টা বেজে ৫৫ মিনিট নাগাদ এই ঘটনা ঘটে। এরপর তাঁকে এবং অন্যান্যদের অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়া হয় উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে। সেখানে পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রায় ২০-২২ জন ছিলেন। সেখানে বেশিরভাগকে ছেড়ে দেওয়া হলেও ২জনের আঘাত গুরুতর থাকায় তাঁদের ভর্তি করে নেওয়া হয়। এরপর তিনি এনজিপি স্টেশনে পৌঁছান।” অমরবাবু জানিয়েছেন, এক ভয়ানক অভিজ্ঞতা। এভাবে যে প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারবো সেটা ভেবেই আঁতকে উঠছি। উল্লেখ্য, অমরবাবু জানিয়েছেন, বর্ধমান থেকে তিনি একা এবং উত্তরবঙ্গের কয়েকজন মিলে তাঁরা ট্রেকিংয়ে গিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, ঘটনার সময় হালকা বৃষ্টি পড়ছিল। একইসঙ্গে ব্যাপক বজ্রপাতও হচ্ছিল। ছিল হালকা কুয়াশাও। অন্যদিকে, কাঞ্চনজঙ্ঘার এই দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এদিন জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক রামশংকর মণ্ডল জানিয়েছেন, গোটা রাজ্যে ২৩ জন আহত রয়েছেন। যাঁদের মধ্যে পূর্ব বর্ধমানে একজন আহত আছেন। আহতের নাম রাজকুমার বটব্যাল বলে জেলাশাসক কে রাধিকা আইয়ার এদিন জানিয়েছেন। জেলাশাসক জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসন ঘটনার দিকে নজর রেখেছে। এই ঘটনায় পূর্ব বর্ধমান জেলার গুসকরা শহরের বাসিন্দা বিউটি বেগম সেখ (৪৩)-এর মৃত্যু হয়েছে। চেয়ারম্যান ও আউশগ্রামের বিডিও দুর্ঘটনায় নিহতের পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করেন এবং শেষকৃত্যের জন্য আর্থিক সহায়তা তুলে দেন। অন্যদিকে, এদিন বর্ধমান রেল স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, এদিন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের নির্ধারিত বর্ধমান স্টেশনে আসার সময় ছিল বিকাল প্রায় সাড়ে চারটে নাগাদ। এই দুর্ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্ত বগিকে বাদ দিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা শিয়ালদহের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। বর্ধমান স্টেশনে এই ট্রেন ঢুকতে পারে রাত্রি প্রায় ১১টা নাগাদ এবং শিয়ালদহে রাত্রি প্রায় ১টা নাগাদ।

Exit mobile version