বিপুন ভট্টাচার্য, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- গোটা রাজ্য জুড়ে তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের আমলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তাঁত শিল্প সহ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প। তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক থেকে মালিক প্রত্যেকের জন্যই রাজ্য সরকার একাধিক উন্নয়ন পরিকল্পনা শুধু গ্রহণ করেননি, ইতিমধ্যেই তা পালিতও হয়েছে। এর ফলে বাম আমলে এক সময় যখন তাঁতশিল্প গুলি ধ্বংসের মুখে এসে দাঁড়িয়েছিল, হতাশা গ্রাস করেছিল এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের আজ তার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। গোটা রাজ্যে ২০১১ সাল থেকে সরাসরি তাঁতীদের তৈরী মাল ক্রেতার হাতে পৌঁছে দেবার জন্য চালু করা হয়েছে তাঁত হাট। ২০১১ সালে এই তাঁত হাটে যেখানে বিক্রি হয়েছে ২ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকার মাল সেখানে গতবছর তথা ২০১৭ সালে বিক্রি হয়েছে ৫ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকার মাল। একইভাবে পূর্ব বর্ধমান জেলায় ২০১১ সালে যখন এই তাঁতবস্ত্র মেলায় বিক্রি হয়েছিল ৮৫ লক্ষ ৩২ হাজার টাকার মাল ২০১৭ সালে সেখানে বিক্রি হয়েছে ১ কোটি ৩৯ লক্ষ ২৬ হাজার ৬০০ টাকার মাল। শুধু তাই নয়, কৃষি ও কৃষকদের ফসল বাজারজাত করার জন্য প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে তা শহরে আনার জন্য রাজ্য সরকারের উদ্যোগে গ্রামীণ রাস্তাগুলিকে যেভাবে উন্নতি করা হয়েছে সেই একইভাবে তাঁত শিল্পীদের জন্যও গ্রামীণ রাস্তাকে পাকা করার কাজ শুরু হয়েছে। গোটা রাজ্যে ৫টি জেলায় মোট ২৫ কিমি রাস্তা তৈরী করা হয়েছে। আগামী দিনে আরও কয়েকটি রাস্তা নির্মাণের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে বলে জানালেন রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প দপ্তরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। শনিবার থেকে বর্ধমান টাউন হলে শুরু হল ১০ম প্রাক পূজা তাঁতবস্ত্র মেলা। মেলার উদ্বোধন করেন বর্ধমান জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি দেবু টুডু। এদিন অন্যান্যদের মধ্যে হাজির ছিলেন বর্ধমান- দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ মমতাজ সংঘমিতা, বর্ধমান দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প দপ্তরের ডিরেক্টর দেবাশীষ ঘোষ প্রমুখরা। এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে স্বপন দেবনাথ বলেন, বাম আমলে একটা সময় তাঁত সহ ক্ষুদ্র শিল্প দপ্তরের অধীন বিভিন্ন সংস্থাগুলি ধ্বংসের মুখে চলে গিয়েছিল। কিন্তু রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর একের পর এক মঞ্জুষা, বঙ্গশ্রী, তন্তুশ্রী, তন্তুজ, রেশম শিল্পী মহাসংঘের মত কেন্দ্রগুলি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তাঁতশিল্পীদের দুরবস্থা ঘোচাতে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে তাঁতিদের তৈরী পণ্য সরাসরি ক্রেতার হাতে পৌঁছানোর জন্য চালু করা হয়েছে বিভিন্ন মেলা, হাট। এর ফলে তাঁতীরা সরাসরি উপকৃত হচ্ছেন। এছাড়াও যে সমস্ত তাঁতশিল্পীরা এতদিন কাজ করে যেতেন, কিন্তু তাঁদের কাছে ছিলনা নিজস্ব কোনো তাঁত – রাজ্য সরকার তাঁদের জন্য পৃথকভাবে তাঁত দেবার উদ্যোগ নিয়েছে। তৈরী করা হয়েছে ক্লাষ্টার। গোটা রাজ্যে ৪৫টি ক্লাষ্টার তৈরী করে সেখানে উন্নত মানের প্রশিক্ষণ দেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও আগামী দিনে আরও ২৬টি ক্লাষ্টার তৈরীর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।