বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- একদিকে, বিএসএনএলকে চক্রান্ত করে রুগ্ন করে তোলা হচ্ছে, অন্যদিকে, বিএসএনএলকে বাঁচিয়ে রাখার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে। আর এসবের ফায়দা লুঠছে বেসরকারী টেলিকম সংস্থাগুলি। শনিবার বর্ধমানে টেলিকম এমপ্লয়ীজ ইউনিয়নের ২য় বিভাগীয় সম্মেলনে যোগ দিতে এসে টেলিকম এমপ্লয়ীজ ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ দত্ত এই অভিযোগ করে গেলেন। একইসঙ্গে এদিন তিনি রীতিমত বিস্ফোরক অভিযোগ তুলেছেন কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের টেলিকম দপ্তরের মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। বিশ্বনাথবাবু এদিন অভিযোগ করেছেন, ভারতীয় দূর সঞ্চার নিগম লিমিটেড বা বিএসএনএলকে কার্যত পরিকল্পনা করেই রুগ্ন করে তোলা হচ্ছে। অথচ ২০০১ সালে ভারত সরকার একটি চুক্তি করে জানিয়েছিল গোটা ভারতবর্ষের দ্বিতীয় লাইফ লাইন এই বিএসএনএল। তাই কোনোভাবেই এই সংস্থাকে রুগ্ন হতে দেওয়া হবে না। কিন্তু সম্প্রতি টেলিকম দপ্তরের মন্ত্রী মনোজ সিং–র অধীনে রেলের ৪৭ হাজার টেলিফোন লাইন তৈরীর জন্য যে টেণ্ডার ডাকা হয় সেই টেণ্ডার প্রক্রিয়ায় সর্বনিম্ন দরপত্র দিলেও এবং সমস্তরকম পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও বিএসএনএলকে সেই টেণ্ডার দেওয়া হয়নি। পরিবর্তে কোনো পরিকাঠামো না থাকা সত্ত্বেও এই টেণ্ডার পাইয়ে দেওয়া হয়েছে মুকেশ আম্বানীর গ্রুপকে। যেহেতু সামনেই লোকসভা ভোট তাই বিজেপি নিজেদের প্রচারকে তুলে ধরতে সেই মুকেশ আম্বানিদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে বলে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলল তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ দত্ত। তিনি অভিযোগ করেছেন, একদিকে রাফায়েল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, সেইসময় কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রীর বিরুদ্ধেই এই অনৈতিক সুযোগ পাইয়ে দেবার অভিযোগ তুলেছেন তিনি। যা নিয়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, একটু একটু করে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে সরকারী এই সংস্থাকে। এমনকি দীর্ঘদিন ধরেই বাম ট্রেড ইউনিয়ন বিএসএনএলে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসাবে থেকে গেলেও এব্যাপারে কার্যত তাঁদের ভূমিকাও প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বনাথবাবু জানিয়েছেন, এখনও গত ফেব্রুয়ারী মাসের বেতন পাননি রাজ্যের প্রায় ১১ হাজার কর্মী। এর সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক কর্মীদেরও বেতন কোথাও ২ মাস আবার কোনো সার্কেলে ৩ মাস পর্যন্ত বকেয়া পড়ে রয়েছে। উল্লেখ্য, এদিন এই সম্মেলনে বিএসএনএলের বেসরকারীকরণ, রুগ্ন করে দেবার বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরই পাশাপাশি মোট ১০ দফা দাবীকে সামনে রেখে এদিন আলোচনা করা হয়। অন্যান্যদের মধ্য এদিন হাজির ছিলেন সংগঠনের বর্ধমানের সম্পাদক মানিক কুমার সরকার, ওয়েষ্ট বেঙ্গল সার্কেলের সম্পাদক কালীপদ হালদার, বর্ধমানের জেলা কমিটির সদস্য অরুণ রাম প্রমুখরা। বিশ্বনাথবাবু জানিয়েছেন, প্রতি মাসে বিএসএনএলের কর্মীদের বেতন দিতে ৭০০ কোটি টাকা লাগে যা বিএসএনএলের ১০দিনের আয়। কিন্তু কর্মীদের বেতন না হওয়ায় বিএসএনএলের রুগ্নতাই প্রকাশিত হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, একদিকে যেমন সাধারণ মানুষ তিতিবিরক্ত হয়ে উঠছেন বিএসএনএলের পরিষেবায় তখন তার চাপ পড়ছে কর্মীদের ওপর। কিন্তু কর্মীরা সেই কাজ করতে গেলে তারা দপ্তরের কোনো সহযোগিতা পাচ্ছেন না।