E Purba Bardhaman

বর্ধমান রেল ষ্টেশনে জলের ট্যাঙ্ক ভেঙে গিয়ে মৃত্যু ৩ যাত্রীর, আহত ৩৪; তীব্র আতংক

3 dead, 34 injured after water tank burst on Bardhaman Railway Station platform

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- রেল দপ্তরের চুড়ান্ত গাফিলতির জেরে বুধবার দুপুরে প্রাণ হারালেন ৩জন যাত্রী। আহত হলেন প্রায় ৩৪ জন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিত্সাধীন কমপক্ষে ৪জন। বুধবার ১২টা ৮ মিনিট নাগাদ আর পাঁচটা দিনের মতই বর্ধমান জংশনের ২ ও ৩ নং প্ল্যাটফর্মের মাঝে যাত্রী সেডে বহু যাত্রী ট্রেনের জন্য প্রতীক্ষায় বসে ছিলেন। ঠিক সেই সময়েই এই যাত্রী সেডের লাগোয়া প্রায় ৫০ ফুট ওপরে থাকা ১৮৯০ সালে তৈরী হওয়া ধাতব পাতের জলের ট্যাঙ্কের একাংশ আচমকাই ভেঙে আছড়ে পড়ে ওই যাত্রী সেডে। মূহূর্তের মধ্যে লোহার বিমের ওপর থাকা ওই সেডের মাঝামাঝি ভেঙে পড়ে যাত্রীদের ওপর। ভারী জল ট্যাংকের ধাতব পাত ভেঙে আছড়ে পড়ে ১ ও ২ নং প্ল্যাটফর্মের মাঝে রেল লাইনের ওপর। ভারী ধাতব পাত পাথরের ওপর পড়ায় রেল লাইনের পাথর ছিটকে পড়ে চর্তুদিকে। এই পাথরের আঘাতেও বেশ কয়েকজন জখম হয়েছেন বলে যাত্রী সূত্রে জানা গেছে। এদিকে, ওই জলের ট্যাঙ্ক আচমকাই ভেঙে পড়ায় ৫৩ হাজার ৮০০ গ্যালন জল আছড়ে পড়ে নীচে। জলের তোড়ে প্ল্যাটফর্ম থেকে ১০-২০ ফুট দূরে ছিটকে পড়েন যাত্রীরা রেল লাইনের ওপর। মূহূর্তে গোটা ষ্টেশন জুড়ে ভয়াবহ আতংক ছড়িয়ে পড়ে। বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় যে ৩জনের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের মধ্যে মাফিজা খাতুনের (৩৫) বাড়ি বর্ধমানের লাকুর্ডি এলাকার কাটরাপোতায়। এদিন তিনি এবং তাঁর স্বামী আব্দুল মফিজ সেখকে নিয়ে মাফিজা খাতুনের বোনঝিকে হাওড়ায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর বোনঝিকে দিল্লীর গাড়িতে তুলে দেবার জন্য। এই দুর্ঘটনার জেরে মাফিজা খাতুনের মৃত্যু হলও অল্পবিস্তর আহত হয়েছেন তাঁর স্বামী ও বোনঝি। এর পাশাপাশি মৃত্যু হয়েছে কান্তি বাহাদুর (১৬) নামে এক কিশোরের। তার বাড়ি বিহারের সাহেবগঞ্জ এলাকায়। বর্ধমানে আত্মীয় বাড়ি থেকে এদিন সে সাহেবগঞ্জ যাবার জন্য যাত্রী সেডের নীচে অপেক্ষা করছিল। এছাড়াও মৃত্যু হয়েছে সোনারাম টুডু নামে এক ব্যক্তির। তাঁর বিস্তারিত পরিচয় এখনও মেলেনি। এদিন বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান বর্ধমানের জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী, জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চ্যাটার্জী, জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি দেবু টুডু, মেণ্টর উজ্জ্বল প্রামাণিক, বিধায়ক খোকন দাস, তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক বাগবুল ইসলাম প্রমুখরা। এদিন খোকন দাস রেলের এই গাফিলতিকে দায়ী করে বলেছেন, কেবলই বাইরে রংচং করা হচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত মেরামত বা নজরদারী নেই। তারই মাশুল দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এদিন দুর্ঘটনার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে হাজির হন জেলা কংগ্রেস নেতা গৌরব সমাদ্দার। তিনি জানিয়েছেন, রেল বর্ধমানকে মডেল ষ্টেশন না করে শক্তপোক্ত ষ্টেশন তৈরী করুক। কারণ এর আগে ২০২০ সালের জানুয়ারী মাসে এই ষ্টেশনের সামনের ভবনের একাংশ ভেঙে পড়েছিল। এমনকি পদপিষ্ট হয়ে মারাও যান যাত্রী। সর্বোপরি একাধিক এক্সলেটর থাকলেও সেগুলি অচল। সবমিলিয়ে এই দুর্ঘটনার জন্য রেলের এই গাফিলতিকেই তিনি দায়ী করেছেন। অন্যদিকে, এই দুর্ঘটনার খবর পেয়েই জেলাশাসক, জেলা পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সহ জেলা পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকরা ছুটে যান ঘটনাস্থলে। জেলা বিপর্যয় ব্যবস্থাপন দপ্তরের আধিকারিক পথিক বন্দোপাধ্যায় জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ওই জল ট্যাঙ্কের নির্ধারিত জলধারণের বেশি জল ঢোকার জন্যই ট্যাঙ্ক ফেটে যায়। এদিকে, এদিন এই দুর্ঘটনার বিষয়ে পূর্বরেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র জানিয়েছেন, দুর্ঘটনায় আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। মৃতদের ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেবার ঘোষণা করেছেন রেলমন্ত্রী। এব্যাপারে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। কেউ দোষী থাকলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই ট্যাঙ্ক দিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই জল পড়ছিল বলে যাত্রীরা অভিযোগ করা প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, কয়েকদিন আগেই ওই ট্যাঙ্ক পরিষ্কার করা হয়েছে।

 


Exit mobile version