গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- চালককে মারধর করে চারচাকা গাড়ি ও টাকা–পয়সা, মোবাইল, এটিএম কার্ড প্রভৃতি কেড়ে নেওয়ার ঘটনার কিনারা করল শক্তিগড় থানার পুলিশ। বীরভূমের লাভপুর থানার একটি ঘটনায় ধৃত সঞ্জয় রবিদাস, রাজকুমার গোস্বামী ও সন্তোষকুমার সিং ছিনতাইয়ে জড়িত বলে জেনেছে শক্তিগড় থানার পুলিশ। সেইমতো তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পেশ করার জন্য আবেদন জানায় শক্তিগড় থানার পুলিশ। সেই আবেদন মঞ্জুর হওয়ার পর সোমবার তিনজনকে বর্ধমান সিজেএম আদালতে পেশ করা হয়। গাড়ি এবং অন্যান্য জিনিসপত্র উদ্ধার করতে সন্তোষকে ১৪ দিন নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে আদালতে আবেদন জানায় পুলিশ। তাকে চারদিন পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন সিজেএম। অপর দু’জনের টিআই প্যারেড করানোর জন্য আবেদন জানায় পুলিশ। আগামী ৫ অক্টোবর সংশোধনাগারে ধৃত দু’জনের টিআই প্যারেড হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সঞ্জয় এবং রাজকুমারকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন সিজেএম।
পুলিশ জানিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত থানার কাজিপাড়ার আমজেদ আলি পেশায় গাড়ি চালক। গত ৫ মে হাওড়া ময়দান থেকে তারাপীঠে যাওয়ার জন্য অ্যাপের মাধ্যমে তিনজন তাঁর গাড়িটি বুক করে। বেলা ১টা নাগাদ শ্যামবাজার থেকে তিনজন তাঁর গাড়িতে ওঠে। সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিট নাগাদ গাড়িটি তারাপীঠে পৌঁছয়। সেখানে তাঁকে অপেক্ষা করতে বলা হয়। অ্যাপের পরিবর্তে মৌখিক চুক্তিতে ভাড়া ঠিক করে তাঁকে ফেরার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়। রাত ১০টা ৪০ মিনিট নাগাদ তারাপীঠ থেকে গাড়িটি কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেয়। পথে নবাবহাটের কাছে গাড়িটি সিএনজি ভরতে দাঁড়ায়। গাড়িটি শক্তিগড় আন্ডারপাসের কাছে পৌঁছলে যাত্রীরা ভুল রাস্তায় যাওয়ার কথা বলে চালককে গাড়ি থামাতে বলে। গাড়ি থামানো মাত্র চালককে মারধর শুরু হয়। এরপর তাঁর কাছ থেকে ৭৫০০ টাকা, মোবাইল, এটিএম কার্ড কেড়ে নিয়ে গাড়িটি নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। পরের দিন সকালে শক্তিগড় থানায় অভিযোগ দায়ের করেন আমজেদ। তার ভিত্তিতে কেস রুজু করে তদন্তে নেমে জাতীয় সড়ক ও বিভিন্ন টোলপ্লাজার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। এছাড়া কল ডাম্পিংয়ের সাহায্যও নেওয়া হয়। আমজেদের মোবাইলের সূত্র ধরে দুষ্কৃতীরা ঝাড়খণ্ডের তোপচাঁচির দিকে গিয়েছে বলে জানতে পারে পুলিশ। এছাড়াও মোবাইলের পেমেন্ট অ্যাপের মাধ্যমে তোপচাঁচির একটি পেট্রোল পাম্প থেকে সিএনজি ভরা হয়েছে বলে জানা যায়। সেখানেও যায় পুলিশ। শেষমেশ কিছুদিন আগে লাভপুর থানা থেকে মেমারি থানায় ই–মেল আসে। তাতে আমজেদের গাড়ি ছিনতাইয়ে বিহারের শরন জেলার নৈনির বাসিন্দা সন্তোষ এবং ঝাড়খণ্ডের দেউরি থানা এলাকার সঞ্জয় ও চিত্রা থানার অলকওয়াড়ার রাজকুমার জড়িত বলে জানানো হয়। এরপরই তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আমজেদের গাড়ি ছিনতাইয়ে তারা জড়িত বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ।