বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসে বিদ্যাসাগর এবং গান্ধীজীর আদর্শে চলার ডাক দিয়ে গেলেন রাজ্যপাল
admin
বিপুন ভট্টাচার্য, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :-লোকসভা নির্বাচনের আগে কলকাতায় প্রচারে এসেছিলেন অমিত শাহ। আর তাঁর সেই দিন রোড শো-কে ঘিরেই শুরু হয়েছিল তীব্র উত্তেজনা। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার অভিযোগ উঠেছিল বিজেপি সমর্থকদের বিরুদ্ধে। যাকে ঘিরে গোটা রাজ্য জুড়েই শুরু হয়েছিল তীব্র বাদানুবাদ। যার ঢেউ গিয়ে নাড়া দিয়েছিল দিল্লীকেও। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙাকে ঘিরে বিজেপি এবং তৃণমূলের অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগে সরগরম হয়ে উঠেছিল বাংলার মাটি। বস্তুত, এখনও জলের মত পরিষ্কার নয়, কারা ওই মূর্তি ভাঙার জন্য দায়ী। খোদ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করে দেন ওই বিদ্যাসাগরের মূর্তিকে ধাতবভাবে পুর্ননির্মাণ করে দেবেন তিনি। কিন্তু তার আগেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে বিদ্যাসাগরের মূর্তিকে নতুন করে তৈরী করে তা প্রতিস্থাপনও করা হয়েছে। কিন্তু বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার ঘটনা যে রীতিমত বাংলার রাজ্যপালকে ভীষণভাবে নাডা় দিয়েছিল বৃহস্পতিবার তারই ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এসে। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা বা তা নিয়ে রাজনৈতিক চাপান উতোরের প্রসঙ্গে না গিয়েই বৃহস্পতিবার বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাসে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭তম সমাবর্তন অনুষ্ঠান উদ্বোধন করতে এসে বিদ্যাসাগর এবং গান্ধীজির জীবন আদর্শকে পাথেয় করে মুক্ত বিহংগের মত বিচরণ করার আবেদন জানিয়ে গেলেন আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠি। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল তথা বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসাবে শেষ সমাবর্তনে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, চলতি সময়কালে অন লাইনে ভর্তি সহ একাধিক বিষয়কে চালু করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভাল কাজ করেছেন। এদিন ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে তিনি জানান, শিক্ষা ও গবেষণাকে আরও বাড়াতে হবে যাতে জনগণের কল্যাণ সাধিত হয়। রাজ্যপাল বলেন, বর্তমানে আমরা ইতিহাসের এক সংকটময় সময়ের মধ্যে দিয়ে চলেছি। বিদ্যাসাগর এবং গান্ধীজির জীবন আদর্শ এবং তাঁদের কর্মধারাকে অনুসরণ করতে হবে। কেবল তাদের জন্মদিন পালন নয়। ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নিজেদের প্রশ্ন করো তাঁদের মত তোমরা সমাজকে কি দিতে পেরেছে? এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিমাই সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরেন। তিনিও বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠার আবেদন জানান। সমাবর্তন ভাষণ দেন বিজ্ঞানী রবীন্দ্রনাথ মুখার্জি। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপাল তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। এ বছর সাহিত্যিক সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায় ও ক্রীড়াবিদ স্বপ্না বর্মনকে সাম্মানিক ডিলিট প্রদান করা হল। সাম্মানিক ডি এসসি দেওয়া হয় মুম্বইয়ের টাটা ইন্সটিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের অধ্যাপক মোহন মহারাজ এবং ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ বায়োমেডিক্যাল জেনোমিক্সের অধ্যাপক পার্থপ্রতিম মজুমদারকে। যদিও এদিন সমাবর্তন অনুষ্ঠানে টাটা ইন্সটিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চের অধ্যাপক মোহন মহারাজ অনুপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও, হিন্দীতে ডিলিট পেলেন ডক্টর রূপা গুপ্তা। কলা বিভাগের পিএইচডি উপাধি দেওয়া হল বাংলায় ২০ জনকে, সংস্কৃততে ১১ জন, ইংরাজীতে ১২ জনকে, হিন্দিতে ৭ জনকে। ব্যবসায়ীক প্রশাসন বিভাগে ৬ জন এবং এই বিভাগের মানব সম্পদে ২ জনকে। অর্থনীতিতে দেওয়া হল ১৩ জনকে, দর্শনে ১০, ইতিহাসে ১৫, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৬, বাণিজ্যে ৭, আইনে ১০, গ্রন্থাগার ও তথ্যবিষয়ক বিজ্ঞানে ৩ জন, পর্যটনে ১ জন, জনসংযোগে ২, শিক্ষায় ৭ জন, সমাজবিজ্ঞানে ৪, উর্দুতে ৪ জনকে। বিজ্ঞান বিভাগে দেওয়া হল রসায়নে ৮, পদার্থবিদ্যায়১২, উদ্ভিদবিদ্যায় ১০, প্রাণিবিদ্যায় ২১, ভুগোলে ১৩ জনকে, গণিতে ৫ জন, পরিবেশ বিজ্ঞানে ৮ জন, জৈব প্রযুক্তিতে ৪ জন, অনুজীববিদ্যায় ৪ জন, পরিগণন বিজ্ঞানে ৫ জনকে। মেডিসিনে ডক্টর অব ফিলজফি চিকিৎসা বিদ্যায় পিএইচডি দেওয়া হল ১ জনকে। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ৯৮ জন পড়ুয়ার হাতে স্বর্ণপদক তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন বিভাগের ৫৬ জন পড়ুয়ার হাতে ব্যাক্তিগত-অনুদানের পুরস্কার তুলে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যদিও এবারও সমাবর্তন উত্সবে গড় হাজির ছিলেন রাজ্যের উচ্চশিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এমনকি গতবছরও তিনি সঠিক সময়ে হাজির হননি। এরই পাশাপাশি সমাবর্তন উত্সবে দেখা মেলেনি জেলার নির্বাচিত সাংসদ ও বিধায়কদেরও। নিয়মমাফিক তাঁরাও আমন্ত্রিত ছিলেন। কিন্তু তাঁদেরও কাউকে এদিন সমাবর্তন অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি।