বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- ঢেলে সাজানো হচ্ছে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা কর্মীর সংখ্যাও। বাড়ানো হয়েছে সিসিটিভির সংখ্যাও। শুধু বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালই নয়, হাসপাতালকে ঘিরে চলে যাওয়া রাস্তাতেও লাগানো হয়েছে সিসিটিভি। বেসরকারী নিরাপত্তাকর্মী ছাড়াও হাসপাতালের পুলিশ কর্মী এবং সিভিক ভলেণ্টিয়ারের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু তারপরেও সোমবার রীতিমত সব নিরাপত্তাব্যবস্থাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই মাত্র ১ ঘণ্টায় ৫টি মোবাইল চুরি এবং ৬ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে পালানোর ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়ালো বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মাত্র ১ ঘণ্টার ব্যবধানে খোদ বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটডোর এলাকা থেকেই চুরি গেল রোগীপক্ষের ৫টি মোবাইল এবং নগদ প্রায় ৬ হাজার টাকা। এই ঘটনায় সোমবার গোটা হাসপাতাল জুড়ে রো্গীদের মধ্যে ব্যাপক আতংক ও চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা পুলিশ ক্যাম্পের কর্মীরা অভিজিত সিং নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে। ধৃতের বাড়ি পশ্চিম বর্ধমানের পাণ্ডবেশ্বরের ডিভিসি পাড়া এলাকায়। এদিন ভাতারের ছাতনি এলাকার বাসিন্দা মনা দে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন চাকরীর জন্য মেডিকেল টেষ্ট করাতে। মনা দে জানিয়েছেন, এদিন হাসপাতালের সুপারের কাছ থেকে তিনি আউটডোরের ১১৪ নম্বর রুমে যান। সেখান থেকে ১১৮ নম্বর রুমে যাবার সময় তাঁর কাঁধে থাকা ব্যাগের চেন খুলে অন্য একটি টাকার ব্যাগ নিয়ে পালাতে থাকে এক যুবক। তাকে পালাতে দেখে তিনি চিত্কার করতে থাকলে হাসপাতালের দায়িত্বে থাকা সিভিক ভলেণ্টিয়ারকে তাকে ধাওয়া করে ধরে ফেলে। তাকে হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে অভিজিত সিং নামে ওই যুবক জানায় সে মুখের চিকিত্সা করাতে এদিন হাসপাতালে এসেছিল। তাকে মিথ্যা সন্দেহ করে আটক করা হয়েছে। জানা গেছে, ধৃত ওই যুবককে ধরে পুলিশ ক্যাম্পে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ই আউটডোর থেকে আরও দুটি মোবাইল চুরি যায়। ক্যাম্পের পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এদিন সকাল প্রায় সাড়ে দশটা থেকে সাড়ে এগারোটার মধ্যে এই চুরির ঘটনা ঘটে। মধ্যে ভাতারের বামশোরের বাসিন্দা রূপা খাতুনের মোবাইল চুরি হয় তার পিঠের ব্যাগ থেকে। হুগলীর গুড়াপের ট্যারাপুর এলাকার বাসিন্দা সেখ আজিজ এদিন এসেছিলেন বর্ধমান হাসপাতালের আউটডোরে চিকিত্সা করাতে। তাঁরও জিন্সের প্যাণ্টের পকেট থেকে মোবাইল চুরি যায় ভিড়ের মাঝে। এছাড়াও ফার্মেসী এবং আউটডোর থেকে আরও দুটি মোবাইল চুরি যায়। এদিকে, এক ঘণ্টার মধ্যে ৫টি মোবাইল ও ৬ হাজার টাকা চুরির খবর পেয়েই হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও জোড়ালো করা হয়েছে। ধৃত অভিজিত সিংকে এদিন গ্রেপ্তার করে বর্ধমান থানায় পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশের অনুমান, এদিন পাণ্ডবেশ্বর এলাকার একটি গ্যাং বর্ধমান হাসপাতালে ঢুকে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। বাকিদের খোঁজে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এর আগেও একইভাবে হাসপাতালে আসা রোগীদের কাছ থেকে সোনার গহনা, টাকা চুরির ঘটনা ঘটেছে। কয়েকজন ধরা পড়লেও অনেকেই ধরা পড়েনি। সম্প্রতি হাসপাতালে সিসিটিভির সংখ্যা বাড়িয়ে করা হয়েছে প্রায় ২০০টি। তার মধ্যে পুলিশ ক্যাম্পেই মনিটরিং করা হয় ৩২টি সিসিটিভি ক্যামেরার। এছাড়াও হাসপাতালের সুপারের ঘরেও রয়েছে বাকি সিসিটিভি ক্যামেরার মনিটর ব্যবস্থা। সিসিটিভির পাশাপাশি রয়েছে ৭৪জন বেসরকারী নিরাপত্তা কর্মী। রয়েছে ৩০জন সিভিক ভলেণ্টিয়ার, ২জন এএসআই সহ ১২জনের পুলিশ কর্মী এবং ২জন মহিলা পুলিশ কর্মীও। সোমবার ১ ঘণ্টার মধ্যে যেভাবে মোবাইল এবং টাকা চুরি হওয়ার ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করলেও হদিশ মেলেনি খোওয়া যাওয়া টাকা বা মোবাইলের। যদিও গোটা ঘটনায় পুলিশী নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। শুরু হয়েছে জোরদার তদন্তও। কিন্তু এই ঘটনায় রীতিমত আতংক ছড়িয়েছে হাসপাতাল জুড়ে রোগীপক্ষের মধ্যে।