E Purba Bardhaman

পূর্ব বর্ধমান জেলায় ১০০ দিনের কাজে বকেয়া ৮৬ কোটি, টাকার দাবিতে প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধানের বাড়িতে হামলার অভিযোগ তৃণমূলেরই একাংশের বিরুদ্ধে

86 crore due for 100 days of work in Purba Bardhaman district, Allegation of attack on former panchayat Pradhan's house for demand of money is against a section of Trinamool

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা জবকার্ড হোল্ডারদের দেবার কথা ঘোষণা করেছেন। আর তারই মাঝে তৃণমূল কংগ্রেসের সেনাপতি অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গোটা রাজ্য জুড়ে পঞ্চায়েতে পঞ্চায়েতে চলছে টাকা প্রাপকদের নামের তালিকা তৈরির কাজ। পূর্ব বর্ধমান জেলাতেও রীতিমতো তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ক্যাম্প করে চলছে এই কাজ। অন্যদিকে, জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গোটা জেলার ২৩ টি ব্লকের মোট ২ লক্ষ ৬৭ হাজার ২৫ জন ১০০ দিনের কাজ করা শ্রমিকদের জন্য বকেয়া টাকার পরিমাণ প্রায় ৮৬ কোটি ১১ লক্ষ ৫৬ হাজার ৩৩৪ টাকা। আর এই পরিস্থিতিতে ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠী কোঁদল তুঙ্গে উঠল বর্ধমানে। রবিবার সন্ধ্যায় বর্ধমানের ১ ব্লকের ভোতার পাড় এলাকার বাসিন্দা এবং রায়ান ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান সেখ আলমগির হাসানের বাড়িতে একদল তৃণমূল সমর্থক ১০০ দিনের কাজের বকেয়া টাকা দেবার দাবিতে চড়াও হলেন। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দিল। একইসঙ্গে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের মুখে তৃণমূলের এই গোষ্ঠী কোঁদলকে ঘিরে অস্বস্তি বাড়ল ঘাসফুল শিবিরে। ওই প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান সেখ আলমগির হাসান এই ঘটনায় বর্ধমান থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে জানিয়েছেন, ভোতার দক্ষিণ পাড়ার মালেক শেখ, ডাঙ্গা পাড়ার জামাল শেখ, ভোতার মাঠ পাড়ার সেরু শেখ ও ইলু খান-এর নেতৃত্বে একদল মহিলা তাঁর বাড়ি আক্রমণ করে। তাঁদের দাবি, ১০০ দিনের বকেয়া টাকা দিতে হবে, এই টাকা নাকি তিনি আটকে রেখেছেন। আলমগীরবাবু জানিয়েছেন, এই টাকা বিক্ষোভকারীরা ২ বছর আগে তুলে নিয়েছেন। বিক্ষোভকারী মহিলাদের অন্যতম কুলসোমা বিবি জব কার্ডে কাজ করে টাকা তুলে নিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, রবিবার সন্ধ্যায় তাঁর বাড়িতে ইট, পাটকেল ছোড়া হয়েছে। জানালার কাচ ভেঙে গিয়েছে। মূল্যবান সামগ্রী পিতলের বালতি, দরজার পিতলের লক নিয়ে পালিয়ে গেছে হামলাকারীরা। আলমগীরবাবুর দাবি, এটা পরিকল্পিত হামলা। লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল কংগ্রেসকে বদনাম করার জন্যই প্রাক্তন প্রধানের বাড়িতে এই হামলা। উল্লেখ্য, আলমগির হাসান ছাড়াও এই বাড়িতে থাকেন তাঁর দাদা জেলা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য শেখ নুরুল হাসান, ছোট ভাই পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সম্পাদক সারওয়াদি হাসানও। সেখ আলমগির হাসান জানিয়েছেন, তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে। যাঁরা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাঁরা সিপিআই(এম) থেকে এসেছেন। তাঁরা ১৯৯৮ সাল থেকে এলাকায় নেতৃত্ব দিয়ে তৃণমূলকে জিতিয়ে নিয়ে এসেছেন। তিনি যাদের হারিয়েছেন এখন তাঁরাই এলাকায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁকে কালিমালিপ্ত করার জন্য একাজ করা হচ্ছে। তিনি জানিয়েছেন, রায়ান ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের তিনটে গ্রামে টাকা বাকি আছে। বাকি সবাই টাকা পেয়ে গেছেন। উচ্চ নেতৃত্বের এটা দেখা দরকার। অঞ্চল সভাপতি সেখ জামালের এটা দেখা দরকার। এলাকা থেকে এইসব নেতৃত্বকে সরিয়ে দেওয়া দরকার। সিপিআই(এম) থেকে আসা ব্যক্তিরাই গন্ডগোল করেছেন। এই ধরনের হামলার ঘটনা ঘটিয়ে আখেরে তৃণমূল কংগ্রেসেরই বদনাম করছে। অন্যদিকে, এব্যাপারে এলাকার অঞ্চল সভাপতি সেখ জামাল জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন ১০০ দিনের বকেয়া টাকা রাজ্য সরকার দেবে। এবিষয়ে উপভোক্তাদের কাগজপত্র তৈরি করার জন্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কর্মসূচি দিয়েছেন ১৮ থেকে ২৫ তারিখ পর্যন্ত প্রতিটা অঞ্চলকে। তিনি সেখানেই ছিলেন। ফলে কী হয়েছে তাঁর জানা নেই। এমনকি হামলার বিষয়েও তিনি কিছু জানেন না। এদিন টাকার দাবি করতে আসা মহিলা কাকলি দাস জানিয়েছেন, আমরা কাজের টাকা পাইনি বলে এসেছি। ৭ হাজার টাকা বাকি আছে তাঁর। অন্যদিকে, কুলসোমা সেখ জানিয়েছেন, নতুন যারা পার্টির লোক তারাই তাঁদেরকে প্রাক্তন প্রধানের কাছে পাঠিয়েছেন।

Exit mobile version