বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- এবছর রথ যাত্রায় বর্ধমানবাসীর জন্য নতুন চমক ২৩ ফুটের সম্পূর্ণ পিতলের তৈরি রথ। প্রায় ১ বছর ধরে নবদ্বীপে এই রথ নির্মিত হয়ে আসার পর চূড়ান্ত সাজসজ্জার অপেক্ষায় রাখা হয়েছে শহরের টাউন হল প্রাঙ্গনে। আগামী ১৩ জুলাই বিকেলে শহরের কয়েক হাজার মানুষ শোভাযাত্রার মাধ্যমে এই রথকে নিয়ে যাওয়া হবে ঐতিহাসিক কাঞ্চননগর রথতলার মাঠে। এরপর ১৪ তারিখ রথ যাত্রার দিন ঐতিহ্য মেনে লোহার পুরনো এবং নতুন পিতলের রথ টানবেন অগুনিত ভক্তকুল। ইতিমধ্যেই শহরে এই নতুন পিতলের রথকে ঘিরে তৈরি হয়েছে ব্যাপক উন্মাদনা। রথতলা রথযাত্রা পরিচালন সমিতির সভাপতি তথা বর্ধমান পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল খোকন দাস জানিয়েছেন, ১২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে প্রায় ১ বছর ধরে সম্পূর্ণ পিতলের ২৩ ফুট লম্বা এবং ১৩ ফুট চওড়া এই রথ নির্মিত হয়েছে নবদ্বীপ শহরে। ইতিমধ্যেই রাজ আমলের তৈরি রথতলায় রথ রাখার ঘর সারিয়ে নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। যেখানে বর্তমান লোহার রথ যেমন রাখা থাকবে, তেমনই নতুন পিতলের রথও সারা বছর এখানে থাকবে। জানা যায়, ১৭০২ থেকে ১৭৪০ সাল অবধি বর্ধমান রাজ পরিবারের দায়িত্বে ছিলেন কীর্তিচাঁদ রায়। তিনি রাজা ছিলেন না। পরবর্তীকালে তাঁর পুত্র চিত্রসেন রায় রাজা উপাধি পেয়ে রাজা হয়েছিলেন। কিন্তু কীর্তিচাঁদ তাঁর রাজত্ব কালে বর্ধমানে বহু কিছু নির্মাণ করেছিলেন। তাঁর মধ্যে উল্লেখযোগ্য বারদুয়ারি, মহন্তস্থল প্রভৃতি। ১৭৩০ সাল নাগাদ কীর্তিচাঁদ সাধারন নাগরিকদের আনন্দ দেবার জন্য কাঞ্চননগরে রথ যাত্রার প্রচলন করেছিলেন। তাঁর আরও পরে রাজা চিত্রসেন রায় কেবলমাত্র রাজ পরিবারের সদস্যদের জন্য চালু করেছিলেন রথযাত্রার। সেই সময়কার জনগনের জন্য তৈরি করা ঐতিহ্যবাহী কাঠের রথ বেশ কয়েক বছর আগেই নষ্ট হয়ে যায়। এরপর স্থানীয় মানুষের উদ্যোগে লোহার রথ তৈরি করা হয়েছিল। এতদিন এই রথকেই সুন্দর ভাবে সাজিয়ে রথযাত্রার জন্য প্রস্তুত করা হত। রথকে ঘিরে এই এলাকা সহ গোটা শহর এমনকি জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসে রথ উৎসবে সামিল হতে। তবে পিতলের তৈরি ২৩ ফুটের এই নতুন রথ এবছর রথ যাত্রার নতুন আকর্ষণ হতে চলেছে বর্ধমানবাসীর কাছে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।