গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- এ রাজ্যে মাদক কারবারের অন্যতম মূল মাথা মনিপুর থেকে ধৃত বিজেপি নেতা কঙ্গরাম যদু সিং ওরফে যদুমনিকে ফের হেফাজতে নিল এসটিএফ। মনিপুরের পূর্ব ইম্ফলের পরমপত থানার ওয়াংখেয়ি ইয়াংলান লৈরাক এলাকায় তার বাড়ি। মাদক পাচারের মামলায় তাকে মনিপুর পুলিস তাকে গ্রেপ্তার করে। সেখানকার জেলে ছিল সে। কাটোয়ার মাদক মামলায় ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিস। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে হেরোইন তৈরির জন্য জন্য ব্যবহৃত আফিম সরবরাহে তার জড়িত থাকার বিষয়ে জানতে পারে এসটিএফ। সেখানকার মাদক আদালতের অনুমতি নিয়ে জেলে গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এসটিএফের তদন্তকারী অফিসার। জিজ্ঞাসাবাদে কাটোয়ার মামদ মামলায় তার জড়িত থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হয় এসটিএফ। এরপরই সেখানকার মাদক আদালতে আবেদন পেশ করে পুলিস। তাতে তাকে কাটোয়ার মাদক মামলায় বর্ধমানের আদালতে পেশ করার জন্য আবেদন জানায় এসটিএফ। মনিপুরের মাদক আদালতের বিচারক তাকে বর্ধমান আদালতে পেশ করার জন্য নিের্দশ দেন। মনিপুর থেকে কঠোর নিরাপত্তায় তাকে এরাজ্যে এনে ১৭ নভেম্বর বর্ধমানের মাদক আদালতে পেশ করা হয়। তদন্তের প্রয়োজনে ধৃতকে ১৪ দিন নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে আদালতে আবেদন জানায় এসটিএফ। ধৃতকে ৯ দিন এসটিএফ হেফাজতে পাঠানোর নিের্দশ বর্ধমানের মাদক সংক্রান্ত বিশেষ আদালতে বিচারক বিশ্বরূপ শেঠ। সেই মেয়াদ শেষ হওয়ার পর শুক্রবার ধৃতকে ফের আদালতে পেশ করা হয়। তদন্তের প্রয়োজনে ধৃতকে আরও ৪ দিন নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন জানায় এসটিএফ। ধৃতের আইনজীবী জামিনের সওয়ালে বলেন, বিজেপির হয়ে ধৃতের বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কথা ছিল। ধৃত দেশের ব্যাডমিন্টন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। এছাড়াও নানা সমাজসেবা মূলক কাজে জড়িত। মিথ্যা মামলায় তাকে ফাঁসানো হয়েছে। এসটিএফের আইনজীবী অরিন্দম মুখোপাধ্যায় হেফাজতের পক্ষে জোরালো সওয়াল করেন। দু’পক্ষের সওয়াল শুনে ধৃতের ৪ দিনের পুলিসি হেফাজত মঞ্জুর করেন বিশেষ আদালতের বিচারক।
এসটিএফ জানিয়েছে, এ বছরের ১৬ জুলাই কাটোয়া থানার রাজুয়ায় গোলাম মুের্শদের বাড়িতে হানা দেয় এসটিএফ। বাড়ি থেকে ৯ কেজি ৭০০ গ্রাম আফিম উদ্ধার হয়। উদ্ধার হওয়া আফিমের বাজার মূল্য ৯ লক্ষ ৪৩ হাজার ৪০০ টাকা। হেরোইন তৈরিতে আফিম ব্যবহার করা হয়। ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এসটিএফ জানতে পারে, মনিপুরের বাসিন্দা সাজিদ হাসিম ও ইরেনবাং সামরজিৎ সিং এরা হেরোইন তৈরির কাঁচামাল আফিম মুের্শদকে পাচার করে। ঘটনায় মুের্শদ, আঙুর আলি, মিনারুল শেখ ও মিঠুন শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাজিদ ও ইরেনবাংকেও গ্রেপ্তার করে এসটিএফ। তাদের কাছে ২ কেজি ২৪০ গ্রাম আফিম উদ্ধার হয়। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এসটিএফের গোয়েন্দারা জানতে পারেন, চক্রের মূল মাথা যদু মনি। মনিপুরে তার রাজনৈতিক যোগাযোগ রয়েছে। শাসক ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে তার ওঠাবসা রয়েছে। কাটোয়ার একটি গেস্ট হাউসের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ ও রেজিস্টার সংগ্রহ করে এসটিএফ। তা থেকে জানা যায়, ৮ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত কাটোয়ায় এসেছিল যদু মনি। তার মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন থেকেও ঘটনার সময় কাটোয়ায় যদুমনির উপস্থিতির বিষয়ে নিশ্চিত হয় গোয়েন্দারা। সে-ই মূলত মনিপুর থেকে হেরোইন তৈরির কাঁচামাল আফিম কাটোয়ার কারবারিদের সরবরাহ করত বলে জানতে পারে এসটিএফ। ১৫ অক্টোবর মনিপুরে গিয়ে এসটিএফের সাব-ইনসপেক্টর সৌম্যদীপ মল্লিক যদুমনিকে মনিপুর সেন্ট্রাল জেলে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।