সন্দেহভাজন জেএমবি জঙ্গি আসাদুল্লা গ্রেপ্তার, স্তম্ভিত পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতারের ডাঙাপাড়ার মানুষ
admin
ভাতার (পূর্ব বর্ধমান) :- মঙ্গলবার সকালেও আর পাঁচটা সাধারণ দিনের মতই শুরু হয়েছিল পূর্ব বর্ধমানের ভাতার থানার নিত্যানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ডাঙাপাড়া গ্রামের মানুষজনের। তখনও তাঁরা জানতেন না কী অপেক্ষা করছে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। দুপুর গড়াতে না গড়াতেই চমকে উঠতে শুরু করেন ডাঙাপাড়ার মানুষজন। ওই গ্রামের ছেলে আসাদুল্লা সেখ ওরফে রাজাকে চেন্নাই থেকে গ্রেপ্তার করেছে কলকাতার স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের বাহিনী। বর্ধমানের খাগড়াগড় কাণ্ডে জড়িত আসাদুল্লা সেখ ওরফে রাজাকে চেন্নাইয়ের থোরিয়াপাক্কাম থেকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় চমকে উঠল বর্ধমানের ভাতার থানার নিত্যানন্দপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ডাঙাপাড়ার মানুষজন। সূত্রের খবর, তিন মাস আগেই সে চেন্নাইয়ের তেনাপুল্লাম থেকে থোরিয়াপাক্কামে ভাড়াটে হিসাবে বসবাস শুরু করেন। ২০১৪ সালের ২ অক্টোবর বর্ধমানের বিখ্যাত খাগড়াগড় বিস্ফোরণ ঘটে। এর কিছুদিন পরই আচমকাই উধাও হয়ে যায় আসাদুল্লা সেখ ওরফে রাজা। এর কিছুদিন পর তাঁর স্ত্রী হালিমা বিবি তিন মেয়েকে নিয়ে তিনিও চলে যান তাঁর বাবার বাড়ি মঙ্গলকোটের কুলসোনা গ্রামে। আর ফিরে আসেননি বাড়িতে। তারও কিছুদিন পর বিধবা মা আসেদা বিবি-ও অন্য ছেলে আব্দুল বাসেরের কাছে চলে যান। বর্তমানে তিনি অসুস্থ। কিন্তু মায়ের অসুস্থতা সম্পর্কেও কোনো খোঁজ নেননি আসাদুল্লা সেখ – এমনটাই জানিয়েছেন বাড়ির লোকজন। বাড়িতে আজও সেই তালা ঝুলছে। মঙ্গলবার সকালে কলকাতার এসটিএফ রাজাকে গ্রেপ্তারের খবর এবং তার বাড়ি ভাতারের ডাঙাপাড়ায় এই খবর রটতেই এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। সূত্রের খবর, বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পাশাপাশি রাজা জেএমবির সঙ্গেও গোপনে যোগাযোগ রাখত। সূত্রের খবর, আইইডি বানানোয় প্রশিক্ষণ নিয়েছিল রাজা। একইসঙ্গে জেএমবিতে নিয়োগের ক্ষেত্রেও সে ভূমি্কা নিয়েছিল। বুদ্ধগয়া বিস্ফোরণ কাণ্ডেও নাম জড়িয়েছে আসাদুল্লার। বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণ কাণ্ডের পর জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের জঙ্গী সংগঠনটি একটু দুর্বল হয়ে যায়। পরবর্তীকালে আস্তে আস্তে ফের সংগঠন চাঙ্গা হতে শুরু করে। কিছুদিন আগে জামাত জঙ্গী প্রধান ইজাজ গ্রেপ্তার হয়। তার সূত্র ধরে কলকাতায় ধরা পড়ে ইজাজের দুই জঙ্গী সদস্য। সেই দুই জঙ্গী সদস্যকে জেরা করেই উঠে আসে আসাদুল্লাহের নাম। এরপর তার খোঁজে গোপনে তল্লাশি শুরু করে এসটিএফ। সূত্রের খবর, বর্ধমা্নের খাগড়াগড় কাণ্ডের পর জঙ্গী কার্যকলাপ থিতিয়ে পড়ার কিছুদিন পর ফের ধীরে ধীরে সদস্য বাড়ানোর কাজ শুরু করে জেএমবি। তারপরেই আসাদুল্লাও কাজে নেমে পড়ে। তার শ্বশুরবাড়ি মঙ্গলকোটের কুলসোনা গ্রামে। মঙ্গলকোটের শিমূলিয়ায় সে জঙ্গী প্রশিক্ষণও নিয়েছিল। জানা গেছে, ধৃত আসাদুল্লাহের কাছ থেকে পুলিশ বেশ কিছু জাল পরিচয়পত্র-সহ নথি উদ্ধার হয়েছে। এদিকে, আসাদুল্লার গ্রেপ্তারের খবরে ডাঙাপাড়ার মানুষ রীতিমত চুপ করে গেছেন। বেশিরভাগ গ্রামবাসীই তার ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজী হননি। গ্রামবাসীদের মধ্যে থেকেই কয়েকজন জানিয়েছেন, ২০১৪ সালের আগে আসাদুল্লা সেখ ট্রাক্টর চালাতো এবং চাষের কাজ করত। সে যে আদৌ গোপনে জঙ্গী কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত ছিল তা কেউই বুঝতে পারেনি মঙ্গলবারের আগে। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, আসাদুল্লারা ৬ ভাই। সকলেই আলাদা থাকেন। ২০১৪ সালের খাগড়াগড় বিস্ফোরণের কিছুদিন পরই আসাদুল্লা গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যাবার পর একদিনও গ্রামে আসেননি বলে জানিয়েছেন আসাদুল্লার দাদা আব্দুল বাসের। তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা জানতেন চেন্নাইয়ে ঢালাইয়ের কাজ করতে গেছিল আসাদুল্লা। কিন্তু খাগড়াগড় কাণ্ডের পর বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার পর আর ভাই আসাদুল্লার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই কারও। আব্দুল বাসের জানিয়েছেন, আসাদুল্লা যে জঙ্গী কাজে যুক্ত ছিল তা তাঁরা জানতেন না। তবে সে নিয়মিতই শিমুলিয়া মাদ্রাসায় যেত। আব্দুল বাসের জানিয়েছেন, বর্ধমানের খাগড়াগড় কাণ্ডের পর পরিবারের কারও সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেনি আসাদুল্লাহ। তারজন্যই তার স্ত্রী বাধ্য হয়ে তিন মেয়েকে নিয়ে তাঁর বাপের বাড়ি চলে যান। কিন্তু তিনিও আর শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ রাখেননি।