খণ্ডঘোষ (পূর্ব বর্ধমান) :- মাত্র ১৫ দিন আগেই ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারী সরকারী হিসাবে তাঁর বয়স হয়েছে ১০১ বছর। ভারতের একজন নাগরিক রিয়াজ। কিন্তু প্রতিদিন তাঁকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে সরকারী এই হিসাব আর সরকারী আমলাদের উদাসীনতা। পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ থানার শ্যামাডাঙার বাসিন্দা মহম্মদ রিয়াজুদ্দিন মল্লিকের আসল বয়েস মাত্র ২৭ বছর। কিন্তু তার ভোটার কার্ডের বয়স ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারী অনুযায়ী ১০১ বছর। বলা বাহুল্য গোটা জেলায় ভোটার কার্ডের হিসাবে তিনিই একমাত্র ১০১ বছরের জীবিত ভোটার। আর সমস্যাটা এখান থেকেই শুরু হয়েছে রিয়াজের। কার্যত হ্যাপি নিউ ইয়ার শুনলেই বুক কাঁপে ১০১ বছরের যুবকের।
তরতাজা যুবক রিয়াজ ১ জানুয়ারী এই একটি দিনেই বুড়ো থেকে আরও বুড়ো হয়ে যান। এবছর সরকারি খাতায় রিয়াজ ১০১ বছরের ‘বুড়ো’। খন্ডঘোষের শ্যামাডাঙ্গার বাসিন্দা রিয়াজের জন্ম ১ জানুয়ারি ১৯৯৬। আর তার ভোটার কার্ডে লেখা রয়েছে তাঁর জন্ম তারিখ ১ জানুয়ারি, ১৯২২ – যা নিয়ে তার ‘অশান্তি’র শেষ নেই। সেই ২০১৪ থেকে লাগাতার এই অশান্তি ভোগ করছেন রিয়াজ। রিয়াজের বাবা সোমশের আলম মল্লিক জানিয়েছেন, “ভোটার কার্ডে নিজের জন্ম তারিখ সংশোধনের জন্য ছেলেটা বিস্তর ছোটাছুটি করেছে। কতবার এই বয়স সংশোধনের জন্য আবেদন জমা দিয়েছে, লাভ হল না কিছুই। সরকারি কার্ডের হিসেবে, আমার চেয়ে ওর বয়স ৫০ বছর বেশি”। ভোটার কার্ড-এর গোলমালের ধাক্কায় তাঁর আধার কার্ডও অনিশ্চিৎ হয়ে পড়েছিল। সেটা কোনোরকমে করা গেলেও রিয়াজের ভোটার কার্ড সংশোধন কিছুতেই হচ্ছে না। আর তা যে হচ্ছে না আমলাদের উদাসীনতায় তা বলাই বাহুল্য। খণ্ডঘোষের এই শ্যামাডাঙাতেই সিংহভাগ কাটিয়েছেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা রায়নার তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক শম্পা ধাড়া। রিয়াজ তাঁর কাছেও দরবার করেছেন। খোদ শম্পা ধাড়াও জানিয়েছেন, তিনি রিয়াজকে খুব ভাল করে চেনেন। কিন্তু কেন যে তার ভোটার কার্ডের এই গোলমাল ঠিক হচ্ছে না, তিনি বুঝতে পারছেন না। বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নেবেন। তবে তিনি জানিয়েছেন বিষয়টি নিয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জানিয়েছিলেনও। এরই মাঝে স্থানীয় লোদনা গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মকর্তাদের সহায়তায় রিয়াজ নতুন করে কার্ড সংশোধনের আবেদন করেছেন দু’মাস আগে। রিয়াজ জানিয়েছেন, প্রাপ্তবয়স হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত ভোটার কার্ডের এই ত্রুটির জন্য কোনো নির্বাচনেই ভোট দিতে পারেননি। আর কিছুদিন পরেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। এই নির্বাচনেও তিনি ভোট দিতে পারবেন কিনা জানেন না। তিনি জানিয়েছেন, ২ মাস আগে ফের আবেদন জমা দিয়েছেন। কিন্তু এখনো সংশোধিত নতুন ভোটার কার্ড তিনি পাননি।