রাজ আমলের প্রথা মেনেই বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা দেবীর ঘট প্রতিস্থাপন করা হল
admin
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমানের রাজ পরিবারের আমলের প্রথা ও নিয়ম নিষ্ঠা মেনেই এবারও বৃহস্পতিবার প্রতিপদে বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা দেবীর ঘট উত্তোলন ও প্রতিষ্ঠার মধ্যে দিয়েই বর্ধমানে আনুষ্ঠানিকভাবে শারদ উৎসবের সূচনা হল। মহালয়ার পরের দিন প্রতিপদে রূপোর ঘটে রাজপরিবারের প্রতিষ্ঠিত কৃষ্ণসায়র থেকে জল ভরে এক্কাগাড়িতে করে সেই ঘট নিয়ে বাদ্যযন্ত্র সহকারে শোভাযাত্রা করে মন্দিরে এনে তা প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিবারের মত এবারও ঘট উত্তোলন এবং শোভাযাত্রায় সাক্ষী থাকলেন দূরদূরান্তের অসংখ্য ভক্ত। বর্ধমান রাজ পরিবারের ইতিহাস সূত্রে জানা গেছে, জনশ্রুতি অনুযায়ী ১৭০২ সালে স্বপ্নাদেশ পেয়ে চুনুরীদের কাছে থাকা দামোদর নদের পাড় থেকে উদ্ধার করে দেবী সর্বমঙ্গলাকে বর্ধমানের মহারাজ কীর্তিচাঁদ মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকেই ‘বর্ধমানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী’ মা সর্বমঙ্গলা। রাঢ়বঙ্গের নবরত্ন মন্দির এটি। প্রবেশ পথে তিনটি স্তরে পোড়া মাটির মূর্তি। মূল মন্দিরের সামনে নাট মন্দির। দক্ষিণের প্রবেশ পথ দিয়ে ঢুকে দু’ধারে দুটি শিব মন্দির। প্রতি বছর চিরাচরিত প্রথা মেনে মহালয়ার পরে প্রতিপদে দেবীর ঘট তোলা হয়, আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ভক্তসমাগমের মধ্যে, শোভাযাত্রা সহকারে, ঢাক, ব্যাণ্ড বাজিয়ে এক্কাগাড়িতে করে গিয়ে কৃষ্ণসায়র থেকে রুপোর ঘটে জল ভরে এনে দেবীর ঘট প্রতিষ্ঠা করা হয়। রাজপ্রথা মেনে ৯ দিন ধরে চলবে মায়ের পুজো, সাথে চণ্ডীপাঠ। এছাড়াও বছরের প্রতিদিনই নিয়ম মেনে দেবীর পূজা হয়। দেবীকে ভোগ নিবেদন করা হয়। দেবী কষ্টিপাথরের, অষ্টাদশভূজা সিংহবাহিনী। রুপোর সিংহাসনে মা আসীন। আগে সন্ধি পুজোয় কামান দাগা হতো, মেষ, মহিষ ও ছাগ বলি হতো। বর্তমানে আর হয় না। ১৯৯৭ সালে সর্বমঙ্গলা মন্দিরের সামনে থাকা কামান দাগার সময় সেই কামান ফেটে দুর্ঘটনা ঘটে। তারপর থেকে কামান দাগা বন্ধ করে দেওয়া হয়। আগে দেবী সর্বমঙ্গলা মন্দিরের সন্ধিপুজোর কামানের আওয়াজ শুনে আশেপাশের সমস্ত জমিদার বাড়িতে সন্ধিপুজো শুরু হতো। নবমীতে হয় নবকুমারী পুজো। নবদুর্গার বিভিন্ন রূপকে নব কুমারী রূপে পুজোর প্রচলন আছে এই মন্দিরে। এদিন এই ঘট উত্তোলন অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে হাজির ছিলেন বর্ধমান পৌরসভার পুরপ্রধান পরেশচন্দ্র সরকার, বর্ধমান দক্ষিণের বিধায়ক খোকন দাস, পৌরসভার একাধিক কাউন্সিলাররাও।