E Purba Bardhaman

আদিবাসী যুবতীকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে আদিবাসীদের সশস্ত্র বিক্ষোভ, থানা ঘেরাও

Adivasis protested against the gang rape of indigenous women, including arms. Dewandighi Thana

বিপুন ভট্টাচার্য, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বাংলার শুধু নয়, দেশের কোনো মহিলাই যেন নির্যাতিত, ধর্ষিতা না হন। আর এরকম ঘটনা ঘটতে থাকলে এবং বিশেষত আদিবাসী কোনো মহিলা যদি অত্যাচারিত হন তাহলে আর তাঁরা চুপ করে বসে থাকবেন না। রীতিমত তাঁরাই শাস্তির বিধান বাতলাবেন। সোমবার বর্ধমানের দেওয়ানদিঘী থানা ঘেরাও করে এভাবেই রীতিমত পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন আদিবাসী সমাজের নেতারা। গত বুধবার বর্ধমানের দেওয়ানদিঘী থানার জিয়াড়া গ্রামের এক স্কুল পড়ুয়া আদিবাসী যুবতী গণ ধর্ষণের শিকার হন। আর সেই ঘটনায় দোষীদের ফাঁসির দাবীতে ফুঁসে উঠলেন জিয়াড়া গ্রামের আদিবাসী মানুষজন। সোমবার হাজার খানেক আদিবাসী সমাজের পুরুষ ও মহিলা সশস্ত্র অবস্থায় মিছিল করে দেওয়ানদিঘী থানায় স্মারকলিপি দিয়ে দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানালেন। সোমবার দুপুর থেকে এই এঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়। আদিবাসী সমাজের অভিযোগ, এখনও পর্যন্ত অভিযুক্তদের ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হলেও বাকিরা অধরা। এদিন দুপুরে দেওয়ানদিঘী থানার জিয়াড়া গ্রাম থেকে সশস্ত্র আদিবাসী সমাজের পুরুষ-মহিলারা হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রায় দেড় কিমি রাস্তা মিছিল করে হাজির হন দেওয়ানদিঘী থানায়। তাঁদের অভিযোগ, গত বুধবার বিকালে ওই যুবতীর এক বন্ধু তাঁকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর রাত্রি প্রায় ৮ টা নাগাদ কয়েকজন যুবকের হাতে তাঁকে তুলে দেওয়া হয়। এরপর গণ ধর্ষণের শিকার হন ওই যুবতী। রাতেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই যুবতীকে উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একইসঙ্গে এই ঘটনায় দেওয়ানদিঘী থানায় অভিযোগ দায়ের করার পর পুলিশ ২ জনকে গ্রেপ্তার করে। আদিবাসী সমাজের নেতা ধীরেন মাণ্ডি জানিয়েছেন, এই ঘটনায় মুল চক্রী ওই যুবতীর বন্ধুকে এখনও পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি। সোমবার এই ঘটনায় দোষীদের গ্রেপ্তার এবং ফাঁসির দাবীতে দীর্ঘক্ষণ থানা ঘেরাও করে রাখেন তারা। পরে থানায় আসেন ডি এস পি। পরিস্থিতি সামাল দিতে ভাতার থানা থেকেও পুলিশকে নিয়ে আসা হয়। আদিবাসী সমাজের পক্ষ থেকে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবীতে এদিন ডেপুটি পুলিশ সুপার (সদর) শৌভিক পাত্রের সঙ্গে কথা বলে তাঁকে স্মারকলিপিও দেন। শৌভিকবাবু জানিয়েছেন, ওই ঘটনার খবর পেয়েই পুলিশ তদন্ত শুরু করে এবং ২জনকে গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, ওই যুবতী গণ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, বাকিদের ধরতে পুলিশ চেষ্টা চালাচ্ছে। এদিন প্রায় ঘণ্টা খানেক থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান আদিবাসী সমাজের মানুষজন। এদিন তাঁরা অভিযোগ করেছেন, কেবলমাত্র দেওয়ানদিঘঠী থানার অধীনেই চলছে একাধিক মদের ভাটি। যা রীতিমত অপরাধীদের উত্সাহ জোগাচ্ছে এই ধরণের অপরাধ ঘটানোর জন্য। হুঁশিয়ারী দিয়ে তাঁরা জানান, সমাজের সমস্ত স্তরের মানুষ ভাটিখানা দেখতে পাচ্ছেন – আর পুলিশ নাকি তাদের দেখতে পাচ্ছেন না। এরকম হলে এবার তাঁরাই শাস্তির বিধান করবেন – তাতে তাঁদের যে শাস্তি হয় তাঁরা মেনে নেবেন। আদিবাসী নেতারা এদিন বলেন, যেভাবে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও আদিবাসী মহিলারা নির্যাতিত হচ্ছেন, ধর্ষিতা হচ্ছেন – তাতে তাঁরা আতংকিত। শুধুমাত্র আদিবাসী মহিলারাই নয়, সমাজের যে কোনো মহিলা অত্যাচারিত বা নির্যাতিত হওয়া কখনই সুস্থ সমাজের লক্ষণ নয়। আর এগুলো রদ করতেই তো পুলিশ ও প্রশাসন। কিন্তু পুলিশের নাকের ডগায় সবকিছু ঘটলেও পুলিশ কেন তা দেখতে পাচ্ছেন না – এটাই চরম আশ্চর্য্যের। যদিও এদিন আদিবাসী সমাজের এই অভিযোগ সম্পর্কে ডিএসপি শৌভিক পাত্র জানিয়েছেন, বর্ধমান শহর তথা দেওয়ানদিঘী থানার অধীনে কোথাও কোনো মদের ভাটি চলছে না। এব্যাপারে তাঁরা প্রতিনিয়তই হানাদারী চালাচ্ছেন। তবুও যেহেতু আদিবাসী সমাজের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে তাই গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

Exit mobile version