E Purba Bardhaman

অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের জন্য ১৬ বছরেও বর্ধমানে তৈরী হল না হাসপাতাল

After 16 years of declaration, the hospital was not constructed for the Ex-Servicemen in Burdwan

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- পুলওয়ামায় পাকিস্তানের জঙ্গী হানায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪৯ জন ভারতীয় সেনা। পুলওয়ামা হানার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গোটা দেশ জুড়েই চলছে তীব্র উত্তেজনা। পাল্টা জঙ্গী নিকেশ করার দাবীতে গোটা দেশ জুড়েই তীব্র আবেদন উঠেছে। হয়েছে পাল্টা আঘাতও। কিন্তু দেশের সুরক্ষার জন্যদেশবাসীর সুরক্ষার জন্য যে সৈনিকরা প্রতিদিনই জীবনের বাজি রেখে সেবা করে চলেছেনসেই সৈনিকদের অবসর নেবার পর প্রতিশ্রুতি মত সরকারী খরচে তাঁদের ন্যূনতম চিকিত্সার সুযোগও তাঁরা পাচ্ছেন না। এমন চিত্রই উঠে এসেছে পূর্ব বর্ধমান শহরে। অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের চিকিত্সার সুযোগ দিতে ২০০২ সালে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা দপ্তর বর্ধমান শহরে একটি ইসিএইচএস চালুর উদ্যোগ নেন। কিন্তু প্রকল্প রূপায়নের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জায়গা না মেলায় দীর্ঘ ১৬ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও তৈরী হয়নি হাসপাতাল। ফলে এখানকার অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের প্রায় ৫০ কিমি দূরে পানাগড় সেনা ছাউনিতে গিয়ে চিকিত্সা করাতে হচ্ছে। কেউ কেউ বেসরকারীভাবেই চিকিত্সা করিয়ে নিতে বাধ্যও হচ্ছেন। যেহেতু অবসরপ্রাপ্ততাই স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের চিকিত্সার প্রয়োজনীয়তাও উত্তরোত্তর বাড়ে। দেশের জন্য তাঁদের যে অবদান তাঁকে সম্মান জানাতেই ২০০২ সালে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা দপ্তর পানাগড় হেড কোয়ার্টারের পাশাপাশি বর্ধমান শহরেও একটি এক্স সার্ভিসমেন কনট্রিবিউটরি হেল্থ স্কিম চালুর অনুমোদন দেয়। সেই সময় সেনাবাহিনীর কর্ণেল মুখার্জ্জী বর্ধমানে এসে বর্ধমান শহরেই এই হাসপাতাল (কেবলমাত্র আউটডোরতৈরীর কথা জানিয়ে যান। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি। চলতি সময়ে পুলওয়ামা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গোটা দেশ জুড়ে যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। একদিকে চলছে নিহত সৈনিকদের জন্য স্মরণানুষ্ঠানঅন্যদিকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে চলছে বদলার আওয়াজ। কিন্তু যে সৈনিকরা দেশের সুরক্ষা এবং দেশবাসীর সুরক্ষার জন্য নিজের জীবন বিপন্ন করছেন সেই অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদেরই এখন নিজেদের চিকিত্সার জন্য বর্ধমান থেকে প্রতিদিন যেতে হচ্ছে ৫০ কিমি দূরে পানাগড়ে। ফলে রীতিমত সমস্যার মধ্যেই দিন কাটাচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। ইণ্ডিয়ান এক্স সার্ভিসেস লিগএর বর্ধমান ইউনিটের সম্পাদক তাপস মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেনজেলা সৈনিক বোর্ডের অধীনে পূর্ব বর্ধমান জেলায় রয়েছেন ৯১৩৮ হাজার জন সদস্য এবং ১১৬৭ জন বিধবা সদস্য। এঁদের ওপর নির্ভরশীল পরিবারের মোট সদস্যের সংখ্যা ৫০৩৫৮ জন। পশ্চিম বর্ধমান জেলায় রয়েছেন ১৬৯৯ জন সদস্য এবং ১৯৪জন বিধবা সদস্য। এঁদের ওপর নির্ভরশীল ৯২৭১ জন। বীরভূম জেলা এই সৈনিক বোর্ডের অধীনে রয়েছে। সেখানে রয়েছেন ৪৮৭২ জন সদস্য এবং ৬৪২জন বিধবা সদস্য। এঁদের ওপর নির্ভরশীল রয়েছেন ২৬ হাজার ৯২৮ জন। তাপসবাবু জানিয়েছেনকেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষাদপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় জায়গার জন্য রাজ্য সরকার তথা জেলা প্রশাসনের কাছে চিঠি দিয়ে জানানো হয়। ২০০৮ সালে তত্কালীন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেনও অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের এই দাবী পূরণের প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এখনও মেলেনি সেই জমি। তাপসবাবু জানিয়েছেন২০১৬ সালে জেলা ভূমি দপ্তর থেকে বর্ধমান শহরের কাঞ্চননগর এলাকায় একটি জমিকে চিহ্নিত করে সেই জমি হস্তান্তরের জন্য ৪৫ লক্ষ টাকা চেয়ে চিঠি দেয়। কিন্তু তারপরেও কিছু এগোয়নি। গতবছর ২০১৮ সালেও ফের জেলা ভূমি দপ্তর থেকে এব্যাপারে একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। তাপসবাবু জানিয়েছেনযেহেতু এটা অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের বিষয় তাই তাঁরা চান বিনামূল্যে রাজ্য সরকার তথা জেলা প্রশাসন ওই জমি দিক। এব্যাপারে খুব শীঘ্রই তাঁরা ফের জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিতভাবে স্মারকলিপি দেবেন। যদিও এব্যাপারে বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমিশশী কুমার চৌধুরী জানিয়েছেন,এব্যাপারে তাঁর কাছে কেউ আবেদন জানান নি। যেহেতু তিনি নতুন এসেছেন তাই আগে কি হয়েছে তা তাঁর জানা নেই। তবে যাইহোক সেটা বিভাগীয় সরকারী আইন মেনেই হবে।

Exit mobile version