বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান শহরের একাধিক জায়গায় ফুটপাত থেকে হকারদের উচ্ছেদ করার পর সেই ফুটপাতকেই ফের গ্রিল দিয়ে ঘেরাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়ালো। বর্ধমান শহরের জিটিরোডে বর্ধমান সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাংকের সামনে ফুটপাতকে ফের গ্রিল দিয়ে ঘিরে দেওয়ার ঘটনায় সরব হয়েছেন হকার থেকে রাজনৈতিক দলগুলিও। উল্লেখ্য, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে গোটা রাজ্য জুড়েই সরকারি জায়গা থেকে জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। বর্ধমান শহরেও পুরসভা, পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিক রাস্তা থেকে হকারদের উচ্ছেদ করা হয় এবং তাঁদের অস্থায়ী ছাউনিকে ভেঙে ফেলা হয়। হকার উচ্ছেদ নিয়ে এই পরিস্থিতির মাঝেই সম্প্রতি কিছু কিছু জায়গায় ফুটপাতকে গ্রিল দিয়ে ঘিরে ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। হকাররা অভিযোগ করেছেন, ফুটপাত থেকে হকারদের উচ্ছেদের পর সেই ফুটপাতকে সাধারণ মানুষের জন্য চলাচলের জন্য উন্মুক্ত না করে তাকেই আবার গ্রিল দিয়ে ঘিরে ফেলা হচ্ছে। এদিকে, এব্যাপারে বিজেপির ২নং নগর মণ্ডলের সভাপতি দিব্যেন্দু চক্রবর্তী জানিয়েছেন, এর থেকে অন্যায় আর কিছু হতে পারে না। জনসাধারণের জন্য ফুটপাত। সেই ফুটপাতকে ফাঁকা করতে হকার উচ্ছেদ করে হকারদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলা হয়েছে। সঠিক কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই এসব করা হচ্ছে। হকার উচ্ছেদের পর আবার কেন ফুটপাতকে গ্রিল দিয়ে ঘিরে ফেলা হচ্ছে? তিনি জানিয়েছেন, এব্যাপারে বিজেপির পক্ষ থেকে তাঁরা আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিয়েছেন। অন্যদিকে, জেলা কংগ্রেস নেতা গৌরব সমাদ্দার জানিয়েছেন, ফুটপাতকে এভাবে আবার গ্রিল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হলে সাধারণ মানুষের অধিকারকে খর্ব করা হচ্ছে। ফুটপাতের বদলে জনসাধারণকে মূল রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করতে হবে। তিনি অভিযোগ করেছেন, এই ফুটপাতকে কারও হাতে তুলে দেবার চক্রান্ত চলছে। এব্যাপারে তাঁরা নজর রাখছেন। অন্যদিকে, এব্যাপারে বর্ধমান পৌরসভার পুরপ্রধান পরেশ সরকার জানিয়েছেন, এটা একেবারেই মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের সুবিধার্থেই ফুটপাতকে গ্রিল দিয়ে ঘেরা হচ্ছে। ফুটপাত সাধারণ মানুষের জন্যই থাকবে। অন্যদিকে, এব্যাপারে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রসেনজিত দাস জানিয়েছেন, হকার উচ্ছেদ নয়। কারণ মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যারা জবর দখল করে রাস্তা আটকে বসে আছেন তাঁদের সরাতে। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী কোনও হকারকে তুলে দেওয়ার কথা বলেননি। যারা এই রাস্তায় রেলিং দিয়েছে খুবই অন্যায় করেছে। কারণ পৌরসভা জবরদখলকারীদের তুলে দিয়েছে, তাঁরা ফুটপাত আটকে বসে ছিলেন বলে। সেই ফুটপাত মানুষের চলাচলের জায়গা। মানুষ যাতে চলাচল করতে পারে তারজন্যই ফুটপাত পরিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু গোটা ফুটপাতটাই যদি রেলিং দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয় তাহলে যারা বসেছিলেন তাঁদের তুলে দেওয়ার তো কোনও অর্থ হয়না। তাহলে তাঁরা থাকলেই ক্ষতি কি ছিল? তার পাশ দিয়ে তো মানুষ যাচ্ছিলেন। এখন গোটা রাস্তাটাই রেলিং দিয়ে ঘিরে দিয়েছে, মানুষ একটুও যাতায়াত করতে পারবেন না। গোটা ফুটপাতটাই বন্ধ করে দিলেন, এটা কিন্তু ঠিক না। কারণ সরকার বা পৌর প্রশাসন এরা চেয়েছে ফুটপাতটা মানুষের ব্যবহারের উপযোগী করার জন্য। তো সেই ব্যবহারটাই তাঁরা বন্ধ করে দিচ্ছে। অবিলম্বে তাঁদের এই রেলিংগুলো খুলে ফেলা উচিত। পৌরসভার এদিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিত। চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন, বিষয়টা দেখে রেলিংগুলো খোলাবার ব্যবস্থা করবেন। রাস্তাকে কেন্দ্র করে রুটিরুজিও বন্ধ, মানুষের চলাচলও বন্ধ। দুটোই একসাথে হতে পারে না।