সাঁকটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে চালু হলো এআই প্রযুক্তির স্মার্ট ক্লাস
admin
রায়না (পূর্ব বর্ধমান) :- স্কুলের প্রাক্তনীদের ঐকান্তিক চেষ্টায় পূর্ব বর্ধমানের রায়না থানার সাঁকটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে জেলার মধ্যে প্রথম কোনো সরকারি স্কুলে শুরু হল স্মার্ট এআই (আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স) প্রযুক্তির ক্লাস। সোমবার এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ডিজিটাল ক্লাসের উদ্বোধন করলেন জেলাশাসক আয়েষা রাণী এ। উপস্থিত ছিলেন ডি আই (মাধ্যমিক) বৃন্দাবন মিত্র, এআই উৎপল গণ, বিডিও অজয় দণ্ডপাঠ-সহ স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সেখ আবুল বরকত, মুগরা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শুভজিত গুহ, প্রাক্তন বিধায়ক উজ্জ্বল প্রামাণিক, প্রাক্তনী সংগঠনের সদস্য হিরন্ময় সামন্ত, সুমনা গুহ প্রমুখরা। জেলাশাসক এদিন জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারি স্কুলগুলিতে এই ধরনের স্মার্ট ক্লাস চালুর জন্য তাঁরা উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রথম দফায় ৪টি স্কুলে এটা চালুর প্রস্তাব রয়েছে। বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক বাছাই করে তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়ে এই ক্লাস চালু করা হবে। তিনি জানিয়েছেন, বেসরকারি বা সরকারি কিংবা ইংরেজি মাধ্যম বা বাংলা মাধ্যম স্কুল বলে কিছু নয়, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করাই লক্ষ্য। কি লক্ষ্য নিয়ে পড়াশোনা করতে হবে সেটাই ছাত্রছাত্রীদের ঠিক করে এগিয়ে যেতে হবে। স্কুল সেখানে মাধ্যম। তিনি জানিয়েছেন, বর্তমান প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদেরও এগিয়ে যেতে হবে। ভালো ফল করতে হবে। এদিন স্কুলের শতবর্ষ উৎসব পরিষদের সহ-সভাপতি হিরন্ময় সামন্ত জানিয়েছেন, স্কুলের ১৯৯৫ সালের ব্যাচের প্রাক্তনীদের নিয়ে তাঁরা এই প্রাক্তনী সংগঠন করে স্কুলের সার্বিক উন্নতির চেষ্টা করছেন। তারই প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা ব্যয় করে এই এআই প্রযুক্তির একটি স্মার্ট ক্লাস তাঁরা শুরু করেছেন। এই ক্লাস রুমেই এক একদিনে একেক শ্রেণির পড়ুয়ারা ক্লাস করবেন। আগামী ১ বছরের মধ্যেই তাঁরা প্রতি শ্রেণীর জন্য আলাদা আলাদা এআই প্রযুক্তির স্মার্ট ক্লাস রুমের ব্যবস্থা করবেন তাঁরা। বর্তমানে স্কুলে ৪০২ জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে। এই স্কুলে ভর্তি হয় উচিতপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, গুণার প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেলুড় প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং শাঁকটিয়া অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। হিরন্ময়বাবু জানিয়েছেন, শুধু এই হাইস্কুলই নয়, তাঁরা প্রাক্তনীদের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিয়েছেন ওই চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের জন্য এরকমই স্মার্ট ও এআই প্রযুক্তির ক্লাস তাঁরা চালু করতে চলেছেন। উল্লেখ্য, ১৯২৫ সাল থেকে এই স্কুল শুরু হয়। বর্তমানে শতবর্ষে পা দিল স্কুল। তাকে ঘিরেই ২৪ -২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনদিন ব্যাপী নানান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। হিরন্ময়বাবু জানিয়েছেন, সমগ্র দক্ষিণ দামোদর অঞ্চল থেকে প্রথম যে দুজন স্নাতক হন তার মধ্যে বকুলচন্দ্র গুহ ছিলেন এই স্কুলের ছাত্র। এই স্কুলের আগে যে পাঠশালা চলত পাশের গ্রামে, সেখানে এসেছিলেন খোদ পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরও। এই ১০০ বছরে এই স্কুল থেকে বহু কৃতি ছাত্রছাত্রী দেশ বিদেশে ছড়িয়ে রয়েছেন। যাঁরা স্ব স্ব ক্ষেত্রে কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সেখ আবুল বরকত, শিক্ষক খগেন্দ্রনাথ পাল, অদিতি কুন্ডু জানিয়েছেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষাদানে পড়ুয়াদের মধ্যে আলাদা আকর্ষণ তৈরি করে। তাতে আবার এআই প্রযুক্তি যুক্ত হলে শিক্ষাদানে আরও বড় ক্ষেত্র খুলে যায়। তাঁদের এই স্কুলে ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষে পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল ৬০০ জনের উপরে। বর্তমানে সেটা দাঁড়িয়েছে ৪০২ জন৷ তাঁদের এই নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার ছাত্রছাত্রীদের আবার সরকারি স্কুলে ভর্তি হওয়ার উৎসাহ যোগাবে বলে মনে করছেন তাঁরা।