বিপুন ভট্টাচার্য, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- শুক্রবার বর্ধমানে জেলাশাসক এবং অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ)-এর কাছে সিপিআই(এম), তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির মনোনয়ন দাখিলকে কেন্দ্র করে নির্বাচন বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ উঠল তৃণমূল এবং বিজেপির বিরুদ্ধে। শুক্রবার সকাল থেকেই বর্ধমানের কালেক্টরেট চত্বর তথা বর্ধমানের জেলাশাসকের অফিস চত্বরকে ঘেরাটোপ করে তোলা হয়। একাধিক ড্রপ গেট তৈরী করে মনোনয়নে আসা রাজনৈতিক দলের মিছিলকে আটকে দেওয়া হয় ড্রপ গেটেই। কিন্তু শাসকদল তৃণমূলের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ আলাদা আচরণ করায় এদিন তৃণমূলের বিরুদ্ধে নির্বাচন বিধি ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার রাজ্যের শাসকবিরোধীদের জন্য নিরাপত্তায় কড়াকড়ি থাকলেও রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থক, নেতাদের জন্য যথেষ্ট শিথিল ছিল এদিন জেলাশাসককরণের নিরাপত্তার চেহারা। শুক্রবার সকালে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসনের সিপিআই(এম) প্রার্থী হিসাবে আভাষ রায় চৌধুরী জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তবের কাছে মনোনয়নপত্র পেশ করেন। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অরিন্দম নিয়োগীর কাছে বর্ধমান পূর্ব লোকসভা আসনের জন্য মনোনয়ন পত্র জমা দিলেন সিপিআই(এম) প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র দাস। এদিন বর্ধমানের পার্কাস রোড থেকে মিছিল করে প্রার্থীরা আসেন জেলাশাসক অফিস এলাকায়। মিছিলের প্রথমভাগে ছিলেন অমল হালদার, অচিন্ত্য মল্লিক, উদয় সরকার প্রমুখরাও। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুসারে নির্দিষ্ট এলাকায় প্রার্থী সহ ৪জনকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। সিপিআই(এম)-এর প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেবার কিছুক্ষণ পর বর্ধমান ষ্টেশন থেকে বিশাল মিছিল এবং সঙ্গে ব্যাণ্ডপার্টি নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসেন বিজেপির বর্ধমান পূর্বের প্রার্থী পরেশ চন্দ্র দাস। হাজির ছিলেন জেলা বিজেপির সভাপতি সন্দীপ নন্দী, গোলাম জার্জিস সহ জেলা নেতারাও। রীতিমত মহিলারাও এদিন মাথায় চৌকিদারের টুপি পড়ে নাচতে থাকেন। এরপর বর্ধমানের কালীবাজারের তৃণমূল পার্টি অফিস থেকে মিছিল করে তাসাপার্টি নিয়ে হাজির হন তৃণমূল কংগ্রেসের এই কেন্দ্রের প্রার্থী মমতাজ সংঘমিতা এবং সুনীল মণ্ডল। মমতাজ সংঘমিতা জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তবের হাতে এবং সুনীল মণ্ডল অতিরিক্ত জেলাশাসক অরিন্দম নিয়োগীর হাতে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। যদিও এদিন শাসকদলের এই দুই প্রার্থীর মনোনয়ন পেশ করতে নির্দিষ্ট এলাকার ভেতরেই তৃণমূলের নেতারা রীতিমত বিনা বাধায় ঢুকে যান। রীতিমত হুড়োহুড়িও শুরু হয়। যা নিয়ে রীতিমত বিরক্ত বোধ করেন তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথও। খোদ অতিরিক্ত জেলাশাসকের চেম্বারে প্রার্থী সুনীল মণ্ডল ছাড়াও হাজির ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া, সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডু, কাটোয়ার বিধায়ক তথা পুরপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, বর্ধমান পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলার খোকন দাস, মেমারী বিধায়ক নার্গিস বেগম, মেমারীর প্রাক্তন বিধায়ক আবু হাসেম মণ্ডল, বর্ধমান জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ উত্তম সেনগুপ্ত প্রমুখরা। অথচ প্রশাসনিকভাবেই সমস্ত রাজনৈতিকদলকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল প্রার্থী ছাড়া মাত্র ৪জন মোট ৫জন ঢুকতে পারবেন মনোনয়ন কেন্দ্রে। বস্তুত, অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে আটকে দিলেও এদিন শাসকদলের নেতাদের আটকানোর কোনো সাহসই দেখান নি উপস্থিত পুলিশ কর্তারা। কার্যত তাঁরা অসহায় অবস্থায় দাঁড়িয়ে থেকেছেন। যা নিয়ে নির্বাচন বিধি ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছে বিরোধীরা। খোদ অতিরিক্ত জেলাশাসকের কিংবা জেলাশাসকেরঅফিস চত্বরেই এদিন তৃণমূলের ঝাঁক ঝাঁক নেতৃত্ব নিশ্চিন্তে ঢুকেছেন বেড়িয়েছেন। এদিকে, এদিন তৃণমূল প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র পেশের পাশাপাশি স্বপনবাবু জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করে জানিয়েছেন, বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী পরেশ চন্দ্র দাসের সমর্থনে এদিন বিজেপির মিছিলে অস্ত্র হাতে নিয়ে দাপাদাপি করেছে বিজেপি সমর্থকরা। এই ঘটনায় নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘিত হয়েছে। এব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবার জন্য তিনি জেলাশাসকের কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেছেন। স্বপনবাবু জানিয়েছেন, বিজেপির অস্ত্র মিছিলের ছবি তাঁরা জেলাশাসকের কাছে জমা দিয়েছেন। এদিকে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাপান উতোর শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। খোদ বিজেপির বর্ধমান পূর্বের প্রার্থী পরেশ চন্দ্র দাস অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অরিন্দম নিয়োগীর কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেবার পর তৃণমূলের আনা এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং মনগড়া অভিযোগ করা হয়েছে। পাল্টা পরেশবাবু এদিন এব্যাপারে তদন্তেরও দাবী করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তৃণমূলের পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে বুঝতে পেরেই এই ধরণের মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে।