E Purba Bardhaman

বর্ধমানের আদিবাসী ছাত্রী খুনে গ্রেপ্তার অজয় টুডুকে হেপাজতে নিল পুলিশ

Ajay Tudu arrested for murdering tribal girl in Burdwan

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমানের নান্দুড় ঝাপানতলা এলাকার আদিবাসী ছাত্রী প্রিয়াংকা হাঁসদাকে নৃশংস্যভাবে খুনের ঘটনায় তারই পূর্ব পরিচিতকে গ্রেপ্তার করল জেলা পুলিশের ‘সিট’। ধৃতের নাম অজয় টুডু। রীতিমতো ফাঁদ পেতে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া থেকে অজয় টুডুকে গ্রেপ্তার করে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের টিম। শনিবার জেলা পুলিশ সুপার আমনদীপ সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন, আদিবাসী ছাত্রী খুনে সন্দেহভাজন অজয় টুডুকে পাঁশকুড়া থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতের বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরাতে। এদিন সাংবাদিকদের সামনে মুখ ঢাকা অজয় টুডুকে হাজিরও করা হয়। এদিন তাকে পুলিশ সুপারের অফিসে হাজির করার সময় বারবার কান্নায় ভেঙে পরে অজয়। জেলা পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, প্রিয়াংকা হাঁসদার খুনিকে ধরতে প্রথমে ৯ জনের একটি সিট গঠন করে জেলা পুলিশ। পরে এই সংখ্যা বাড়িয়ে করা হয় ২১ জন। পুলিশ সূত্রে দাবি করা হয়েছে, ধৃত অজয় টুডু প্রাথমিকভাবে তাঁর অপরাধের কথা কবুল করেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় চার বছর ধরে ধৃতের সঙ্গে পরিচয় ছিল প্রিয়াঙ্কার। সোশ্যালমিডিয়ায় তাঁদের মধ্যে যোগাযোগ হয়েছিল। সম্প্রতি অজয় টুডু বেঙ্গালুরুতে একটি ওষুধ কোম্পানিতে মোটা বেতনের কাজ করত। সেই প্রিয়াংকাকে ব্যাঙ্গালুরুতে কাজ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেখানে নিয়ে গিয়েছিল। প্রিয়াঙ্কা সেখানে ৭ মাস ছিল। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রিয়াংকা হাঁসদার সঙ্গে অজয়ের ঘনিষ্ঠতা তখন থেকেই বাড়ে। প্রিয়াংকাকে বিয়েরও প্রস্তাব দেয় অজয়। গত ১২ আগস্ট প্রিয়াংকা বাড়ি ফিরে আসে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রিয়াংকাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলেও প্রিয়াংকার পরিবার অজয়ের আর্থিক অবস্থা ভাল নয় বলে এই বিয়েতে রাজী ছিল না। তা নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে মন কষাকষি চলছিল। পুলিশের দাবি, অজয় জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই সে প্রিয়াংকার জন্য কয়েক লক্ষ টাকা খরচও করে। বাড়ি ফিরে আসার পর অজয় বারবার প্রিয়াংকাকে ফোন করলেও সে ফোন তোলেনি। এরপরই জানা গেছে, ঘটনার দিন অজয় ট্রেনে গাংপুর স্টেশনে নামে। কিন্তু তখনও তাকে ফোনে পায়নি। শেষে সন্ধ্যেবেলায় তাকে ফোনে পেয়ে বাড়ির কাছে অজয় তার আসার কথা জানায়। এরপরই ফোন হাতে প্রিয়াংকা বাড়ির বাইরে আসে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এরপরই তাদের মধ্যে বচসাও হয়। এরপরই কলকাতা থেকে কিনে আনা ধারালো ছুরি দিয়ে প্রিয়াংকা খুনে করে প্রিয়াংকার মোবাইল ফোন নিয়ে সে পালিয়ে যায়। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এরপর থেকেই অজয় নিজেকে বাঁচাতে বারবার জায়গা বদল করতে থাকে। যেহেতু তার নিজের ফোন বন্ধ ছিল তাই তাকে ধরতে রীতিমতো বেগ পেতে হয় পুলিশকে। এরপর একাধিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে তাকে পাঁশকুড়ার একটি জায়গা থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন সিসি ক্যামেরার ফুটেজে ধৃতকে নান্দুড়ের রাস্তায় দেখা গিয়েছিল। প্রিয়াঙ্কার পরিজনরাও জানতেন, ওই যুবকের সঙ্গে তাঁদের বাড়ির মেয়ের যোগাযোগ ছিল। জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, অভিযুক্তকে ধরতে ৮ টা টিম কাজ চালাচ্ছিল। ফাঁদ পাতা হয়েছিল। পকেটের টাকা ফুরোতেই সেই ফাঁদে পা দিতেই আততায়ীকে ধরা গিয়েছে। উল্লেখ্য, প্রিয়াঙ্কার খুনিকে ধরার জন্যে জনজাতি সংগঠন টানা আন্দোলন করছিল। জনজাতিদের সঙ্গে অন্যান্য সংগঠনও প্রতিবাদে সরব হয়েছিল। গত রবিবার জনজাতিদের সংগঠন শক্তিগড়ে টানা পাঁচ ঘণ্টা দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করেছিল। সে দিনই পুলিশ জানিয়েছিল, ১০ দিনের মাথায় আততায়ীকে গ্রেফতার করা হবে। এদিকে, শুক্রবার দুপুরে হাইকোর্টের বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের ডিভিশন বেঞ্চে সিবিআই চেয়ে মামলা করেছেন প্রিয়াঙ্কার বাবা সুকান্ত হাঁসদা। বর্ধমান থানা মামলার যথাযথ তদন্ত করছে না। তাই নিহতের পরিবার সিবিআই তদন্ত চান। ডিভিশন বেঞ্চ মামলা দায়ের করার অনুমতি দিয়েছে। মঙ্গলবার মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। কিন্তু তার আগেই পুলিশ আততায়ীকে গ্রেফতার করে ফেলল।

Exit mobile version