জামালপুর (পূর্ব বর্ধমান) :- আদালতের বিচারাধীন মামলার বিচারের জন্যে এবার তৃণমূল অফিসেই সালিশি সভা ডাকার অভিযোগ এবং সালিশী সভায় হাজির না হওয়ায় এক বৃদ্ধ দম্পতি বাড়ি ছাড়া হয়ে রয়েছেন। মারধর করা হয়েছে বৃদ্ধ দম্পতির ছেলেকে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার কুবাজপুর গ্রামে। গোটা ঘটনায় চোপড়ার ছায়া এবার পূর্ব বর্ধমানে বলে সুর চড়িয়েছে বিরোধীরা। ইতিমধ্যে সুবিচার প্রার্থনা করে ওই বৃদ্ধ দম্পতি দ্বারস্থ হয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর। এমনকি তাঁদের উপর হওয়া হামলা ও আক্রমণের ঘটনা লিখিত ভাবে রাজ্য পুলিশের ডিজি, জেলার পুলিশ সুপার ও জেলাশাসককেও জানিয়েছেন। জানা গেছে, ২০১৮ সালে অভিযোগকারী সাহানারা বিবির ছেলে বসির আলির সঙ্গে বর্ধমান থানা এলাকার এক তরুণীর বিয়ে হয়। কিন্তু বিবাহিত জীবন সুখের হয় নি। এরপরই আদালতে মামলা হয়। সাহানারা বিবির অভিযোগ, আদালতে বিচারাধীন ওই মামলার বিচার এখনও হয়নি। কিন্তুর তারই মাঝে গত ১৩ জুন হঠাৎই চকদিঘী অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি আজাদ রহমানের সাগরেদরা তাঁর বাড়িতে হাজির হয়। তাঁদের জানানো হয়, ১৪ জুন তৃণমূল পার্টি অফিসে এব্যাপারে সালিশি সভা ডাকা হয়েছে। ওই সভায় হাজির থাকতে হবে। তারা জানিয়ে যায়, ওই সালিশি সভায় হাজির না হলে তাঁদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। এমনকি তাঁদের জীবনহানিরও শঙ্কা রয়েছে। সাহানারা বিবি জানিয়েছেন, এই হুমকি পাওয়ার পর ওইদিন সন্ধ্যায় তাঁর ছেলে বসির আলি জামালপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি জানিয়েছেন, ওইদিনের সালিশী সভায় তাঁরা কেউই যাননি। আর তাই ওইদিন রাতে লাঠি-সোটা ও অস্ত্রসস্ত্র-সহ তাঁদের বাড়িতে চড়াও হয় আজাদ রহমানের ১২ জন সাগরেদ-সহ আরো অনেকে। সাহানারা বিবি জানিয়েছেন, হামলাকারীরা বলে তারা শাসকের শাসন করতে এসেছে। এরপরই তাঁর ছেলে বসির আলিকে ব্যাপক মারধর করে। ছেলেকে বাঁচাতে গেলে তাঁদেরকেও মারধর করা হয়। জামালপুর থানার পুলিশ তাঁদেরকে উদ্ধার করে জামালপুর ব্লক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা করে জখম বসিরকে বর্ধমান হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সাহানারা বিবি জানিয়েছেন, এত ঘটনা সত্ত্বেও জামালপুর থানা কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় বাধ্য হয়ে প্রাণ বাঁচাতে তাঁরা বাড়ি ঘর-সহ সব ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। সাহানারা বিবির আবেদন, দ্রুত তাঁদের প্রশাসন নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করলে তাঁদের আর বাড়ি ফেরা হবে না। এব্যাপারে চকদিঘী অঞ্চল তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি শেখ আজাদ রহমান সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ। সাহানারা বিবিকে আমি চিনি না। আমি চিনি বসিরকে। এই বিষয়ে আমি কিছু জানি না। অঞ্চল পার্টি অফিসে আমি কোনও মীমাংসাও ডাকিনি। যেটুকু খবর আছে এটা কোর্টে মামলা চলছে। আর ১৪ তারিখে একটা গ্রাম্য বিবাদ হয়েছিল। মিথ্যা অভিযোগ। সালিশি সভার বিষয় আমি কিছু জানি না। আমি ডাকিও নি, জানিও না। এব্যাপারে সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির সহ-সভানেত্রী ভারতী ঘোষাল জানিয়েছেন, বিচারাধীন বিষয়ে কেউ সালিশি সভা ডাকতে পারে না। এটা অন্যায়। যায়নি বলে তাঁদের উপর যে অত্যাচার হচ্ছে আমরা সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিবাদ করছি। তৃণমূল আইনকে হাতে তুলে নিয়ে নিয়েছে। পুলিশ-প্রশাসনের একটা অংশ কার্যত শাসক শ্রেণীর পক্ষে কাজ করছে। আদালতে এখনও অনেক মানুষ বিচার পায়, তবু পশ্চিমবঙ্গে একটা আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়ে রয়েছে। বিজেপি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মৃত্যুঞ্জয় চন্দ জানিয়েছেন, এই অত্যাচার দেখে বোঝা যাচ্ছে বাংলার শাসক দল আইন ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থাকে নিজেদের হাতে তুলে নিতে চাইছে। এইভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার তীব্র বিরোধিতা করছি। এই বাংলার গণতন্ত্রের পক্ষে চরম লজ্জা। এই বাংলায় মহিলা-শিশু কেউ নিরাপদ নয়।