E Purba Bardhaman

বর্ধমান স্টেশনে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ২৯ বিজেপি সমর্থক

The arrestees were presented in court today in connection with the clash between the TMC and the BJP yesterday

গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান স্টেশন এলাকায় দখলদারিকে কেন্দ্র করে তৃণমূল ও বিজেপির সংঘের্ষর ঘটনায় ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিস। ধৃতদের মধ্যে ৪ জন মহিলাও রয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিস তাদের গ্রেপ্তার করে। ধৃতদের মধ্যে মামন সাহা নামে এক মহিলা অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছে। বুধবার ধৃত ২৮ জনকে বর্ধমান আদালতে পেশ করা হয়। মামনকে আদালতে পেশ করতে পারেনি পুলিস। ধৃতদের আদালতে পেশ করা নিয়ে বিতের্কর সৃষ্টি হয়। বেলা ৩টে নাগাদ ধৃতদের আদালতে নিয়ে আসে পুলিস। সিজেএম বিলম্বে ধৃতদের আদালতে পেশ করা নিয়ে তদন্তকারী অফিসারের ব্যাখ্যা চান। ব্যাখ্যা না মেলা পর্যন্ত সিজেএম আসামীদের গ্রহণ করতে রাজি হননি। তদন্তকারী অফিসার সঞ্জয় ওরাং ধৃতদের মেডিকেল পরীক্ষা করাতে হাসপাতালে দেরি হয়েছে বলে জানান। তাঁর ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হয়ে আসামীদের গ্রহণ করেন বিচারক। এদিন সকাল থেকেই আদালত চত্বর কার্যতঃ বিজেপির দখলে চলে যায়। বহু সংখ্যক বিজেপি কর্মী-সমর্থক আদালতে দলীয় পতাকা নিয়ে হাজির ছিলেন। বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের জয় শ্রীরাম ধ্বনিতে আদালত চত্বর মুখরিত হয়ে ওঠে। বেলা ৩টে নাগাদ ২টি প্রিজন ভ্যানে ধৃতদের আদালতে আনা হয়। বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা পুলিসের গাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখান। পুলিসের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেন তাঁরা। ধৃতদের মারধর করা নিয়ে পুলিসের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা। ধৃতদের দেখতে আদালতে আসা লোকজনও ভিড় জমান। আদালতের বারান্দায় থিকথিকে ভিড় লক্ষ্য করা যায়।  
তদন্তের প্রয়োজনে বিশ্বজিৎ সেন ওরফে খোকন, মিলন ব্যানার্জী ও বাবু ঘোষকে ১০ দিন পুলিসি হেফাজতে নেওয়ার জন্য আবেদন জানান তদন্তকারী অফিসার। সরকারি আইনজীবী নারদ কুমার ভূঁইঞা পুলিসি হেফাজতের পক্ষে জোরালো সওয়াল করেন। ধৃতদের আইনজীবী কমল দত্ত আদালতে বলেন, স্টেশন এলাকায় প্রতিদিন গড়ে ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা তোলা ওঠে। টোটো পিছু প্রতিবারে ১০ টাকা করে আদায় করা হয়। তোলার টাকা বিভিন্ন জায়গায় যায়। তোলাবাজি নিয়ে খোকন আপত্তি জানায়। তোলাবাজিতে সে বাধা দেয়। সেজন্য মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে তাকে এবং অন্যদের। পুলিস বোমাবাজি ও গুলি চলার কথা জানিয়েছে। কিন্তু, তাতে কেউ জখম হয়নি। পুলিস শাসকদলের হয়ে কাজ করেছে। গ্রেপ্তারের পর খোকনকে এবং মহিলাদের ব্যাপক মারধর করা হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যাওয়া পুলিসের মারধর সংক্রান্ত দু’টি ভিডিও বিচারকের কাছে দেখান ধৃতদের আইনজীবী। বিচারক খুঁটিয়ে সেই ছবি দেখেন। পুলিসের মারধর নিয়ে একটি পিটিশনও আদালতে জমা দেন ধৃতদের আইনজীবী। সওয়াল শুনে বিচারক তিনজনকে পুলিশি হেপাজতে, বাকিদের ২০ অগস্ট পর্যন্ত বিচারবিভাগীয় হেপাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
পুলিস ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল থেকেই স্টেশন এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। বিজেপি ও তৃণমূল উভয়পক্ষই লোক জড়ো করে আস্ফালন করতে থাকে। খবর পেয়ে বিশাল পুলিস বাহিনী সেখানে পৌঁছে উভয়পক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করে। বেলা ৩টে নাগাদ উত্তেজনা চরমে ওঠে। তিনকোনিয়া গুডস শেড রোড এলাকায় দু’টি বোমা পড়ে। পুলিসের দাবি, খোকনের নেতৃত্বে বিজেপির লোকজন তৃণমূল ট্রেড ইউনিয়নের অফিস দখল করতে যায়। এক তৃণমূল সমর্থকের দোকানে ভাঙচুর করা হয়। জিনিসপত্র লুটপাট করা হয়। পুলিসকে লক্ষ্য করে বোমা ছোঁড়া হয়। ভূতনাথ দাস নামে এক টোটো চালককে লক্ষ্য করে বিজেপির লোকজন বোমা ছোঁড়ে। বাড়ির মহিলাদের শ্লীলতাহানি পর্যন্ত করা হয়। এমনকি পুলিসকে লক্ষ্য করে গুলিও চালানো হয় বলে দাবি করে পুলিস। ঘটনার বিষয়ে প্রমোদ হরিজন পুলিসে অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে বেআইনি জমায়েত, মারধর, খুনের চেষ্টা, সরকারি কর্মচারীকে কাজে বাধা দেওয়া, কর্তব্যরত অবস্থায় হামলা চালানো, ভাঙচুর করা, বিস্ফোরক ও অস্ত্র আইনের ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিস।

Exit mobile version