শিঙা ফুঁকে যুদ্ধ ঘোষণা করে মনোনয়নপত্র দাখিল করলেন বর্ধমান পূর্বের বিজেপি প্রার্থী অসীম সরকার
admin
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বৃহস্পতিবার পূর্ব বর্ধমান জেলায় নির্বাচনী বিজ্ঞপ্তি জারি হতে না হতেই প্রথম দিনে মনোনয়নপত্র দাখিল করলেন বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অসীম কুমার সরকার। বর্ধমান পূর্বের রিটার্নিং অফিসার হিসাবে অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অমিয় দাস এদিন মনোনয়নপত্র জমা নিলেন। যদিও এদিন বর্ধমান পূর্বের বিজেপি প্রার্থী অসীম সরকারের কাগজপত্রে কিছু ত্রুটি থাকায় এদিন তিনি মনোনয়নপত্র দাখিল করলেও শুক্রবারের মধ্যে সংশোধিত কাগজপত্র তাঁকে জমা দিতে বলা হয়েছে। এদিন রীতিমতো বিশাল মিছিল করে বর্ধমান পূর্বের বিজেপি প্রার্থী অসীম সরকার আসেন মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে। এই ঘটনায় নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গ হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার দুপুরে রীতিমতো বাদ্যযন্ত্র সহকারে সুসজ্জিত শোভাযাত্রা করে বর্ধমানে জেলাশাসকের দপ্তরে মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে আসেন বর্ধমান পূর্বের বিজেপি প্রার্থী অসীম সরকার। যদিও এর মধ্যে অনেকেই ভিন জেলার বলে সমালোচনা শুরু হয়েছে। শহরের বীরহাটা ঘড়ি মোড় থেকে এই মিছিল আসার পথে কার্জন গেটের সামনে বিশ্ববাংলা লোগো দেওয়া ট্র্যাফিক আইল্যান্ডকে রীতিমতো নেচে নেচে বার কতক প্রদক্ষিণ করেন অসীম সরকার। মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষজন এদিন শিঙা ফুঁকে, ডঙ্কা বাজিয়ে কার্যত যুদ্ধের সূচনা করে দেন। কবিয়াল অসীমবাবু কখনও নেচে, কখনও মনোনয়ন নিয়ে কবিগান গেয়ে, তো কখনও আবার মাটিতে বসে পরে প্রণাম করে মনোনয়নপত্র জমা দিতে এলেন। যা দেখতে পথচলতি মানুষ থমকে দাঁড়িয়ে পড়েন। আগামী ১৩ মে চতুর্থ দফায় ভোটগ্রহণ বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রে। চতুর্থ দফায় ভোটের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার কাজ চলবে আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত। ২৬ এপ্রিল মনোনয়ন পরীক্ষা করে দেখা হবে এবং ২৯ এপ্রিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। অসীমবাবু এদিন বলেন, আমরা প্রথম দিনেই এলাম আমরা প্রথম হবো। এদিনই কালনায় অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের কর্মীসভা নিয়ে তিনি বলেন, আজকেই উনি কেন দিন করলেন। আজকে আমরা নমিনেশনপত্র জমা দেবো আর সেই দিনটাই উনি কেন বেছে নিলেন। এরমধ্যে কী কারণ আছে আপনারা বিশ্লেষণ করলে পেয়ে যাবেন। বিজেপিকে ভয় পেয়ে এই ধরনের মিটিং করতে হচ্ছে বলতেই হবে। এই রকম মিটিং করতে কখনও আসেন না তিনি। কবার আসেন দেখুন না। কেবল তো ভাইপো এসেছেন এরপর পিসিও আসবেন। সম্প্রতি দলের কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি চিঠি লিখে তাঁর সঙ্গে সমবেত হওয়ার আবেদন করেন। এব্যাপারে তিনি বলেন, আমি চিঠি লিখেছিলাম যদি কেউ মনের দুঃখ নিয়ে বসে থাকেন। এই চিঠিতে সবাই জেগে উঠেছেন। সম্প্রতি বিজেপি নেতা সন্তোষ রায় ফেসবুকে পোস্ট করে অসীম সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানান, ক্ষমতা থাকলে তিনি বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়ে লোকসভায় লড়ুন। আর এসম্পর্কে অসীম সরকার বলেন, নির্বাচনে এরকম কোনো নিয়ম নেই। তিনি যদি তৃণমূল করতেন আর বিজেপি প্রার্থী হতেন, তাহলে কথা থাকতো। কিন্তু তিনি তো বিজেপিরই প্রার্থী। বহিরাগত সম্পর্কে তিনি বলেন, জেলাসভাপতি সঙ্গেই আছেন। তিনি যদি বলতেন বহিরাগত মানছি না, তাহলে আমি এখানে আসতামই না। ডঙ্কা বাজানো নিয়ে তিনি বলেন, আমি সবই বাজাতে পারি। সনাতনী সংস্কৃতির যা আছে আমি সেসবই বাজাবার চেষ্টা করি। ভোটে ধর্ষকদের বিসর্জন দিতে পারি, গরু পাচারকারী, রেশন চোর, দুর্নীতিবাজ, চাকরি চোর এদের এবার আমরা আরব সাগরে বিসর্জন দেবো। তিনি বলেন, শর্মিলা সরকার মাকে প্রণাম করি। সে একজন মা তো। তবে আমি অবাক হয়ে গেছি উনি অদৃশ্য মনের রোগ সারেন কিন্তু দৃশ্যমান যে চোরের দল, ধর্ষকের দল উনি দেখতে পারেন না। এটাই দুঃখ। এইজন্য ওনার বিরুদ্ধে ভোটগুলো যাবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে এদিন অসীম সরকার বলেন, মুখ্যমন্ত্রী যে ভাষায় কথা বলেন তাতে ওনাকে মহিলা মস্তান না বলে পারা যায় না। উনি জিভ ছিড়ে নেওয়ার কথা বলেন, এটা মস্তান ছাড়া কেও বলতে পারে? এটা কোনও ভদ্রলোক বলেন? এটা মস্তানি ভাষা। এই রকম কিছু মস্তানি ভাষা আছে। তিনি বলেন, আমাদের কাছে কেনো মুসলিম ভোট আতঙ্কের কারণ হবে। মুসলিমরা এবার মনের আনন্দে বিজেপিকে ভোট দেবেন। ওরা বুঝেছে এই সিএএ-তে তাঁদের নাগরিকত্ব খর্ব হবে না। নাগরিকত্ব খর্ব হওয়া সম্পর্কে এতে একটা অক্ষর নেই। এতদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে মিথ্যে বলেছেন সেটা বুঝতে পেরেছেন। সিএএ লাগু হলো একজন মুসলিম ভাই কি বাসে, গাড়িতে আগুন দিয়েছেন? আর বোকা বানানো যাবে না। এবার মানুষ কিন্তু বুঝতে শিখেছেন। এবার ভোট হবে দুর্নীতি, চোর, ধর্ষণের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তরা বিজেপিতে নরেন্দ্র মোদীর সংস্পর্শে এসে শুদ্ধ হয়ে যায় এই মন্তব্য প্রসঙ্গে এদিন অসীম সরকার বলেন, যেমন রত্নাকর দস্যু নারদ এবং ব্রহ্মার সংস্পর্শে এসে বাল্মীকি হলেন। আমাদের মোদী তিনি কিন্তু সাধু মানুষ। চোরেদের আমরা আহ্বান করবো কেনো! চোর যদি বোঝে তিনি সাধুর পরশ পেয়ে ভালো হতে চান। ওরকম দরজা খোলা থাকে না। সাধুর দরবারে যে কেউ আসতে পারেন। তাঁর মানসিকতা পরিবর্তন যদি হয় সাধুর ছোঁয়ায় তবে তাঁর পরিবর্তন হয়। আমরা কখনও বলব না, আয় চোর, আয় চোর, আয় চোর।