বর্ধমান স্টেশনের নাম বদলে বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের নামে করার উদ্যোগ কেন্দ্রের
admin
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- ৭ বছর ধরে আবেদন নিবেদনের পর এবার বোধহয় দাবী মিটতে চলেছে বর্ধমানের বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্ত স্মৃতি রক্ষা কমিটির। ২০১২ সাল থেকে বর্ধমান স্টেশনের নাম বর্ধমানের খণ্ডঘোষের ওঁয়াড়ি গ্রামের সন্তান বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের নামে করার ব্যাপারে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন এই কমিটি। ওঁয়াড়ি গ্রামের বটুকেশ্বর দত্ত স্মৃতি রক্ষা কমিটির সম্পাদক মধুসূদন চন্দ জানিয়েছেন, ২০১২ সাল থেকেই বর্ধমান স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের নামে করার ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানানো হচ্ছিল। ২০১২ সালে ১২ মে ওঁয়াড়ি গ্রামে বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্ত ইতিহাস মেলা প্রাঙ্গণ থেকেই বটুকেশ্বর দত্ত স্মৃতি রক্ষার জন্য ৯ দফা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণে হাজির ছিলেন বটুকেশ্বর দত্তের মেয়ে ভারতী দত্ত বাগচী, ভগত সিং-এর ভাগ্নে জগমোহন সিংও। মধুসূদনবাবু জানিয়েছেন, গ্রামবাসী, ইতিহাসবিদ এবং বিপ্লবী পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বিভিন্ন প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা, সমালোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমে ৯ দফা যে দাবী সরকারের কাছে পেশ করার বিষয়টিতে সিদ্ধান্ত হয় তার মধ্যে অন্যতম ছিল বর্ধমান স্টেশনের নাম বটুকেশ্বর দত্তের নামে করা। এছাড়াও বটুকেশ্বর দত্তের পাশের যে বাড়িটিতে ভগত সিংকে নিয়ে তিনি আত্মগোপন করেছিলেন মাটির নিচের ঘরে সেই বাড়িটিকে হেরিটেজ ঘোষণা করাও ছিল এই দাবীর মধ্যে। মধুসূদনবাবু জানিয়েছেন, ১৯৯০ সাল থেকেই তাঁরা ওঁয়াড়ি গ্রামের সন্তান বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের জন্মভিটেকে সংরক্ষণ করা এবং সরকারী উদ্যোগে এক হেরিটেজ ঘোষণা, বটুকেশ্বর দত্তের নামে একটি মিউজিয়াম গড়ারও দাবী জানিয়ে আসছিলেন তাঁরা। অবশেষে ২০১৩ সালে হেরিটেজ কমিশন এটিকে হেরিটেজ বলে ঘোষণা করে। ওই বছরই রাজ্য সরকারের ট্যুরিজম দপ্তর কয়েক দফায় প্রায় ১ কোটি টাকা অনুমোদন করে। ইতিমধ্যেই বিপ্লবীর জন্মভিটে এবং মাটির দোতলা বাড়িকে সংরক্ষণ করা হয়েছে। করা হয়েছে মিউজিয়ামও। খুব শীঘ্রই কাজে হাত লাগানো হচ্ছে ভগত সিং-কে নিয়ে পাশের যে ঘোষবাড়ির মাটির নিচে লুকিয়ে ছিলেন সেটি সংরক্ষণের কাজ। দীর্ঘদিন ধরে ওঁয়াড়ি গ্রামের মানুষই বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের বাড়িটিকে আঁকড়ে ও আগলে রেখেছেন। তাঁরাই দফায় দফায় সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে গেছেন। মধূসূদনবাবু জানিয়েছে্ন, বর্ধমান ষ্টেশনের নাম বটুকেশ্বর দত্তের নামে করা হলে তাতে বর্ধমানেরই গর্ব হবে। তাঁদের দীর্ঘদিনের দাবী পূরণ হতে চলায় তাঁরা খুশী। যদিও নাম পরিবর্তনে না বর্ধমান ষ্টেশনের নিত্যযাত্রীদের অনেকেরই। রবিবারই বেশ কয়েকজন নিত্যযাত্রীর সঙ্গে কথা বলা হলে তাঁরা সকলেই নাম পরিবর্তন না করে বর্ধমান নাম রাখার পক্ষেই সওয়াল করেছেন। নিত্যযাত্রী নারায়ণ চক্রবর্তী, অরুপ ঘর, মানিক দত্ত প্রমুখরা জানিয়েছেন, বর্ধমান ষ্টেশনের একটা ঐতিহ্য আছে। অনেক ইতিহাসের সাক্ষী। সেই নাম পরিবর্তন হলে ইতিহাস শেষ হয়ে যাবে। তাই তাঁরা চান বর্ধমান ষ্টেশনের নাম বর্ধমানই থাকুক। কার্যত কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণার আগেই বর্ধমান ষ্টেশনের নাম পরিবর্তন নিয়ে শুরু হয়ে গেল চাপান উতোর। উল্লেখ্য, শনিবারই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই বর্ধমান ষ্টেশনের নাম বর্ধমানের খণ্ডঘোষের ওঁয়াড়ি গ্রামের সন্তান বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের নামে করার বিষয়ে ঘোষণা করেন। এব্যাপারে খুব শীঘ্রই কেন্দ্র সরকারীভাবে ঘোষণা করতে চলেছেন বলে তিনি জানান। শনিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই এবং মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ বটুকেশ্বর দত্তের ৫৪তম প্রয়াণ দিবসে উপলক্ষ্যে বিহারের পাটনার জক্কনপুরে বটুকেশ্বর দত্তের বাড়িতে তাঁর মেয়ে ভারতী দত্ত বাগচীর সঙ্গে দেখা করেন। সেই সময় বর্ধমান স্টেশনের নাম বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের নামে করার বিষয়টি জানান। উল্লেখ্য, স্বাধীনতা সংগ্রামে বটুকেশ্বর দত্ত এবং ভগত সিং বেশ কয়েকদিন বর্ধমানের খণ্ডঘোষ থানার ওঁয়াড়ি গ্রামে আত্মগোপন করে লুকিয়েছিলেন। ১৯১০ সালে ওঁয়াড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বটুকেশ্বর দত্ত। ১৯২৯ সালে ন্যাশনাল এ্যাসেম্বলীতে বোমা নিক্ষেপের ঘটনায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।