বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্রজিৎ সিং অহলুওয়ালিয়াকে হারাতে তাঁর পলায়নবৃত্তিকেই হাতিয়ার করেছে কংগ্রেস প্রার্থী রণজিত মুখোপাধ্যায়। মঙ্গলবারই বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে বিজেপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে এই ইস্যুতেই সুর চড়িয়েছিলেন কংগ্রেসের প্রার্থী রণজিত। উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরেই দুটি চোখেই তীব্র সমস্যার জেরে রীতিমত জেরবার রণজিত মুখোপাধ্যায়। মঙ্গলবার পর্যন্ত বর্ধমানে চিকিত্সা করিয়েও সুরাহা না হওয়ায় বুধবার সকালেই তিনি চিকিত্সার জন্য কলকাতায় রওনা হয়ে গেছেন। রণজিতবাবু তাঁর প্রচারে ইস্যু করেছেন বিজেপির প্রার্থী বিদায়ী সাংসদ তথা কেন্দ্রের রাষ্ট্রমন্ত্রী সুরেন্দ্রজিৎ সিং অহলুওয়ালিয়ার দার্জিলিং না যাওয়ার ঘটনাকে। ভোটারদের কাছে এই ঘটনাকেই তিনি তুলে ধরে বলছেন, যে এলাকা থেকে সাংসদ হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি সেই দার্জিলিং–এর মানুষ তাঁদের সমস্যা আর বিপদের সময় সাংসদকে পাশে পাননি। তিনি পালিয়ে বেড়িয়েছেন। ফলে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসনেও তিনি জয়ী হলে তিনিও এখানকার মানুষের সঙ্গে একই কাজ করবেন। প্রসঙ্গত, উল্লেখ্য, বুধবার বর্ধমান আদালতে আইনজীবী মহলে ভোটের প্রচারে এসে সুরেন্দ্রজিৎ সিং অহলুওয়ালিয়া বলেছেন, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র হিসাবে তিনি পড়াশোনা শুরু করলেও তিনি কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে কলকাতায় চলে যান। এদিন রণজিতবাবু জানিয়েছেন, এ থেকেই প্রমাণিত পলায়নবৃত্তি কাজ করছে তাঁর মধ্যে। ছাত্র জীবনে তিনি নিজের সুবিধার জন্য পালিয়ে গেছেন, সাংসদ জীবনেও তিনি দার্জিলিং থেকে পালিয়ে গেছেন। যদিও বুধবার খোদ সুরেন্দ্রজিৎ সিং অহলুওয়ালিয়া এর জবাব দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, দার্জিলিং থেকে আমি পালিয়ে যায়নি। সুনির্দিষ্ট কয়েকটি কারণের জন্যই আমি দার্জিলিং যাইনি। যার মধ্যে একটি কারণ ছিল গোর্খাল্যাণ্ডদের আন্দোলনের ইস্যু। আমি দার্জিলিং-এর লোক না। সেই সময় ওখানে গোর্খাল্যান্ডের আন্দোলন চলছিল। তখন আমার পক্ষে কী সম্ভব ছিল ওখানে গিয়ে ওদের পাশে দাঁড়ানো। মমতা দিদি বলছিলেন আগুনটা নাকি আমি জ্বালাচ্ছি। আমি ওখানে না থাকা অবস্থাতেই আমার দিকে আঙুল ওঠান হচ্ছিল। আমি ওখানে গেলে কোনও অঘটন ঘটলে আমাকে তারজন্য দায়ী করা হত। এই কারণেই সেই সময় দার্জিলিং-এ যাইনি। বুধবার নির্বাচনী প্রচারে বেড়িয়ে এভাবেই কংগ্রেসের আনা অভিযোগের জবাব দিয়েছেন বিজেপির বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসনের প্রার্থী সুরেন্দ্রজিৎ সিং অহলুওয়ালিয়া। তিনি জানিয়েছেন, যদি তিনি সেই সময় দার্জিলিং যেতেন এবং যেহেতু গোর্খাদের সঙ্গে একটি নির্বাচনী চুক্তি ছিল তাহলেও বিরোধীরা তাকে ছাড়ত না। এমনকি সেই সময় অন্য কোনো অঘটন ঘটে গেলে তাঁকেই দায়ী করা হত। তাই তিনি দলীয় নেতৃত্বকে জানিয়েই দার্জিলিং যাননি। বুধবার মনোনয়নপত্র স্ক্রুটিনির পর সুরেন্দ্রজিৎ সিং অহলুওয়ালিয়া তাঁর পুরনো বন্ধু উকিলদের সঙ্গে দেখা করতে বর্ধমান বার এ্যাসোসিয়েশনে হাজির হন। তাঁকে সমর্থনের জন্য আইনজীবীদের কাছে আবেদনও রাখেন। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র পেশের পর বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা আসনের কংগ্রেস প্রার্থী রণজিত মুখোপাধ্যায় জানান, বিজেপির প্রার্থী দার্জিলিং–এর সাংসদ ছিলেন। কিন্তু দার্জিলিং সমস্যার সময় তিনি দার্জিলিং যাননি। সেখানকার মানুষ তাঁকে বারবার ডেকেও পাননি। স্বাভাবিকভাবেই রণজিতবাবুর দাবী,বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি প্রার্থীও এখানকার ভোটারদের সঙ্গেও একই কাজ করবেন। কিন্তু ৩০দিন তিনিই থাকবেন ভোটারদের পাশে। বুধবার বর্ধমান আদালত চত্বরে আইনজীবীদের সঙ্গে দেখা করা এবং সংক্ষিপ্তভাবে তাঁদের কয়েকজন যাঁরা তাঁর ছাত্রজীবনের বন্ধু ছিলেন তাঁদের সঙ্গে খোসমেজাজে আড্ডাও দেন। বর্ধমান বার এ্যাসোসিয়েশনে আইনজীবীদের উপচে পড়া ভিড়েই তাঁকে অভ্যর্থনা জানান, বারের সাধারণ সম্পাদক সদন তা, সভাপতি উদয় মুখার্জ্জী। তাঁদের সঙ্গে আলোচনার সময় তিনি জানান, তিনিও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র হিসাবে ভর্তি হন। কিন্তু সেই সময় প্রদীপ ভট্টাচার্য এবং প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সীর দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে ছাত্রদের মধ্যে অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তার জন্য তিনি কলকাতায় চলে যান। পরবর্তীকালে তিনি যখন আইন ব্যবসা নিয়ে মনোনিবেশ করতে গেলেন সেই সময় তিনি সাংসদ হিসাবে দিল্লী চলে যান। আইন ব্যবসায় আর নামা হয়নি। এদিন বর্ধমান বার এ্যাসোসিয়েশনের আড্ডায় বর্ধমান বার এ্যাসোসিয়েশনের ১৯৯ বছরের ইতিহাস শুনে কৌশলী এবং অতি সাবধানী এস এস আলুওয়ালিয়া জানান, তিনি চান তাঁর জন্মভূমি বর্ধমান নিয়ে কিছু করতে। এখানেই আলাপ চারিতায় তিনি বলেন, তাঁর দুই মেয়ে (চিকিত্সক) এবং ৩ ছেলে (আই টি ইঞ্জিনিয়ার) কাউকেই তিনি রাজনীতিতে নিয়ে আসেননি। কারণ তাঁর সাদা পাঞ্জাবিতে এখনও কালো দাগ পড়েনি। কিন্তু রাজনীতি অত্যন্ত শক্ত বিষয়। অনেক আত্মত্যাগ করতে হয়। তিনি এদিন জানান, নির্বাচনে ফলাফল কি হবে তা জনগণের ওপরই নির্ভর করছে। তাঁরাই বিচার করবেন বিদায়ী সাংসদ তাঁদের জন্য কি করেছেন। উল্লেখ্য, এদিন বিজেপি প্রার্থীর এই প্রচারকে ঘিরে আইনজীবী মহলে এবং বিশেষত তরুণ আইনজীবী মহলে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। যদিও এদিন বামপন্থী আইনজীবী হিসাবে পরিচিত বিশ্বরঞ্জন ভট্টাচার্য এদিন বিজেপি প্রার্থীকে দেখে তাঁর কাছে মোদির ঘোষণা অনুসারে ১৫ লক্ষ টাকা দেবার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।