বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :-নির্বিঘ্নেই বৃহস্পতিবার ভোট গণনার কাজ শেষ হলেও বদল নয় বদলার রাস্তাতেই নামল দুই ঘাসফুল এবং গেরুয়া শিবির। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউআইটি ভবনে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসনের রাউণ্ডের গণনার ফল যখনই এসেছে তখনই দেখা গেছে বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্রজিৎ সিং অহলুবালিয়া এগিয়ে রয়েছেন। দুপুর গড়িয়ে বিকাল নামতেই এই ট্রেণ্ড গেরুয়া শিবিরে খুশীর হাওয়া ছড়িয়ে দিতে শুরু করে। শুরু হয় আবির নিয়ে অকাল দোলের উত্সব। শুরু হয়ে যায় বিজয় মিছিল। এরই মাঝে এই গণনা কেন্দ্রের বাইরে জিটিরোডে বিজেপির বিজয় মিছিলে পাথর ছোঁড়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূল সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এরপরই শুরু হয় দুপক্ষের মধ্যে ধুন্ধুমার কাণ্ড। সঙ্গে বিশাল পুলিশ বাহিনী লাঠিচার্জ করে ছত্রভঙ্গ করে দেয় তাদের। এরই পাশাপাশি খবর মেলে আউশগ্রামেও এক তৃণমূল সমর্থকের দোকান ভাঙচুর এবং তৃণমূল পার্টি অফিস ভাঙচুর চালিয়েছে বিজেপি সমর্থকরা। কার্যত, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই পূর্ব বর্ধমান জেলার দুটি আসনের ট্রেণ্ডই ফলাফলে পরিণত হল। গতবারের ব্যবধান কমিয়ে বর্ধমান পূর্ব লোকসভা আসনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী সুনীল মণ্ডল ৮০ হাজারেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করলেন বিজেপি প্রার্থী পরেশচন্দ্র দাসকে। অন্যদিকে, রীতিমত হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসনে জয় ছিনিয়ে নিলেন বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্রজিৎ সিং অহলুবালিয়া। তিনি ২ হাজার ৪৩৯ ভোটের ব্যবধানে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল কংগ্রেসের মমজাত সংঘমিতাকে পরাজিত করলেন। এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী পেয়েছেন ৫ লক্ষ ৯৮ হাজার ৩৭৬ টি ভোট, তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী পেয়ছেন ৫ লক্ষ ৯৫ হাজার ৯৩৭ টি ভোট। পূর্ব বর্ধমান জেলায় দুটি আসনেই রীতিমত হতাশ করল বাম শিবিরকে। কার্যত জনমানষ থেকে যে বামেরা ক্রমশই বিচ্ছিন্ন দ্বীপে চলে যাচ্ছেন ২০১৯ -এর লোকসভা ভোটে তাই প্রমাণ করল ভোটের ফলাফল। বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসনে সিপিআই (এম) প্রার্থী আভাষ রায় চৌধুরী পেলেন প্রায় ১লক্ষ ৬১ হাজার ৩২৯ ভোট। বর্ধমান পূর্ব লোকসভা আসনে সিপিআই (এম) প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র দাস পেয়েছেন ১ লক্ষ ৭৫ হাজার ৭৩৪ ভোট। কার্যত দুই বর্ধমানেই যে গেরুয়া ঝড় বয়ে গেছে ভোটের ফলাফলে স্পষ্ট। অপরদিকে, আরও একটি বিষয় রীতিমত আগামী দিনে সমস্ত রাজনৈতিক দলের কাছেই চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তা হল নোটার ভোট। বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসনে নোটায় ভোট পড়েছে ১৮ হাজার ৫৪০ টি এবং বর্ধমান পূর্ব লোকসভা আসনে নোটায় ভোট পড়েছে ১০ হাজার ৭৪২টি। ভোটের ফলাফলে বর্ধমান পূর্ব লোকসভা আসনের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী সুনীল মণ্ডল জানিয়েছেন, তিনি জিতবেন এটা জানাই ছিল। তবে ব্যবধান তিনি আরও বাড়ার আশা করেছিলেন। অন্যদিকে বর্ধমান পূর্বের সিপিআই (এম) প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র দাস জানিয়েছেন, তাঁরা মানুষের কাছে গেছেন কিন্তু সাম্প্রদায়িক শক্তির কারণে ভোটাররা হিন্দু ও মুসলমানে দুভাগে ভাগ হয়ে গেছেন। তাই তাঁরা সেই জায়গা দখল করতে পারেননি। সাংগঠনিকভাবে তাঁরা গোটা বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করবেন। অপরদিকে, বিজেপির প্রার্থী তথা ৫ লক্ষ ৫০ হাজার ২৫৩-এরও বেশি ভোটে দ্বিতীয়স্থান অধিকার করা পরেশচন্দ্র দাস জানিয়েছেন, কেন হার তা দলীয় স্তরে পর্যালোচনা করা হবে। তবে রায়না সহ বেশ কিছু এলাকায় তাঁদের সাংগঠনিক দুর্বলতা একটা কাজ করেছে। রায়না বিধানসভায় বহু বুথেই তাঁরা এজেণ্টে দিতে পারেননি। অন্যদিকে, বর্ধমান দুর্গাপুর লোকসভা আসনের জয়ী বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্রজিৎ সিং অহলুবালিয়া জানিয়েছেন, এটা মানুষের জয়। মানুষ মোদিজীকেই প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চেয়েছেন। যদিও এদিন পরাজিত তৃণমূল প্রার্থী মমতাজ সংঘমিতার কোনো বক্তব্য পাওয়া না গেলেও চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার কিছু সময় আগে থেকেই তৃনমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে গণনায় কারচুপির অভিযোগ তোলা হয়। মমতাজ সংঘমিতার নির্বাচনী এজেন্ট অরূপ দাসের নেতৃত্বে গণনা কেন্দ্রের মধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেস বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। জমা দেওয়া হয় লিখিত অভিযোগ। দাবি করা হয় পুনরায় গণনা করতে হবে। এদিকে নির্দিষ্ট সময়ে জয়ের শংসাপত্র হাতে পেয়ে বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্রজিৎ সিং অহলুবালিয়া রাত ১০ টা ২২ মিনিটে গণনা কেন্দ্র ছাড়েন। অন্যদিকে, রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি দেবু টুডুর নেতৃত্বে গণনা কেন্দ্রের বাইরে তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থকেরা জি টি রোডে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁদের দাবী, গণনায় কারচুপি হয়েছে। পুনরায় গণনা করতে হবে।