বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- দুর্গাপুজো নিয়ে বিজেপি-তৃণমূল তরজার মাঝেই বর্ধমানেও সরাসরি একটি পুজো মণ্ডপের দায়িত্ব নিলেন বিজেপির নেতা তথা বিজেপির যুবমোর্চার প্রাক্তন জেলা সভাপতি শ্যামল রায়। বর্ধমান শহরের ঘোড়দৌড়চটি সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির সভাপতি করা হয়েছে শ্যামল রায়কে। যদিও পূজো কমিটির সদস্যরা সরাসরি স্বীকার করেননি এই পূজো বিজেপির পুজো। উল্লেখ্যনীয়, ঘোড়দৌড়চটির এই পুজো প্যাণ্ডেল যেখানে হচ্ছে ঠিক তার উল্টোদিকেই রয়েছে বিজেপির বর্তমান জেলা অফিস তথা আগামী দিনের জোনাল অফিস। শ্যামল রায় বর্ধমান শহরে বিজেপির ডাকাবুকো নেতা হিসাবেই পরিচিত। স্বাভাবিকভাবেই পুজো কমিটির সভাপতি হিসাবে তাঁকে নেওয়ায় গোটা শহর জুড়েই এই পুজোকে ঘিরে চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। যদিও এর মধ্যে কোনো অন্যায় দেখছেন না পুজোর কমিটির সদস্যরা। কেউ কেউ সরাসরিই জানিয়েছেন, বিজেপি হলে কি পুজো কমিটিতে থাকতে পারবে না? এমন কোনো নিয়ম আছে নাকি? রবিবার বর্ধমান শহরের ঘোড়দৌড় চটি সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির পক্ষ থেকে ঘটা করে এব্যাপারে সাংবাদিক বৈঠকও করা হয়েছে। উল্লেখ্য, বর্ধমান শহরে ঘোড়দৌড় চটি এলাকার সর্বমিলন সংঘের পুজো বিগ বাজেটের পুজো হিসাবেই পরিচিত। থিমের পুজোয় গত কয়েকবছর ধরে এই পুজো কমিটি নজর কেড়েছে। এবার সেই পুজো কমিটির দায়িত্ব থেকে সরে গেল সর্বমিলন সংঘ। আর নতুন করে ঘোড়দৌড়চটি সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির নামে এই পুজোর দায়িত্বে এলেন বিজেপির যুবমোর্চার প্রাক্তন জেলা সভাপতি শ্যামল রায়। শ্যামলবাবু জানিয়েছেন, এলাকার মানুষ চেয়েছেন তাই তিনি পুজোর দায়িত্ব নিয়েছেন। এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা তথা পুজো কমিটির অন্যতম সদস্য ডা. ভীষ্মদেব সাউ জানিয়েছেন, ১৯৬৫ সালে ঘোড়দৌড় চটি এলাকার কয়েকজন কোল্ড স্টোরেজের মালিক এবং স্থানীয় মানুষজন এই পুজোর সূচনা করেন। সম্প্রতি এই পুজো উদ্যোক্তাদের প্রবীণ সদস্য শ্যামাপদ পাল প্রয়াত হয়েছেন। ভীষ্মদেববাবু জানিয়েছেন, বেশ কয়েকবছর ধরে পুজো চলার পর ১৯৭৭ সাল নাগাদ কোল্ড স্টোরেজের মালিকরা পুজোর দায়িত্ব ছেড়ে দেন। কিন্তু এলাকার মানুষ এগিয়ে আসেন, তাঁরা জারী রাখেন পুজো। এরপর ৯০-এর দশকে সর্বমিলন সংঘের নামে পুজো চলতে থাকে। সম্প্রতি জিটিরোডের সম্প্রসারণের জেরে পুজোর জায়গাও কমে যায়। ভীষ্মদেববাবু জানিয়েছেন, মাঝখানে ৩টে বছর ঘোড়দৌড়চটি মোড় থেকে পুজোকে সরিয়ে ওলাইচণ্ডিতলা এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ফের ফিরিয়ে আনা হয় ঘোড়দৌড়চটি এলাকায়। কিন্তু এবার সর্বমিলন সংঘ পুজোর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু এলাকার মানুষ চান দীর্ঘদিনের এই পুজো কোনোভাবেই যাতে বন্ধ না হয়। তাই এবারে তৈরী করা হয়েছে নতুন কমিটি। যার সভাপতি বিজেপি নেতা শ্যামল রায়। সম্পাদক পদে রয়েছেন অসীমরঞ্জন হাটি এবং গৌতম বিশ্বাস। অসীমবাবু জানিয়েছেন, এই পুজো বন্ধ হলে এলাকার মানুষের আবেগে বড় ধাক্কা লাগবে। এলাকার মানুষজন চেয়েছেন, এই এলাকার পুজো বন্ধ হলে এলাকার মানুষকে অনেক দূরে পুজো দিতে যেতে হবে। তাই যে কোনো মূল্যেই তাঁরা পুজো চালু রাখতে চান। তাই নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। জানা গেছে, ঘোড়দৌড়চটির এই পুজোকে ঘিরে ইতিমধ্যেই উত্তেজনা ছড়িয়েছে। পুজোর কমিটির একাংশ দাবী করেছেন, এই পুজো যাতে না হয় সেজন্য একটি অংশ থেকে লাগাতার অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। কার্যত সেইসব বাধা দূর করে সুষ্ঠভাবে পুজো করতেই বিজেপির নেতা শ্যামল রায়কে পুজোর দায়িত্বে নিয়ে আসা হয়েছে। অসীমবাবু জানিয়েছেন, শ্যামলবাবুকে তাঁরাই দায়িত্ব দিয়েছেন পুজো যাতে সুষ্ঠভাবে হয়। এজন্য কেউ রাজনীতির রং দেখতেই পারেন। কিন্তু পুজো পুজোই। তার মধ্যে কোনো রাজনীতি নেই। শ্যামলবাবু জানিয়েছেন, এই পুজোর বাজেট এবার প্রায় ১২ লক্ষ টাকা। পুজোর থিম সেভ ট্রি, সেব আর্থ – আর হব না অবুঝ, চলো বাঁচাই সবুজ। তিনি জানিয়েছেন, মণ্ডপ গড়ছেন পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার যমুনা ডেকরেটর। আলোকসজ্জায় বর্ধমানের সেন ইলেকট্রনিক্স এবং মূর্তি গড়ছেন বর্ধমানের ওড়গ্রামের শিল্পী কানাইরঞ্জন পাল। তিনি জানিয়েছেন, গোটা মণ্ডপটাই তৈরী করা হচ্ছে পরিবেশবান্ধব জিনিসপত্র দিয়ে।