বিপুন ভট্টাচার্য, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বিজেপির ডাকা বাংলা বন্ধে বুধবার সকাল থেকে বিজেপি সমর্থকরা জায়গায় জায়গায় বন্ধ করার চেষ্টা করলেও কার্যত গোটা পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়েই পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকল অন্যান্যদিনের মতই। তারই মাঝে জোর করে বাস চলাচল বন্ধ করার চেষ্টা, রেল লাইন অবরোধ, রাস্তা অবরোধ, বাজার বন্ধ করার চেষ্টা প্রভৃতির দায়ে গোটা জেলায় প্রায় শতাধিক বিজেপি কর্মীকে পুলিশ আটক ও গ্রেফতার করেছে। এদের মধ্যে রয়েছেন বিজেপির বর্ধমান জেলার যুবমোর্চার সভাপতি শ্যামল রায়ও। এদিন সকালে ভাতার বাজারে বর্ধমান -কাটোয়া রোড অবরোধ করার সময় ভাতার থানার পুলিশ ৯জনকে গ্রেপ্তার করে। বর্ধমান শহরের বীরহাটায় জোর করে বাস চলাচল বন্ধ করার চেষ্টার অভিযোগে যুবমোর্চার জেলা সভাপতি শ্যামল রায় সহ আরও একজন বিজেপি নেতাকে পুলিশ লাঠিপেটা করে গ্রেপ্তার করে। এদিন পালসিটের কাছে ২নং জাতীয় সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করে বিজেপি সমর্থকরা। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ গিয়ে তাদের সরিয়ে দেয়। শক্তিগড় এবং দেবীপুর ষ্টেশনেও মিনিটখানেকের জন্য রেলপথ অবরোধ করে বিজেপি সমর্থকরা। কালনার নাদনঘাট থানার ভাণ্ডারটিকুরী ষ্টেশনে এবং এসটিকেকে রোড অবরোধ করে বিজেপি সমর্থকরা। জেলা পুলিশের এক মুখপাত্র এদিন জানিয়েছেন, গোটা জেলা জুড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে পুলিশ শতাধিক বিজেপি কর্মীকে পুলিশ আটক করেছে। বর্ধমান শহরে বাজার দোকান খোলা। বাস চলেছে স্বাভাবিকভাবেই । যদিও যাত্রী সংখ্যা ছিল খুবই কম। যাত্রী না হওয়ায় বাসস্ট্যান্ড থেকে কিছু বাস ছাড়েনি। স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মত। বিজেপির জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দী জানিয়েছেন, এদিন সকাল থেকেই বিজেপির জেলা অফিস ঘেরাও করে রাখে তৃণমূল সমর্থকরা। খবর পেয়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে হাজির হয়। তৃণমূলের কথায় পুলিশ তাদের কয়েকজন সমর্থককে গ্রেপ্তার করেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ জানিয়েছেন, বনধ পুরোপুরি ব্যর্থ। মানুষ অন্যান্যদিনের মতই কাজ করেছে। মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে এই বনধকে। জেলা শাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, এদিন হাজিরার সংখ্যা ছিল প্রায় ৯৯.৫ শতাংশ। এদিকে, এরই মাঝে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের দূরশিক্ষা বিভাগের বাংলা ষষ্ঠপত্রের পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেও কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সিদ্ধান্ত বদল করে বুধবার সেই পরীক্ষা গ্রহণ করাকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়ায়। ছাত্রছাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, বনধের জন্য গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দূরশিক্ষা বিভাগের বাংলা ষষ্ঠপত্রের পরীক্ষা সহ গ্রাজুয়েশনের ৫টি প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষাও স্থগিত ঘোষণা করেন। স্বাভাবিকভাবেই ছাত্রছাত্রীরা সেভাবেই প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু আচমকাই সেই সিদ্ধান্ত বদল করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানান, যথারীতি পূর্বের সিদ্ধান্ত ও সুচী অনুযায়ীই ওই বিষয়গুলির পরীক্ষা নেওয়া হবে। এই ঘটনায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন ছাত্রছাত্রীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের তুঘলকি কাজের তাঁরা তীব্র প্রতিবাদ করেন। এসএফআই-এর জেলা সম্পাদক অনির্বাণ রায় চৌধুরী জানিয়েছেন, এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধিকার ভঙ্গ হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নড়বড়ে প্রশাসনই ফুটে উঠেছে। তিনি দাবী করেছেন যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষা দিতে পারলেন না তাদের দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। এব্যাপারে উপাচার্য নিমাই সাহা জানিয়েছেন, কোথাও কোনো অসুবিধা হয়নি। সমস্ত ছাত্রছাত্রীই পরীক্ষা দিচ্ছেন। যাঁরা অনুপস্থিত থাকবেন তাঁদের বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন।