বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :-কলকাতার এন আর এস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারদের ওপর হামলার ঘটনায় গোটা রাজ্যের সমস্ত মেডিকেল কলেজের সঙ্গে পূর্ব বর্ধমান জেলার বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখালেন জুনিয়র ডাক্তার এবং ইন্টার্নরা। এদিন সকাল থেকেই জুনিয়র ডাক্তারদের এই কর্মবিরতি এবং বিক্ষোভের জেরে হাসপাতালের চিকিৎসার পরিবেশ কার্যত লাঠে ওঠে। রোগীরা আতংকে হাসপাতাল থেকে রোগীদের বার করে নিয়ে যেতে শুরু করেন। রোগীপক্ষের অভিযোগ, কর্মবিরতি এবং বিক্ষোভের জেরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের গেট আটকে দেওয়া হয়। রোগীদের ভর্তি বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি ভেতর থেকে রোগীদের বাইরেও বার করতে পারা যায়নি বলে অভিযোগ করেছেন রোগীপক্ষের লোকজন। এদিকে, মঙ্গলবার সকাল থেকেই বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারদের এই আচমকা কর্মবিরতির জেরে রোগী পক্ষের লোকজন রীতিমত ছুটোছুটি শুরু করে দেন। সরাসরি তাঁরা বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সুপার ডা. উত্পল দাঁ–এর কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করতে থাকেন – তাঁদের রোগীদের কি হবে? ডাক্তারদের কর্মবিরতির জেরে কি কোনো চিকিত্সাই পাবেন না রোগীরা? উল্লেখ্য, বর্ধমান এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল পূর্ব বর্ধমান জেলা ছাড়াও পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ জেলাও। রেফারেল হাসপাতাল হওয়ায় ওই সমস্ত পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেও প্রতিদিন শয়ে শয়ে রোগীরা আসেন চিকিত্সা করাতে। স্বাভাবিকভাবেই বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তারদের এই কর্মবিরতির খবরে রীতি্মত উত্কণ্ঠার মধ্যে পড়েন রোগীপক্ষের পরিবারের লোকজন। ঘন ঘন তাঁরা ফোন করে পরিস্থিতি জানতে থাকেন। এদিকে, রোগীপক্ষের এই উত্কণ্ঠার বিষয়ে হাসপাতাল সুপার জানিয়েছেন, তাঁরা চেষ্টা করছেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার। জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির জেরে সিনিয়র ডাক্তারদের দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেবার চেষ্টা করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রায় ৫০০–রও বেশি জুনিয়র ডাক্তার তথা ইন্টার্ণরা এদিন নিরাপত্তার দাবীতে আন্দোলনে নামায় রীতিমত আলোড়ন সৃষ্টি হয় রোগী মহলে।অপরদিকে, এরই পাশাপাশি ডাক্তারদের এভাবে আচমকাই সমবেতভাবে আন্দোলনে নামাকে মোটেও ভাল চোখে দেখছেন না সাধারণ মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, কোথাও কিছু ঘটলেই জুনিয়র ডাক্তারদের এই কর্মবিরতির রেওয়াজ বন্ধ করা প্রয়োজন। একদিকে যেমন তাঁদের ওপর হেনস্থার ঘটনাও বন্ধ করা দরকার তেমনি ধর্মঘটের নামে সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলাও বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। যেহেতু হাসপাতালে সাধারণ মানুষ আসেন বাঁচতে। কিন্তু ডাক্তারদের কর্মবিরতির জেরে যদি কোনো রোগী সঠিক চিকিত্সা না হয় এবং তিনি মারা যান – তার দায় কে নেবে। উল্লেখ্য, এর আগেও বহুবার এই জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি হয়েছে। কিন্তু সরকারপক্ষ তাঁদের আন্দোলন থেকে সরে যাবার কড়া নির্দেশ বা শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নিতে না পারায় অত্যন্ত সহজ হয়ে উঠেছে এই আন্দোলন কর্মসুচী। অপরদিকে, মঙ্গলবার সকাল থেকেই বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের নামে জরুরী বিভাগের গেট বন্ধ করে দেবার ঘটনা এদিন রাতেও অব্যাহত থাকল। এদিন সন্ধ্যা থেকে ফের জরুরী বিভাগের গেট আটকে বিক্ষোভ চলতে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই গোটা হাসপাতাল জুড়েই চিকিত্সা পরিষেবা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন উঠে গেছে। আশংকা করা হচ্ছে, মঙ্গলবার রাতভর এই আন্দোলন চলতে থাকে বড় ধরণের বিপর্যয় ঘটলেও আশ্চর্য্য হবার মত কিছু থাকবে না। এদিকে, বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৃণমূল ছাত্রপরিষদ ইউনিটের নাম ব্যবহার করে চলা এই ধরণের আন্দোলন নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।