বিপুন ভট্টাচার্য, আউগ্রাম (পূর্ব বর্ধমান) :- এ যেন সেই প্রাচীন গুরুগৃহের পাঠশালা। খোকন তুমি পড়া করো নাই কেন? নবীন তুমি ভাল করিয়া মুখস্থ করোর মতই চিত্র ধরা পড়ল রবিবার রাজ্যের বিতর্কিত তৃণমূল নেতা তথা বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের রাজনৈতিক কর্মী সম্মলনে। রবিবার পূর্ব বর্ধমানের আউগ্রামের ১ ও ২ ব্লক এবং গুসকরা শহর কর্মীদের নিয়ে দুটি দফায় এই কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যার প্রধান চরিত্র অনুব্রত মণ্ডলই। আউশগ্রাম ২এর অভিরামপুরের সভায় গিয়ে ১৩৪টা বুথের তালিকা নিয়ে বসলেন তিনি। আউশগ্রাম ২এর মোট ভোটার ১ লক্ষ ১৫ হাজার ৭৩৭টি। গুরুগৃহের পাঠশালার মতই তাঁর সামনে দলীয় কর্মী–নেতারা। ডেকে পাঠালেন এই ব্লকের ৭টি বুথের অঞ্চল সভাপতিদের। কারণ এই ৭টি বুথেই তৃণমূল কংগ্রেস গত নির্বাচনে হেরে বসে আছে। বুথ সভাপতি থেকে অঞ্চল সভাপতিদের কাছে রীতিমত কৈফিয়ত তলব করলেন – কেন হার? এবার কি হবে? এবার কত ভোটে লিড হবে? একদিকে প্রশ্ন আর তার উত্তর রীতিমত খাতায় কলমে লিপিবদ্ধ করলেন বীরভূম জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সহ সভাপতি তথা অনুব্রত মণ্ডলের ছায়াসঙ্গী অভিজিত সিংহ। গুরুমশাই অনুব্রত মণ্ডল সাফ নিদান দিলেন জিততে না পারলে দল থেকে তাড়ানোই নয়, শাস্তির মুখে পড়তে হবে তাঁদের। এরই মাঝে অবোধ বালকের মত একজন জানালেন, দাদা আপনি প্রশাসনটাকে সামলান – আমরা লিড দিয়ে দেবো। হঠাতই এই আব্দারে লজ্জিত অনুব্রতের জবাব – ওরকম বলতে নেই। যা করার আমি করবো। অমরপুর, রামনগর, ভেদিয়া, দেবশালা, কোটা, ভাল্কি, এড়াল প্রভৃতি সমস্ত অঞ্চলের সভাপতিদেরই এদিন মঞ্চে ডেকে নিয়ে এসে তিনি জানিয়ে দিলেন ডু আর ডাই। এখানেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অনুব্রত মণ্ডল জানিয়ে দিলেন বাম–কংগ্রেস জোট হলে তাতে কোনো ক্ষতি হবে না তৃণমূলের। বাম–কংগ্রেস জোট হলে তৃণমূল কংগ্রেসের কোনো ভোট কমবে কিনা জানতে চাইলে অনুব্রত জানান, ২০১৬ সালেও তো ওরা জোট করেছিল তাতে কি হয়েছে? তিনি জানিয়েছেন এই জোট হলে তৃণমূলের কোনো ক্ষতিই হবে না, বরং ৪২টি আসনেই তৃণমূল ব্যাপক ভোটে জয় পাবে। শোভন, বৈশাখীদের বিজেপিদের যাওয়া নিয়ে অনুব্রত কটাক্ষ করে বলেছেন ভালই হয়েছে। দুষ্ট গরুর থেকে শূন্য গোয়াল ভাল। গত নির্বাচনে অনুব্রতবাবুকে নজরবন্দী করে রাখার ঘটনায় তিনি এদিন জানিয়ে যান,ভগবান ছাড়া তাঁকে কেউ আটকে রাখতে পারবে না। প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশন আমেরিকা থেকেও ফোর্স নিয়ে আসতে পারেন। অভিরামপুরের সভার পর গুসকরার সভাতেও সেই একই পাঠশালার চেহারা। লোকাকীর্ণ সভায় রীতিমত ধমক চমক –সবই দিলেন। নিজের নিজের বুথে জিততে না পারলে বেতের আঘাতের মতই যেমন তাদের দল থেকে তাড়িয়ে দেবার হুমকি দিলেন তেমনি জিততে পারলে পুরষ্কারেরও ঘোষণা করে জানিয়ে দিলেন তিনি প্রকৃতই গুরুমশাই। এদিন তাঁর সঙ্গে ছিলেন আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী তথা প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক অসিত মাল, বীরভূম জেলা সহ সভাপতি অভিজিত সিংহ, আউশগ্রামের বিধায়ক অভেদানন্দ থাণ্ডার, প্রাক্তন বিধায়ক গদাধর হাজরা, জেলা পরিষদের সদস্য কাকলী রাজা, ব্লক সভাপতি রামকৃষ্ণ ঘোষ, সালেক রহমান ওরফে টগর প্রমুখরাও।