E Purba Bardhaman

বর্ধমান টাউন হলে শুরু হলো লিটল ম্যাগাজিন মেলা, চলবে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত

Burdwan Little Magazine Fair inaugurated at Burdwan Town Hall on Friday, will continue till November 24

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- শুক্রবার থেকে শুরু হলো ‘বর্ধমান লিটল ম্যাগাজিন মেলা ২০২৪’। বর্ধমান টাউন হল প্রাঙ্গণে ৩ দিন ধরে চলবে বর্ধমান সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র আয়োজিত এই মেলা। এদিন মেলার উদ্বোধন করেন ‘এবং মুশায়েরা’ পত্রিকার সম্পাদক সুবল সামন্ত। উপস্থিত ছিলেন বর্ধমান পৌরসভার চেয়ারম্যান পরেশচন্দ্র সরকার, বর্ধমান সদর উত্তরের মহকুমা শাসক তীর্থংকর বিশ্বাস, বর্ধমান সদর দক্ষিণের মহকুমা শাসক বুদ্ধদেব পান, পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের উপ-সচিব কিশোর কুমার বিশ্বাস-সহ সাহিত্যপ্রেমী মানুষজন। বর্ধমান সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের সহযোগী সম্পাদক সুকান্ত দে ও মানব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এবারের মেলায় ১০০ টি টেবিল রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তের পাশাপাশি ত্রিপুরা থেকেও পত্র-পত্রিকা-বই নিয়ে এই মেলায় হাজির হয়েছেন লেখক, সম্পাদক, প্রকাশকেরা। মেলায় বিভিন্ন পত্রপত্রিকার স্টলের পাশাপাশি প্রতিদিনই থাকছে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা, গান, কবিতা। থাকছে চিত্রশিল্প, ফটোগ্রাফি ও দুষ্প্রাপ্য পত্রপত্রিকার প্রদর্শনী। দুষ্প্রাপ্য পত্রপত্রিকার প্রদর্শনীর তালিকায় রয়েছে শক্তি চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত একমাত্র পত্রিকা ‘কবিতা সাপ্তাহিকী’-র প্রথম সংখ্যা; প্রমথ চৌধুরীর সবুজ পত্র; বঙ্কিমচন্দ্রের বঙ্গদর্শন; উমেশচন্দ্র দত্তের বামাবোধিনী; দেবেন্দ্রনাথ, ঈশ্বরচন্দ্র, অক্ষয় দত্ত এবং রাজনারায়ণ বসুর তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা। এছাড়াও থাকছে তালপাতার পুঁথি। দুপুর ২ টো থেকে রাত সাড়ে ৮ টা পর্যন্ত চলবে এই মেলা। মেলার দিনগুলিতে বেশ কয়েকটি বই ও পত্রিকা প্রকাশ হবে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। সুকান্ত দে জানিয়েছেন, বর্ধমান পৌরসভার সহযোগিতায় বর্ধমান সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র আয়োজিত সপ্তম বর্ষের এই মেলার প্রথম দিন সব্যসাচী সেন সম্পাদিত কারুবাসনা পত্রিকাকে আলোক সরকার স্মৃতি সম্মাননা দেওয়া হয়েছে। জ্যোতির্ময় সেনগুপ্ত পরিচালিত গুয়াহাটির নর্থ ইস্ট লিটল ম্যাগাজিন স্টাডি অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারকে দেওয়া হয়েছে বর্ধমান লিটল ম্যাগাজিন মেলা বিশেষ সম্মাননা। মেলার দ্বিতীয় দিন শনিবার সুমিতা চক্রবর্তীকে দেওয়া হবে সুব্রত স্মৃতি সম্মাননা।
এই মেলার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বর্ধমান সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের সভাপতি বিমলানন্দ রায় ও সম্পাদক রাজেশ হালদার জানিয়েছেন, লিটল ম্যাগাজিন আদতে মানুষকে তার অস্তিত্বটা বুঝতে শেখায়। আমাদের শিক্ষার লক্ষ্য ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা ও আমাদের পূর্বপুরুষেরা এই ধারা কেন তৈরি করেছিলেন আর কেনই বা তা আমাদের ধরে থাকতে হবে সেই ভাবনাটা মানুষের মধ্যে জাগানো। সেই মানুষ ও তাঁদের মনে রাখার মতো কাজগুলোকে তুলে ধরা। শিখতে চাওয়া, জানতে চাওয়া এবং সৃজনশীল মানুষদের পরস্পরের সঙ্গে পরিচয় ঘটানো। পরস্পরকে ঋদ্ধ করার একটা ভূমি তৈরি করা। নতুন প্রজন্ম ও প্রথাগত শিক্ষা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতার ভেতর থেকে যাতে বিশ্বদর্শন করতে পারে তার সুযোগ তৈরি। নিজেদের খরচে যারা এটি বছরের পর বছর করে যাচ্ছেন তাঁদের টিকে থাকার জন্য, বিপণনের জন্য, সেসবের কথা মানুষকে জানানো ও মানুষের হাতে সেসব পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা। এসবের পাশাপাশি লিটল ম্যাগাজিন তার উদ্দেশ্য থেকে সরে যাচ্ছে কিনা বা তাদের আত্মসমালোচনার একটা জায়গা তৈরি করাও এই ধরনের মেলা করা উদ্দেশ্য। মানব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, লিটল ম্যাগাজিনের সম্পর্কে পড়ুয়াদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করতে এবং লিটল ম্যাগাজিন মেলার প্রচারে তাঁরা বর্ধমান শহরের ৩ টি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনা সভা করেছেন। ‘বিদ্যা চর্চার নানা খোঁজ ও লিটল ম্যাগাজিন’ শীর্ষক এই আলোচনা সভাগুলি হয়েছে বর্ধমান রাজ কলেজ, বিবেকানন্দ মহাবিদ্যালয়, মহারাজাধিরাজ উদয়চাঁদ মহিলা কলেজ এবং বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। বিমলানন্দ রায় জানিয়েছেন, লিটল ম্যাগাজিনের প্রচার ও প্রসারে আয়োজিত এই মেলায় লাগেনা কোনও স্টল ভাড়া, এমনকি মেলায় অংশ নেওয়া বেশ কিছু লিটল ম্যাগাজিনের প্রতিনিধিদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করে থাকে মেলা কমিটি। তবে এবছর তাঁদের কিছুটা আক্ষেপ থেকে গেছে বাংলাদেশ তাঁদের মেলায় অংশ নিতে না পারায়। রাজেশ দে জানিয়েছেন, তাঁদের মেলার ট্যাগ লাইন “এপার বাংলা ওপার বাংলা অপার বাংলার মেলা”। এই মেলায় বিগত ৬ বছর ধরে বাংলাদেশের লিটল ম্যাগাজিনের প্রতিনিধিরা অংশ নিতেন। ফলে এই মেলাকে কেন্দ্র করে দুই দেশের সাহিত্য-সংস্কৃতির একটা আদান-প্রদান হয়ে থাকে। কিন্তু সাম্প্রতিক পরিস্থিতির জন্য এবছর বাংলাদেশ তাঁদের মেলায় অংশ নিতে পারেনি। তাঁরা আশা করছেন আগামী বছর এই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে। ফলে এই মেলায় ফের বাংলাদেশকে দেখতে পাওয়া যাবে। বর্ধমান সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের কোষাধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল বক্সী জানিয়েছেন, লিটল ম্যাগাজিনের মেলা অনেকভাবে ছুঁয়ে থাকার, তুলে ধরার মিলন ক্ষেত্র। বা পকেট পুড়িয়ে, রক্তক্ষরণে তিল তিল করে গড়া ও বাঁচিয়ে রাখা সৃষ্টিশীলতার মৌলিক বাতায়ন। ক্ষুদ্র পত্রিকারা যেখানে আকারে ক্ষুদ্র, বিকারে দৈত্য হয়ে ওঠে। এসবের সাক্ষী থাকাও নেহাত কম কথা কি! নতুন কলমের বীজতলাও এই লিটল ম্যাগাজিনই। এখান থেকেই কাটাছেঁড়া, লম্বচ্ছেদে, ব্যবচ্ছেদের আগুনে পুড়ে উঠে আসা শক্তিশালী কলমের, অন্য স্বরের অনুরণনের। এই বিপুল অথচ চিরহরিৎ বৃক্ষের ছায়ায় বুঝি ক্ষণিকের স্নানের নাম লিটল ম্যাগাজিন মেলা!

Exit mobile version