E Purba Bardhaman

জটিল অস্ত্রপচারে ফের সাফল্য পেল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল

Stock Photo - Burdwan Medical College and Hospital - Photo by Sanjoy Karmakar, Purba Bardhaman

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- ফের জটিল অস্ত্রপচারে সাফল্য পেল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। গলা থেকে রক্তজালিকার টিউমার (হাইলি ভাস্কুলার টিউমার) অস্ত্রপচার করে যুবতীর প্রাণ বাঁচালেন হাসপাতালের নাক-কান-গলা (ইএনটি) বিভাগের চিকিৎসকরা। টিউমারটির ওজন এক কেজির মতো। এ ধরণের অস্ত্রপচারে যথেষ্ট ঝুঁকি ছিল। অস্ত্রপচারের সময় রোগীনির রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ছিল ৬। অস্ত্রপচারের সময় শরীর থেকে প্রায় ৩ লিটার রক্তক্ষরণ হয়। অস্ত্রপচারে প্রাণহানির সম্ভাবনাও ছিল। তা সত্বেও ঝুঁকি নিয়ে অস্ত্রপচার করে রোগীনির প্রাণ বাঁচিয়েছেন চিকিৎসকরা। অস্ত্রপচারের পর রোগীনি সুস্থই আছেন। হাসপাতালে রক্তজালিকার এত বড়মাপের টিউমার এর আগে অপারেশন হয়নি বলে দাবি চিকিৎসকদের। চিকিৎসক ঋতম রায় বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ওই মহিলা ভূগছিলেন। টিউমারের কারণে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ দিন দিন কমছিল। ভরতির সময় রোগীনির রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ছিল ৪। অপারেশনের আগে ৬ বোতল রক্ত দেওয়া হয় তাঁকে। তারপর হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বেড়ে হয় ৬। এত কম পরিমাণ হিমোগ্লোবিন থাকা রোগীর অস্ত্রপচার সবসময় ঝুঁকিপূর্ণ। তার উপর অস্ত্রপচারের সময় শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। অস্ত্রপচারের সময় রক্তক্ষরণের কারণে রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনাও থাকে। এর আগে হাসপাতালে রক্তজালিকার এত বড়মাপের টিউমারের অস্ত্রপচার হয়নি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহের হবিবপুর থানার বিজল গ্রামে বছর পঁচিশের ওই যুবতীর বাড়ি। বছর সাতেক আগে তাঁর গলায় ছোট্ট টিউমার দেখা দেয়। টিউমার থাকা অবস্থাতেই তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর টিউমার আকৃতিতে বাড়তে থাকে। পরে তা বিশাল আকার হয়। টিউমারের যন্ত্রণায় প্রচণ্ড কষ্ট পেতেন তিনি। কোনও কাজকর্ম করতে পারতেন না। টিউমারের কারণে স্বামী তাঁকে ছেড়ে চলে যান। টিউমারের জন্য তাঁর সংসারের স্বপ্ন ভেঙে চুড়মার হয়ে যায়। মালদহের বিভিন্ন জায়গায় তাঁর চিকিৎসা হয়। চিকিৎসকরা অস্ত্রপচারের পরামর্শ দেন। মালদহ হাসপাতালেও দেখান তিনি। সেখানকার চিকিৎসকরা অস্ত্রপচারের ঝুঁকি নেননি। কিছুদিন আগে যুবতীর দিদি ধান কাটার কাজে আউশগ্রামে আসেন। সেখানকার লোকজনকে তিনি বোনের সমস্যার কথা বলেন। তাঁর বোনকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দেখানোর পরামর্শ দেওয়া হয়। সেইমতো মাস দু’য়েক আগে তিনি বোনকে নিয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেন। তাঁর বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। ৬ বোতল রক্ত দেওয়া হয় তাঁকে। পুজোর দিনকয়েক আগে তাঁকে হাসপাতালে ভরতি করে নেওয়া হয়। তাঁর অস্ত্রপচারের জন্য একটি টিম তৈরি করা হয়। তাতে ঋতম রায় ছাড়াও বিভাগীয় প্রধান গণেশ চন্দ্র গায়েন, অসীম সরকার, শ্রীজিৎ সুর, দেবারতী ছিলেন। অ্যানাসথেটিস্ট হিসাবে ছিলেন ডাঃ জয়ন্ত চক্রবর্তী ও ডাঃ সৌমেন মণ্ডল। বুধবার তাঁর অস্ত্রপচার হয়। ৩ ঘন্টা ধরে অস্ত্রপচারের পর তাঁর শরীর থেকে টিউমারটি বাদ দিতে সক্ষম হন চিকিৎসকরা। যুবতীর পরিবারের লোকজন জানান, টিউমারের কারণে তাঁর সংসার ভেঙে যায়। স্বামী তাঁকে ছেড়ে দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করে। বিভিন্ন জায়গায় দেখানো হয়। কিন্তু, চিকিৎসকরা অস্ত্রপচারের ঝুঁকি নিতে চাইছিলেন না। এখানকার চিকিৎসকরা তা করে দেখিয়েছেন। চিকিৎসক, নার্সদের ধন্যবাদ।

Exit mobile version