বিপুন ভট্টাচার্য, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :-সাম্প্রতিককালে বর্ধমান শহর ও শহর সংলগ্ন এলাকায় সিভিক ভলেণ্টিয়ারদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে হেনস্থা করার অভিযোগ ক্রমশই বাড়তে শুরু করেছে। এরইসঙ্গে খোদ বর্ধমান পুরসভা নিযুক্ত গ্রীণ ভলেণ্টিয়ারদের বিরুদ্ধেও সাধারণ মানুষকে হেনস্থা করা, তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করার মত অভিযোগ নিয়েও ক্রমশই সরব হচ্ছিলেন সাধারণ মানুষ। কয়েকদিন আগেই খোদ বর্ধমান শহরের প্রাণকেন্দ্র কার্জন গেটের সামনে বর্ধমান পুরসভার এই গ্রীণ ভলেণ্টিয়ার তথা ট্রাফিকের কাজে নিযুক্ত কর্মী এক মোটরবাইক আরোহীকে বেআইনি পার্কিং–এর দায়ে হেনস্থা করা এবং তার গাড়ি ভাঙচুর করার ঘটনায় শহর জুড়েই ক্ষীপ্ত হয়ে ওঠেন সাধারণ মানুষ। অবিলম্বে এই দৌরাত্ম বন্ধের আবেদনও ওঠে। আর বুধবার সকালে এই সব ঘটনাকেই ছাপিয়ে গেল পুরসভার ওই গ্রীণ ভলেণ্টিয়ার তথা ট্রাফিক কর্মীদের ঘটনা। বুধবার বেআইনি কার পার্কিং এর নামে বর্ধমান পুরসভার অতিরিক্ত এক্সিকিউটিভ অফিসার অমিত গুহকে পুলিশের হেনস্থার অভিযোগ ঘিরে ব্যাপক চাঞ্চল্য দেখা দিল প্রশাসনিক মহলে। বর্ধমান জেলা প্রশাসন এবং বর্ধমান পুরসভা সূত্রে জানা গেছে, এই ঘটনার পরই গোটা বিষয়টি নিয়ে উচ্চস্তরে আলোচনা শুরু হয়েছে। জানা গেছে, বুধবার সকালে বর্ধমান পুরসভার অতিরিক্ত এক্সিকিউটিভ অফিসার অমিত গুহ পুরসভার গাড়িতে পুরসভার কাজে বর্ধমান শহরের বীরহাটা সংলগ্ন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলতে যান। তাঁর গাড়িটিকে রাস্তার পাশে ব্যাঙ্কের সামনে পার্কিং করা হয়। প্রায় দশ মিনিট পর তিনি ব্যাঙ্ক থেকে বেড়িয়ে এসে গাড়িতে চাপতে গেলে গাড়ির চালক জানান, ট্রাফিক পুলিশ তাঁর গাড়ির চাবি কেড়ে নিয়েছেন বেআইনি পার্কিং–এর জন্য। অমিতবাবু জানিয়েছেন, এই সময় তিনি দেখতে পান রাস্তার অন্য দিকে দাঁড়িয়ে রয়েছেন ট্রাফিক ওসি চিন্ময় দে। তিনি ওসির কাছে গাড়ির চাবি ফেরত দেবার আবেদন জানালে তিনি তাঁর সঙ্গে রীতিমত দুর্ব্যবহার শুরু করেন। তিনি তাঁর পরিচয় ব্যক্ত করলেও তাঁকে অশ্রাব্য ভাষা বলতে কসুর করেনি ওই ওসি। অমিতবাবু জানিয়েছে্ন, এই ঘটনার সময় সেখানে হাজির ছিলেন বর্ধমান পুরসভা নিযুক্ত ট্রাফিক কর্মীরাও। যাঁদের বেতন হয় পুরসভা থেকেই। যাদের নিয়োগও করা হয়েছে পুরসভা থেকেই। অমিতবাবু জানিয়েছেন, তাঁকে প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে চুড়ান্ত হেনস্থা করার সময় পুরসভার ওই ট্রাফিক কর্মীরা তাঁকে সাফ জানান, তাঁরা এখন পুলিশের হয়ে কাজ করছেন। অমিতবাবু জানিয়েছে্ন, এই ঘটনার পর তিনি ডিএসপি ট্রাফিককে ফোন করেন। তিনি ওসি ট্রাফিকের সঙ্গে কথা বললেও ওসি ট্রাফিক তাঁকে সাফ জানিয়ে দেন তিনি গাড়ি ছাড়বেন না। এই ঘটনার সময় সেখানে হাজির হন বর্ধমান শহরের মিনিবাস টাউন সার্ভিসের সম্পাদক প্রদীপ ব্যানার্জ্জী। তিনি ওসির সঙ্গে কথা বলার পর ওই গাড়িটিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ইতিমধ্যে অমিতবাবু পুরসভায় ফোন করে অন্য একটি গাড়ি নিয়ে আসেন। সেই গাড়িতেই তিনি পুরসভায় ফিরে যান। অমিতবাবু জানিয়েছেন, যে জায়গায় তাঁর গাড়িটিকে পার্কিং করা হয়েছিল সেটি নো পার্কিং জোন হিসাবে চিহ্নিত ছিল না। উপরন্তু তাঁর গাড়িটি রাস্তার পাশেই ছিল। এদিকে, এভাবে একজন সরকারী আধিকারিক নিজের পরিচয় দেওয়া সত্ত্বেও তাঁকে চুড়ান্ত হেনস্থা করার ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। বিশেষ করে এই কাজে পুরসভা নিযুক্ত ট্রাফিক কর্মীরা কিভাবে পুলিশকে সহায়তা করল তা নিয়েও রীতিমত আলোড়ন পড়েছেন। পুরসভা সূত্রে জানা গেছে, বিগত পুরবোর্ডে মোট ৮২জন কর্মীকে নিয়োগ করা হয় বর্ধমান পুলিশকে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করার জন্য। এই ট্রাফিক কর্মীদের বেতনও হয় পুরসভার তহবিল থেকেই। বর্ধমান সদর উত্তরের মহকুমা শাসক পুষ্পেন সরকার জানিয়েছে্ন, তিনি গোটা ঘটনার বিষয়ে লিখিতভাবে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন অমিতবাবুর কাছ থেকে। জানানো হয়েছে জেলাশাসককেও। অমিতবাবু জানিয়েছেন, তিনি ইতিমধ্যেই মহকুমা শাসককে লিখিতভাবে রিপোর্ট দিয়েছেন। একইসঙ্গে পুরসভার পক্ষ থেকেও পৃথকভাবে ওই কর্মী নিয়োগের বৈধতা নিয়ে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে। কিভাবে, কতদিনের জন্য এবং কি চুক্তিতে তাঁদের নিয়োগ করা হয়েছিল সে ব্যাপারেও বিস্তারিত খোঁজখবর শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন অমিতবাবু। অপরদিকে, ডিএসপি ট্রাফিক সুকান্ত হাজরা জানিয়েছেন, তিনি ঘটনার কথা শুনেছেন। এব্যাপারে দুপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন। সম্ভবত কোনো ভুল বোঝাবুঝি হওয়ার জন্যই এই ঘটনা ঘটেছে। ঠিক কি হয়েছে সে ব্যাপারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শেষ পাওয়া খবরে জানা গেছে, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুরসভা নিযুক্ত ওই ৮২জন কর্মীকেই বসিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষকে সুষ্ঠ পরিষেবা দেবার পরিবর্তে যেভাবে তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নিবার হয়ে উঠেছেন এবার তাতেই রাশ টানতে চাইছে্ন পুর কর্তৃপক্ষ।