বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান শহরের ১৭নং ওয়ার্ডের প্রায় অর্ধশত বর্ষের পুরনো একটি বাজারকে তুলে সরিয়ে দিতে চলেছে বর্ধমান পুরসভা। বর্ধমান পুর এলাকার বিবেকানন্দ কলেজ মোড় লাগোয়া খাজা আনোয়ার বেড় রোডের দুধারে বসা প্রায় ৩০০ ব্যবসায়ীকে তুলে দেবার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন বর্ধমান পুরসভা। এই ঘটনায় রীতিমত চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে ব্যবসায়ীক মহলে। পরিবর্তে আগামী পুজোর আগেই চালু হতে চলেছে মা-মাটি-মানুষের সব্জী বাজার। উল্লেখ্য, গত প্রায় ৩ বছর ধরেই বর্ধমান শহর তথা পুর এলাকাকে সাজিয়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছে। রাস্তাঘাট চওড়া করার পাশাপাশি শহর জুড়েই সৌন্দর্য্যায়নের কাজ শুরু হয়েছে। আর সেই কাজ করতেই খাজা আনোয়াড় বেড় রোডের দুধারে বসা প্রায় অর্ধশত বছরের এই বাজারকে তুলে দেবার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে পুরসভা। পরিবর্তে ওই বাজার এলাকার কাছাকাছি ঝুরঝুরে পুলের কাছে পুরসভার পক্ষ থেকে বর্ধমান শহরে প্রথম আধুনিক বাজার তৈরী করা হয়েছে। পুরসভা সূত্রে জানা গেছে, এব্যাপারে আগামী ৩০ জুন বর্ধমান পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে এব্যাপারে চুড়ান্ত সিলমোহর পড়তে চলেছে। এদিকে, বিবেকানন্দ কলেজ মোড়ের এই বাজারের প্রায় ৩০ বছর ধরে ব্যবসা করে আসা খণ্ডঘোষের পোলেমপুরের জামনার বাসিন্দা উত্তম ঘোষ জানিয়েছেন, বর্ধমান শহরে যে কয়েকটি বাজার রয়েছে তার মধ্যে বিবেকানন্দ কলেজ মোড়ের এই বাজার রীতিমতই জনপ্রিয়। বিশেষত, রায়না, খণ্ডঘোষ এলাকার সরাসরি চাষীরা এই বাজারে আসেন। খরিদ্দাররাও চাষীদের কাছ থেকে অনেক কম মূল্যে টাটকা সবজি, মাছ প্রভৃতি পান। তিনি জানিয়েছেন, বর্ধমান শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই খরিদ্দাররা এই টানেই এখানে আসেন। তিনি জানিয়েছেন, এখানে থেকে বাজার তুলে সরিয়ে দিলে শুধু যে ক্রেতাদের অসুবিধা হবে তাই নয়, পরিবহণ খরচও বেড়ে যাবে। ফলে আনাজপত্রের দামও বৃদ্ধি পেতে পারে। অপর এক ব্যবসায়ী সুশান্ত দত্ত যিনি প্রায় ২৪ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করছেন, প্রায় ১৫ বছর ধরে ব্যবসা করছেন রাজু চৌধুরী – সকলেই জানিয়েছেন, পুরসভার পক্ষ থেকে এখনও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এব্যাপারে কোনো আলোচনা করা হয়নি। তবে পুরসভার পক্ষ থেকে প্রত্যেকটি ব্যবসায়ীদের নাম ঠিকানা সহ তাদের ছবি নিয়ে গেছে পুরসভার কর্মীরা। এই বাজারে সপ্তাহে দুদিন আসেন বর্ধমানের ঢলদিঘী এলাকার বাসিন্দা অনামিকা গাঙ্গুলী। তিনি জানিয়েছেন, এই বাজার থেকে তিনি অনেক কমদামে টাটকা সব্জী পাবার জন্য সপ্তাহে দুদিন আসেন। এখান থেকে বাজার স্থানান্তরিত হলে তাঁদেরও অনেক অসুবিধায় পড়তে হবে। এদিকে, এরই পাশাপাশি ওই বিবেকানন্দ কলেজ মোড়ের এই বাজারের পাশাপাশি এর বিপরীতেই ১৮নং ওয়ার্ডেও একটি ছোট বাজার রয়েছে। ব্যবসায়ীদের আশংকা এই ৩০০ ব্যবসায়ীকে স্থানান্তরিত করা হলে ওই ১৮নং ওয়ার্ডের বাজারটিতেই আকৃষ্ট হবেন ক্রেতারা। যদিও এই তথ্য মানতে চাননি পুরকর্তৃপক্ষ। খোদ পুরসভার চেয়ারম্যান ডা. স্বরূপ দত্ত জানিয়েছেন, বাম আমলে ঝুরঝুরে পুলের কাছে প্রায় ৩ বিঘে জায়গার ওপর এই মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরীর জন্য ১ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু কাজ কিছুই হয়নি। জায়গাটি পড়ে ছিল। পরে তাঁরা ফের প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা খরচ করে এই অত্যাধুনিক বাজার তৈরী করেছেন। তাঁরা আশা করছেন আগামী পুজোর আগেই পুরোদমে চালু হয়ে যাবে এই বাজার। তবে এখানে জায়গা পেতে গেলে ব্যবসায়ীদের কি দিতে হবে তা এখনও চুড়ান্ত না হলেও বর্ধমান পুরসভার কাউন্সিলার খোকন দাস জানিয়েছেন, বাজারটিকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে প্রতিদিন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ২ টাকা করে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। পুরসভার তত্ত্বাবধানে থাকা এই বাজারের আলো, জল এবং কার পার্কিং-এর জন্যও পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকছে। একতলার পাশাপাশি দোতলাতেও কিছু করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। অন্যদিকে, বিবেকানন্দ কলেজ মোড়ের রাস্তার দুধারে বসে থাকা এই বাজার তুলে দিয়ে সেখানে সৌন্দর্য্যায়ন ঘটাবে পুরসভা।