গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান শহরের ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের আদিবাসীপাড়ার ৯ বছরের বালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের মামলায় ধৃত অশোক তুড়িকে দোষী সাব্যস্ত করল বর্ধমানের পকসো আদালত। পকসো আদালতের বিচারক সুযশা মুখোপাধ্যায় অশোককে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ও পকসো অ্যাক্টের ৬ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করেন। শনিবার সাজা শোনাবেন বিচারক। দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর আদালতের লকআপে ভেঙে পড়ে অশোক। রায় ঘোষণার সময় অবশ্য সরকারি আইনজীবী, পিপি ইনচার্জ ও অশোকের আইনজীবী ছাড়া আদালত কক্ষে কাউকে থাকতে দেওয়া হয়নি। এনিয়ে অবশ্য প্রশ্ন উঠেছে। সরকার মামলাটিকে গুরুত্ব দিয়ে জোড়া সরকারি আইনজীবী নিয়োগ করে। শিবরাম ঘোষাল ও গৌতম মুখোপাধ্যায়কে সরকারের তরফে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এদিন অবশ্য বিচারক শিবরামবাবুকে আদালত কক্ষে থাকতে দেননি। এনিয়ে প্রশ্ন তোলেন শিবরামবাবু। পরে তিনি বলেন, এ ধরণের মামলার বিচার প্রক্রিয়া দরজা বন্ধ করে বাইরের কাউকে ঢুকতে না দিয়ে হয়। তবে, রায় ঘোষণার ক্ষেত্রে এ ধরণের কোনও আইন নেই। কারণ, সকলের সামনেই রায় ঘোষণা করাটাই দস্তুর।
পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর ঘটনাটি ঘটে। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় ওই নাবালিকা বাড়িতে তার দাদুর কাছে ছিল। তার দুই বোনকে নিয়ে মা শহরের ভাতছালার পিওনপাড়ায় ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলেন। মেয়েটির দাদু প্রতিবেশী গণেশ তুড়ির সঙ্গে ঘরে বসে গল্প করছিলেন। প্রতিবেশী অশোক বাড়ি থেকে নাবালিকাকে ডেকে নিয়ে যায়। বাঁকার পাড়ে নিয়ে গিয়ে নাবালিকাকে সে ধর্ষণ করে। ডাক্তারখানা থেকে ফিরে এসে নাবালিকাকে বাড়িতে দেখতে পাননি তার মা। তিনি মেয়ের খোঁজ শুরু করেন। কয়েকজন প্রতিবেশীর সঙ্গে খুঁজতে বেরিয়ে বাঁকার পাড় ধরে অশোককে পালিয়ে যেতে দেখেন তিনি। তাড়া করে প্রতিবেশীরা অশোককে ধরে পুলিসের হাতে তুলে দেন। ঘটনার দিনই নাবালিকার মা বর্ধমান মহিলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে ধর্ষণ, খুন ও পকসো অ্যাক্টের ৪ ও ৫ ধারায় মামলা রুজু করে থানা। নাবালিকাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় বলে জানতে পারে পুলিস। তদন্ত সম্পূর্ণ করে ঘটনার ২০ দিনের মাথায় চার্জশিট পেশ করেন তদন্তকারী অফিসার। মৃতার ভিসেরা ও সংগ্রহ করা যোনিরস পরীক্ষার জন্য কলকাতার বেলগাছিয়ায় ফরেন্সিক স্টেট ল্যাবরেটারিতে পাঠানো হয়। চার্জশিটে ফরেন্সিক পরীক্ষার ফল মেলার পর অতিরিক্ত চার্জশিট পেশ করার কথা জানান তদন্তকারী অফিসার। যদিও দোষী সাব্যস্ত করার দিনও ফরেন্সিক পরীক্ষার ফল আদালতে পেশ হয়নি। বেশ কয়েকজনের গোপন জবানবন্দি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নথিভূক্ত করানো হয়। ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা চটি, ২০ টাকা ও মেয়েটির একটি চটি উদ্ধার করে পুলিস। মামলায় ২৯ জনকে সাক্ষী করা হয়। গোপন জবানবন্দি নথিভূক্ত করা দুই ম্যাজিস্ট্রেট দ্যূতি রায় ও অত্রী চন্দ সাক্ষ্য দেন।