বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- একের পর এক তারিখ বদল হচ্ছে বর্ধমানের রেলওয়ে ওভারব্রীজ চালুর বিষয়ে। আর তাতেই ক্রমশ ক্ষীপ্ত হয়ে উঠছেন সাধারণ মানুষ। চলতি বছরের শেষ তথা আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যেই বর্ধমান পুরসভার নির্বাচন। ফলে রাজ্যের শাসকদল চাইছেন পুরভোটের আগেই এই উড়ালপুল চালু হোক। তাতে নির্বাচনী ফায়দা মিলবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত যা অবস্থা তাতে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের আগে কোনোভাবেই এই উড়ালপুর চালুর সম্ভাবনা দেখছেন না প্রশাসনের কর্তারা। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে এই সংযোগকারী রাস্তা তৈরী করে দেবার বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধও ছিলেন নির্মাণকারী সংস্থা ‘রেলওয়ে বিকাশ নিগম লিমিটেড’ বা আরভিএনএল। ইতিমধ্যেই প্রায় বছর খানেক আগেই রেলপথের ওপর মূল সেতুর কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গেলেও এ্যাপ্রোচ রোড বা সংযোগকারী রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় সেতু চালু করা যায়নি। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এশিয়ার বৃহত্তম রেলের ওপর এই ঝুলন্ত সেতু ২০১৭ সালের মার্চ মাসের মধ্যেই চালু হয়ে যাবার কথা থাকলেও এপ্রোচ রোড নির্মাণে বাধা সৃষ্টি হয় জমির দখলদারীদের উত্খাত নিয়ে। যদিও জেলা প্রশাসন এব্যাপারে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করে জমির দখলদার মুক্ত করেন তা তুলে দেন রেলের হাতে। ফলে জমি জট কাটলেও মাঝখানে সমস্যা দেখা দেয় নির্মাণ কাজে বালি পাওয়া নিয়ে। সেক্ষেত্রেও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু তারপরেও প্রত্যাশিত গতিতে এই সংযোগকারী রাস্তার কাজ সম্পূর্ণ না হওয়ায় এখনও অধরা উড়ালপুল চালু। অথচ বর্ধমান শহরের মধ্যে রীতিমত গুরুত্বপূর্ণ এই রেল ষ্টেশন এলাকায় তৈরী হওয়া এই উড়ালপুল নির্মাণের কাজ চলতে থাকায় রীতিমত মাঝে মাঝেই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন সাধারণ পথচারীরা। এমনকি তীব্র যানজটও লেগে রয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষ চাইছেন যত দ্রুত সম্ভব চালু হোক এই উড়ালপুল। বর্ধমান পুরসভার কাউন্সিলার খোকন দাস জানিয়েছেন, এই উড়ালপুল চালু হলে সাধারণ মানুষের সুবিধা হবে। এটা ভেবে তিনবছর ধরে মানুষ কষ্ট ভোগ করেছেন। আরভিএনএল সংস্থা কবে এই কাজ শেষ করতে পারবেন তাঁরা কিছুই বুঝতে পারছেন না। প্রতিদিনই সমস্যার অভিযোগ আসছে তাঁদের কাছে। ইতিমধ্যে এব্যাপারে রাজ্যের মন্ত্রী ও তথা তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাসের কাছেও বিষয়টি জানানো হয়েছে। পুরসভার নির্বাচনের আগেই দ্রুত এই কাজ শেষ করুক আরভিএনএল- এমনটাই চাইছেন তাঁরা। উল্লেখ্য, এই উড়ালপুলটিতে মোট ৪টি লেন থাকছে। এই রাস্তাতেই জেলার সিংহভাগ প্রশাসনিক আধিকারিকদের যাতায়াতও করতে হয়। ফলে জেলা প্রশাসনও চাইছেন দ্রুত শেষ হোক উড়ালপুলের কাছ। জানা গেছে, এব্যাপারে খোদ পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তবও আরভিএনএল কে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছেন কবে শেষ হবে এই রাস্তা তৈরীর কাজ। জানা গেছে, এব্যাপারে আরভিএনএলের প্রকল্প ম্যানেজার হায়দার আলির জেলা প্রশাসনকে এব্যাপারে লিখিতভাবে উত্তরও দিয়েছেন। সেখানে চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত সময় নেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, কাজ কবে শেষ হবে জানতে চেয়ে আরভিএনএল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছিলেন। ওনারা জানিয়েছেন স্টেশন এলাকায় দু’টি পিলার তৈরী নিয়ে সমস্যা হওয়ায় দেরী হচ্ছে। যদিও জেলাশাসক জানিয়েছেন, এব্যাপারে ওঁরা নকশা বদল করার সিধান্তও নিয়েছিলেন। প্রশাসন সূত্রে জানাগেছে, বর্ধমান ভবনের সামনে এক জমির মালিক এখনও জমি বিক্রি করেননি। প্রশাসন দ্রুত এই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করছে বলে জেলাশাসক জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, ওঁরা জানিয়েছেন, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর নাগাদ কাজ শেষ হয়ে গাড়ি চলাচল করবে।