আতঙ্কপুরী হয়ে উঠেছে বর্ধমান রেল ষ্টেশন, অন্যান্য জলের ট্যাঙ্ক নিয়ে পর্যালোচনা শুরু রেলের
admin
বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বুধবার দুপুর ১২ টা নাগাদ বর্ধমান স্টেশনে শতাব্দী প্রাচীন ধাতব পাত দিয়ে তৈরি জলের ট্যাংকের একাংশ ভেঙে পড়ে ৩জনের মৃত্যুর ঘটনায় বর্ধমান স্টেশনে মৃত্যুপুরীর আতঙ্কে ভুগতে শুরু করলেন যাত্রীরা। বুধবারের ঘটনার পর ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও রীতিমতো চোখে মুখে আতঙ্ক নিয়ে স্টেশনে যাত্রীরা ঢুকছেন বের হচ্ছেন। একটু জোড়ে কোনো আওয়াজ হলেই যাত্রীরা ভয়ে সিঁটিয়ে যাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার বর্ধমান স্টেশনে দুর্ঘটনাস্থলে এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে একাধিক জুতো। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিকভাবেই চলছে। আর ট্রেন থেকে যাত্রীরা নামতেই সকলেরই চোখ গিয়ে পড়ছে দুর্ঘটনাস্থলে। মূর্হূমূর্হূ মোবাইল ফোনের ফ্ল্যাশ ঝলসাচ্ছে। নিত্যযাত্রী সোনালি সাহা জানিয়েছেন, ট্রেনের কর্তাদের কাছে মালগাড়ির মূল্য অপরিসীম, কিন্তু যাত্রীদের কোনো গুরুত্ব নেই। অভিযোগ করলে কান দেওয়া হয় না। ব্যবস্থা নেওয়াতো অনেক দূর। এই দুর্ঘটনার পিছনে রক্ষণাবেক্ষণের গাফিলতিকেই দায়ী করেছেন সোনালীদেবী। নিত্যযাত্রী মলয়েশ বোস এদিন রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, অমৃত স্টেশন হচ্ছে বর্ধমান। বন্দে ভারত, বুলেট ট্রেন চলছে। আর যাত্রীদের ন্যূনতম নিরাপত্তা নেই। যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে কার্যত ছেলেখেলা চলছে। বাড়ি থেকে বের হলেই বাড়ির লোকজন চিন্তায় থাকছেন। এই দুর্ঘটনার পর ২ ও ৩ নং প্ল্যাটফর্মে পানীয় জল বন্ধ। ফলে যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। বিশ্বজিৎ মণ্ডল জানিয়েছেন, ২০২০ সাল থেকে শুরু হয়েছে বুক দুরুদুরু। ২০২৩ সালের শেষে আতংকপুরী তৈরি হয়েছে বর্ধমান স্টেশন। নিত্যযাত্রী সুশান্ত ঘোষ জানিয়েছেন, আরপিএফের হুইসেল মারা ছাড়া অন্য কোনো কাজ নেই। যেভাবে স্টেশনে যাত্রীদের চাপ বাড়ছে তাতে পরিকাঠামো উন্নয়ন না হলে ভবিষ্যতে ফুট ব্রিজ ভেঙে গেলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। নিত্যযাত্রী মৌমিতা সাহা জানিয়েছেন, রেলের চূড়ান্ত গাফিলতির ফল এই দুর্ঘটনা। এদিকে, বর্ধমান স্টেশনের জলের এই ট্যাংক ভেঙে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটিশ আমলে তৈরি সহ আরও যে সমস্ত ট্যাংক রয়েছে সেগুলি নিয়েও অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। বর্ধমান স্টেশনের ৮ নং প্ল্যাটফর্মের বাইরেই রয়েছে এই ধরনের আরও একটি ট্যাংক। ১৯৩৫ সালে তৈরি এই ৫৬,৮৭০ গ্যালন জলধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ট্যাংকের নিচে এবং আশেপাশে প্রায় ১৪-১৫ টা পরিবার ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে বাস করে। এছাড়াও বেশ কিছু দোকান আছে। ট্যাংকের নিচে থাকা বাসিন্দা অধীর সিং, পুনম দাস, চঞ্চলা রাসভোররা জানিয়েছেন, প্রায় ৩০-৪০ বছর ধরে ওই এলাকায় বাস করছেন। কয়েকবছর আগে রেল হাসপাতাল হওয়ার সময় কিছুটা সরে এসে ট্যাংকের একদম তলায় থাকেন। কালকের ঘটনার পর এখন প্রচুর ভয় করছে। গতকাল এবং আজকে রেলের লোকেরা এসে সরে যেতে বলেছে। চলে যেতে হবে, কিন্তু কোথায় যাবো? দু-একদিন সময় চেয়েছি। এই ট্যাংকেও মাঝেমাঝেও ওভারলোড হয়ে জল পড়ে। রক্ষণাবেক্ষণ হয়, তবে অনেকদিন পরপর। উল্লেখ্য, এই ৮নং প্ল্যাটফর্মের কাছেই রয়েছে একটি কংক্রিটের ট্যাংক। রীতিমতো ভগ্নাবস্থায় যা দাঁড়িয়ে রয়েছে। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এখন আর এই ট্যাঙ্কে জল ভরা হয়না। কিন্তু তাঁরা ভয় পাচ্ছেন, এই ভগ্ন ট্যাংক হুড়মুড়িয়ে ভেঙে না পড়ে। বর্ধমানের স্টেশন ম্যানেজার স্বপন ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, ট্যাংকের বিষয় তো ইঞ্জিনিয়ার ডিপার্টমেন্ট দেখে। তবে যেটা আমি শুনেছি কালকেই ইঞ্জিনিয়াররা সবকটি ট্যাংকের সাইড ভিজিট করেছেন। যেটুকু জানি, ট্যাংকের নিচে বসবাসকারী এবং ব্যবসায়ীদের সরে যেতে বলা হয়েছে। সমস্ত ওভারহেড ট্যাংকের বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছেন স্থানান্তর করার জন্য। তিনি জানিয়েছেন, মোট ৩ টি কাস্ট আয়রনের ট্যাংক আছে। এছাড়াও কংক্রিটের ট্যাংক আছে। কাস্ট আয়রনের ট্যাংক ২-৩ প্ল্যাটফর্মে একটি যেটি এটা ভেঙে পড়েছে। এছাড়াও ৮ নম্বর প্ল্যাটফর্মের ঠিক বাইরেই একটি এবং রেল কলোনিতে একটি রয়েছে।