বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দপ্তরের নির্দেশ উপেক্ষা করে বর্ধমানের রাজ কলেজ এবং মহিলা কলেজে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি নিয়ে ভেরিফিকেশন চালানোর খবর পেয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী উপাচার্য মহুয়া সরকারের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধিদল আচমকা হানা দিলেন এই দুই কলেজে। একইসঙ্গে তাঁরা হানা দিলেন বর্ধমানের বিবেকানন্দ কলেজেও। যদিও বিবেকানন্দ কলেজের কর্মকাণ্ডে তাঁরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অন্যদিকে, শুক্রবার দুপুরে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ উপাচার্য তথা ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য মহুয়া সরকারের নেতৃত্বে রেজিষ্টার অধ্যাপক রমেন সর, কলেজ সমূহের পরিদর্শক সুজিত চৌধুরী সহ আরও এক বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র কোর্ট সদস্য স্বপন পান আচমকা হানা দেন রাজ কলেজে। রেজিষ্টার অধ্যাপক রমেন সর জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে খবর ছিল সরকার তথা উচ্চশিক্ষা দপ্তরের নির্দেশ অমান্য করে রাজ কলেজে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ভেরিফিকেশন চলছে। এরপরেই তাঁরা রাজ কলেজে হাজির হন। ঘটনার সত্যতা দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গে কলেজের অধ্যক্ষ নিরঞ্জন মণ্ডলকে তা বন্ধ করার নির্দেশ দেন। রমেনবাবু জানিয়েছেন, রাজ্য উচ্চশিক্ষা দপ্তরের নির্দেশ প্রতিটি কলেজকে জানিয়ে দিয়েছিলেন তাঁরা। এমনকি লিখিতভাবে ছাড়াও তাঁরা ফোনে সমস্ত কলেজের প্রিন্সিপ্যালকে উচ্চশিক্ষা দপ্তরের নির্দেশিকা জানিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু তারপরেও কিভাবে রাজ কলেজ এবং মহিলা কলেজে এই কাজ হচ্ছিল সে ব্যাপারে তাঁরা একটি রিপোর্ট তৈরী করছেন। যদিও তিনি জানিয়েছেন, মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা জানিয়েছেন, তিনি এই নির্দেশিকা সম্পর্কে কিছু জানতেন না। রেজিষ্টার জানিয়েছেন, বিবেকানন্দ কলেজে গিয়ে তাঁরা দেখেন আগেই এব্যাপারে কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি নোটিশ টাঙিয়ে দিয়েছেন। ফলে ওই কলেজে এই ধরণের কোনো কিছু ঘটেনি। অপরদিকে, এদিন রাজ কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রতিনিধিরা গেলে রীতিতম তাঁদের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন কলেজ অধ্যক্ষ নিরঞ্জন মণ্ডল। কলেজে ঢুকে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা দেখেন উচ্চশিক্ষা দপ্তরের নির্দেশিকাকে কার্যত উপেক্ষা করেই ভেরিফিকেশন পর্ব চলছে। অথচ উচ্চশিক্ষা দপ্তরের নির্দেশিকায় পরিস্কার ভাবেই বলা আছে পড়ুয়াদের কলেজে উপস্থিত হয়ে কাউন্সেলিং বা ভেরিফিকেশন করা যাবে না। অনলাইনে ভর্তি হয়ে গেছে। ক্লাস শুরু হওয়ার পর ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া হবে। কিন্তু রাজকলেজের ঠিক বিপরীত চিত্র এদিন ধরা পড়ে। দেখা যায় প্রচুর সংখ্যায় ছাত্রছাত্রীরা কলেজে উপস্থিত রয়েছেন এবং তাদের ভেরিফিকেশন চলছে। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা এই ঘটনায় চরম ক্ষুদ্ধ হন। তাঁরা সরাসরি কলেজের অধ্যক্ষকে কারণ জানতে চাইলে অধ্যক্ষ ক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠেন। তিনি প্রথমতঃ গোটা প্রক্রিয়াটিকে বেআইনী হিসাবে মানতে অস্বীকার করেন। উল্টে তিনি প্রতিনিধি দলের সদস্যদের কাছে জানতে চান ক্লাস কবে শুরু হবে তার তারিখ জানাতে হবে। কেন তিনি নির্দেশ না মেনে ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছিলেন জানতে চাইলে অধ্যক্ষ কার্যত প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। তিনি অবাঞ্ছিত বিষয়ে প্রশ্ন তুলে সংঘাতেও জড়িয়ে পড়েন। তবে শেষ পর্যন্ত প্রতিনিধি দলের চাপে পড়ে বাধ্য হয়ে অধ্যক্ষ নিরঞ্জন মণ্ডল ভেরিফিকেশন বন্ধ করে দেন। গোটা ঘটয়ায় চরম ক্ষোভ উগড়ে দেন কর্মসচিব রমেন সর ও সহকারী উপাচার্য মহুয়া সরকার। অন্যদিকে রাজকলেজের মতই একই দৃশ্য দেখা যায় বর্ধমান মহারাজাধিরাজ উদয়চাঁদ মহিলা কলেজে। সেখানেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা দেখেন কলেজের অডিটোরিয়াম হলে ভেরিফিকেশন চলছে। সেখানে উপস্থিত ছাত্রীদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও। ক্ষুদ্ধ কর্মসচিব ভেরিফিকেশন বন্ধ করার নির্দেশ দেন। এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্টার রমেন সর জানিয়েছেন, সরকারী নিয়ম লঙ্ঘন করার এই বিষয়টি নিয়ে তাঁরা একটি রিপোর্ট তৈরী করছেন। তারপরেই প্রয়োজনমাফিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।