E Purba Bardhaman

প্রাক্তন মাওবাদী নেতা অর্ণবের পিএইচডি করা নিয়ে ‘কাঠগড়ায়’ বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য

Burdwan University Vice-Chancellor in controversy over former Maoist leader Arnab Dam's admission for Ph.D.

বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- প্রাক্তন মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম ওরফে বিক্রমকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পিএইচডি করতে দেওয়া নিয়ে বিতর্ক আরও বাড়লো বৃহস্পতিবার তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের ট্যুইটে। এদিন কুণাল ট্যুইট করে জানিয়েছেন, মাওবাদী অভিযোগে বন্দি অর্ণব দামকে পিএইচডি করতে দিতে হবে। ও যোগ্যতা প্রমাণ করেছে। শিক্ষামন্ত্রী ও কারামন্ত্রীর কথা হয়েছে। ওঁরা সহযোগিতা করবেন। অর্ণবকে হুগলি থেকে বর্ধমান জেলে সরানো হবে। বর্ধমান বিশ্ববিদ‌্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ আন্তরিক। তবে উপাচার্য অকারণ জট তৈরি করে বাধা দিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার কুণালের এই ট্যুইট নিয়েই নতুন করে বির্তক শুরু হয়েছে। যদিও এব্যাপারে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গৌতম চন্দ্র জানিয়েছেন, তিনি এবং বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় আন্তরিক বলেই অর্ণব দাম এখানে ইন্টারভিউ দিতে পেরেছেন। শুধু তাইই নয়, উপাচার্য জানিয়েছেন, যেহেতু এটা একটা হাই প্রোফাইল কেস তাই অর্ণব কীভাবে ক্লাস করবে, তার নিরাপত্তার বিষয়টি কীভাবে দেখা হবে প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে জানতেই তাঁরা হুগলী কারাগার কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা আন্তরিক বলেই অর্ণব দাম পিএইচডি ইন্টারভিউয়ে প্রথম স্থান অধিকার করায় তাঁরা সমগ্র ভর্তি প্রক্রিয়াকেই সাময়িকভাবে স্থগিত করে রেখেছেন। হুগলী কারাগার থেকে উত্তর আসার পর যথারীতি ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। গৌতমবাবু জানিয়েছেন, তাঁদের আন্তরিকতা নিয়ে যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে তা সমীচীন নয়। উল্লেখ্য, অর্ণব দাম ইতোমধ্যেই তাঁকে নিয়ে এই জটিলতার প্রতিবাদে হুগলী কারাগারে অনশন শুরু করেছেন। এব্যাপারে এপিডিআর এর সাধারণ সম্পাদক রঞ্জিত শূর এদিন জানিয়েছেন, অর্ণব দামের বিষয় নিয়ে তাঁরা এদিনই রাজ্যের উচ্চশিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে কথা বলেছেন। রঞ্জিতবাবু জানিয়েছেন, এদিন শিক্ষামন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কাকে ভর্তি করবে বা করবে না, তার সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়েরই। এক্ষেত্রে সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারে না। রঞ্জিতবাবু জানিয়েছেন, সদ্য লোকসভা নির্বাচনে একাধিক সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন যাঁরা উগ্রপন্থার সঙ্গে যুক্ত। তাঁরা আইন তৈরি করবেন। স্পিকার তাঁদের শপথ করিয়েছেন। তিনি জানান, এখন রাজ্যে আর কারাগার বলে কিছু নেই তা সংশোধনাগার হয়েছে। তাহলে উপাচার্য্যের এই সিদ্ধান্ত সেই সংশোধনাগারের চরিত্রটাকেই হাস্যকর করে তুলেছেন। সরকার বলছে মাওবাদীদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে হবে। আর অর্ণব পড়াশোনা করতে চাইছেন, তাঁকে বাধা দেওয়া হচ্ছে। রঞ্জিতবাবু জানিয়েছেন, কোথাও কোনো সমস্যা নেই, রাজ্য সরকারকেও দোষ দেওয়ার জায়গা নেই। সমস্যাটা উপাচার্য্যের নিজস্ব। তাঁর মস্তিষ্ক ব্লক হয়ে গেছে। যেহেতু গোটা রাজ্য জুড়েই উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে একটা ডামাডোল চলছে তাই সরকার কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছেনা বলে এদিন শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন। রঞ্জিতবাবু জানিয়েছেন, অর্ণব দমবার পাত্র নয়। এর আগেও তাঁকে নিয়ে একাধিক জায়গায় যাওয়া হয়েছে, কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। তাহলে এখন কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর বজ্রাঘাত হল। আসলে উপাচার্য্যের রাজনৈতিক মতাদর্শে আঘাত লাগছে। রঞ্জিতবাবু বলেন, পিএইচডিতে কতদিন পড়ানো হয় – তা কি তাঁরা দেখতে পাচ্ছেন না। আসলে এগুলো কোনো সমস্যাই নয়। তিনি জানিয়েছেন, অর্ণব দামের এই বিষয়টি নিয়ে গোটা বিশ্বের শিক্ষাক্ষেত্রে আলোচনা শুরু হয়েছে। এই চিন্তাধারার পরিবর্তন না হলে গোটা বিশ্বে নিন্দিত হবেন। তিনি জানিয়েছেন, এপিডিআর অর্ণবের মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে আইন-সহ সবরকমের সহযোগিতার জন্য তৈরি রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি শিলদা ইএফআর ক্যাম্পে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে। মৃত্যু হয় ২৪ জন ইএফআর জওয়ানের। ওই মামলায় ২৩ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত। সশস্ত্র বাহিনীর শিবিরে মাওবাদী হামলার ঘটনায় অন্যতম অভিযুক্ত মাওবাদী নেতা সুদীপ চোংদারের মৃত্যু হয়েছে অনেক দিন আগে। ওই মামলায় অন্যতম অভিযুক্ত অর্ণবের সাজা হয় গত বছর ২৯ ফেব্রুয়ারি। প্রথমে তাঁকে রাখা হয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের সংশোধনাগারে। গত ১৭ মার্চ থেকে তিনি বন্দি হুগলি সংশোধনাগারে। সেখান থেকে তাঁকে পিএইচডি করার সুযোগ করে দেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন অর্ণব। তিনি ইতিহাস বিভাগে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরের উত্তীর্ণ হয়েছেন। এবং তিনি ইতোমধ্যেই সেট উত্তীর্ণ ক্যান্ডিডেট। সেট উত্তীর্ণ ক্যান্ডিডেট হিসাবে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার জন্য আবেদনের ভিত্তিতে তিনি প্রথমস্তরের লিখিত পরীক্ষায় একজেমটেড হন এবং পরবর্তীকালে তিনি ইন্টারভিউতে সরাসরি ডাক পেয়েছেন। গত ২৬ জুন পুলিশি প্রহরায় ইন্টারভিউয়ের জন্য বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজির হন অর্ণব। গত ৫ জুলাই মেধা তালিকা প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়। আর এই তালিকা দেখেই অনেকের চোখ কপালে ওঠে। ইতিহাস বিভাগের মেধা তালিকা অনুযায়ী ১০০ নম্বরের মধ্যে ৭৬.৮৬৭০ নম্বর পেয়ে প্রথম হন অর্ণব। ইতিহাস বিষয়ে পিএইচডি করার ইন্টারভিউয়ে ২৪৯ জনকে পিছনে ফেলে প্রথম স্থান লাভ করে ইতিহাস সৃষ্টি করেন জেল বন্দী প্রাক্তন মাওবাদী নেতা অর্ণব দাম ওরফে বিক্রম। আর এই পরেই ঘটে বিপত্তি। পূর্ব নির্ধারিত সূচী অনুযায়ী মেধা তালিকায় থাকা পরীক্ষার্থীদের জন্য ৯ জুলাই কাউন্সিলিং-এর দিন নির্ধারিত ছিল। ৮ জুলাই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয় অনিবার্য কারণে কাউন্সিলিং প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেওয়া হয়। আর এই নিয়েই শুরু হয়েছে বিতর্ক। উপাচার্য গৌতম চন্দ্র জানিয়েছেন, অফ লাইন কোর্স ওয়ার্কের সময় উপস্থিতি কিভাবে সুনিশ্চিত হবে ও নিরাপত্তার কি ব্যবস্থা থাকবে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জানতে চাওয়া হয়েছে হুগলি সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের কাছে। উত্তর আসতে সময় লাগবে তাই অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের পিএইচডি কোর্সের ভর্তি প্রক্রিয়া।


Exit mobile version