E Purba Bardhaman

বর্ধমান শহরের সুইমিং পুলে ছাত্রের মৃত্যুতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট

The Calcutta High Court directed the CBI to investigate the death of the student in the Children Cultural Centre swimming pool water in Burdwan town.

গণেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- বর্ধমান শহরে চিলড্রেন্স কালচারাল সেন্টারের সুইমিং পুলের জলে ডুবে মেধাবী ছাত্রের মৃত্যুতে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক সিআইডি তদন্তে অসন্তোষ প্রকাশ করে সিবিআইকে দিয়ে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। এসপি পদমর্যাদার অফিসারকে দিয়ে তদন্ত করানোর জন্য সিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। এই রায়ে খুশি মৃতের পরিবার। এবার রহস্য উন্মোচন হবে বলে পরিবারের আশা। সিআইডি তদন্তে অসন্তুষ্ট ছিলেন মৃত ছাত্রের পরিবারের লোকজন। ছাত্রের মৃত্যুতে জড়িতদের আড়াল করতে সিআইডি খুনের পরিবের্ত গাফিলতিতে মৃত্যুর ধারায় আদালতে চার্জশিট পেশ করে বলে অভিযোগ পরিবারের। এছাড়াও ময়না তদন্তের রিপোর্ট এবং ভিসেরা পরীক্ষাতেও গলদ ছিল বলে মৃতের পরিবারের তরফে হাইকোর্টে অভিযোগ করা হয়।
     সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১২ সালের ২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ শহরের আলমগঞ্জ এলাকায় চিলড্রেন্স কালচারাল সেন্টারের সুইমিং পুলে সাঁতার কাটতে যান রমেন সামন্ত (২১)। বর্ধমান শহরের আনন্দপল্লি এলাকায় তাঁর বাড়ি। তিনি শহরের বিবেকানন্দ কলেজের ইংরাজি অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। সেই সময় সুইমিং পুলে আরও কয়েকজন সাঁতার কাটছিলেন। নির্দিষ্ট সময়ের পরও বাড়ি না ফেরায় রাত ৯টা ১০ নাগাদ রমেনের মা ছেলের মোবাইলে ফোন করেন। কিন্তু, কেউ ফোন ধরেনি। এর কিছুক্ষণ পর রমেনের মোবাইল থেকে তাঁর বাড়িতে কেউ ফোন করে। কিন্তু, কথা না বলেই ফোনটি কেটে দেওয়া হয়। এরপর রাত ১০টা ১০ নাগাদ রমেনের বাড়িতে ফোন যায়। রমেনের অসুস্থতার কথা বলে পরিবারের লোকজনকে তাড়াতাড়ি সুইমিং পুলে আসার জন্য বলা হয়। এটুকু বলেই ফোন কেটে দেওয়া হয়। ফোন পেয়ে রমেনের বাবা দেবকুমার সামন্ত আরও কয়েকজনকে নিয়ে সুইমিং পুলে যান। তাঁদের উপস্থিতিতে রমেনের দেহ জল থেকে তোলা হয়। তাঁর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন ছিল বলে পরিবারের দাবি। সেই সময় সুইমিং পুল কর্তৃপক্ষের কেউই সেখানে হাজির ছিলেন না। পরে পুলিস সুইমিং পুলের লোকজনকে ডেকে পাঠায়। তারপর সুইমিং পুলের লোকজন সেখানে হাজির হন। ঘটনার বিষয়ে রমেনের বাবা পরেরদিন বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে খুন ও প্রমাণ লোপাটের ধারায় মামলা রুজু হয়।
     তদন্তে নেমে পুলিস সুইমিং পুল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে রমেনের দু’টি মোবাইল বাজেয়াপ্ত করে। বর্ধমান থানার তদন্তকারী অফিসার অরুণ বন্দ্যোপাধ্যায় সুইমিং পুলের কেয়ার টেকার গোপীমোহন চট্টোপাধ্যায় ও প্রশিক্ষক প্রসেনজিৎ সোমকে গ্রেপ্তার করে। তাদের হেপাজতে নেওয়া হয়। তবে, তাদের হেপাজতে নিয়ে বিশেষ কিছু তথ্য পায়নি পুলিস। পরে তারা জামিনে ছাড়া পায়। সেই বছরের ১৯ নভেম্বর সিআইডি তদন্তভার হাতে নেয়। সুরতহাল রিপোর্টে মৃতের ডান কানের নীচে আঘাতের চিহ্ন ছিল বলে জানানো হয়। এছাড়াও বাঁ কনুইয়ে আঁচড়ের দাগ ছিল। নাক দিয়ে রক্ত বেরিয়েছিল। ডান কপালেও আঘাতের চিহ্ন ছিল। ময়না তদন্তের ভিডিওগ্রাফি করা হয়। ময়না তদন্তের রিপোর্টে জলে ডুবে রমেনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়। ফরেন্সিক ল্যাবরেটারিতে ভিসেরা পরীক্ষায় মৃতের শরীর থেকে ইথাইল অ্যালকোহল পাওয়া গিয়েছে বলে জানানো হয়। ভিসেরা পরীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী মদ্যপ অবস্থায় সাঁতার কাটতে গিয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত হন সিআইডির তদন্তকারী অফিসার। ঘটনার সময় সুইমিং পুলে উপস্থিত অধ্যাপক সমীরণ মাজিল্যা ও মিঠুন দত্ত সহ আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন তদন্তকারী অফিসার। মৃতের মোবাইলের সিডিআর এবং এসডিআর সংগ্রহ করা হয়। মৃতের বান্ধবীদের সঙ্গেও কথা বলেন সিআইডির তদন্তকারী অফিসার। তবে, খুনের বিষয়ে কোনও তথ্য জোগার করতে পারেন নি তদন্তকারী অফিসার। ২০১৩ সালের ৩১ মে তদন্তকারী অফিসার শেখ জামাল হোসেন খুনের অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কর্তব্যে গাফিলতির ধারায় (৩০৪এ আইপিসি) চার্জশিট পেশ করেন। তাতে আপত্তি জানান ঘটনার অভিযোগকারী মৃতের বাবা। বর্ধমান সিজেএম আদালতে সিআইডির চার্জশিটের বিষয়ে নানা অসঙ্গতি তুলে আপত্তি জানান তিনি। ছেলের মৃত্যুর কিনারায় হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। আদালতে তিনি জানান, তাঁর ছেলে মদ খেত না। তাই, ভিসেরা রিপোর্টটি তাঁর ছেলেরই কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে ডিএনএ টেস্টের দাবি জানান তিনি। পাশাপাশি প্রভাবশালী কাউকে আড়াল করতে খুনের কথা চাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে আদালতে অভিযোগ করেন তিনি। ভিসেরার নমুনা নষ্ট করে দেওয়ায় ডিএনএ টেস্ট করা সম্ভব হয়নি। ভিসেরা রিপোর্টে মৃতের পেট থেকে বালি পাওয়া যায়। সুইমিং পুলে কিভাবে বালি পাওয়া গেল তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন দেবকুমারবাবুর আইনজীবী। এরপরই সিআইডি তদন্তে অনাস্থা প্রকাশ করে সিবিআইকে দিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেন হাইকোর্টের বিচারপতি।
Exit mobile version