বর্ধমান (পূর্ব বর্ধমান) :- কয়লা কারবারি রাজু ঝা খুনের মামলায় ধৃত অভিজিৎ মণ্ডলের শর্তাধীন জামিন মঞ্জুর করল কলকাতা হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি ও বিচারপতি অজয়কুমার গুপ্তকে নিয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ ধৃতের জামিন মঞ্জুর করেছে। তবে, জামিনের শর্ত হিসেবে ধৃত আদালতে হাজির হওয়া ছাড়া পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানে ঢুকতে পারবে না, তদন্তে সাহায্য করতে হবে তাকে। জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর সে কোথায় থাকছে তা তদন্তকারী অফিসার এবং নিম্ন আদালতকে জানাতে হবে। যে থানা এলাকায় সে থাকবে সেখানকার অফিসার ইনচার্জের কাছে সপ্তাহে একদিন হাজির হতে হবে তাকে। আদালতে যুক্তিযুক্ত কারণ ছাড়া গড়হাজির থাকলে, যে আদালতে বিচার চলছে সেখানকার বিচারক জামিন খারিজ করতে পারবেন। এছাড়াও সাক্ষীকে কোনোরকম ভীতি প্রদর্শন ও সাক্ষ্য প্রমাণ নষ্ট করতে পারবে না জামিনে মুক্ত অভিযুক্ত।
হাইকোর্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতের হয়ে নামি সিনিয়র আইনজীবী সিদ্ধার্থ লুথরা জামিনের সওয়াল করেন। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে অভিজিৎ হাজির ছিল না। তার ব্যবহৃত একটি সিমকার্ড খুনের ষড়যন্ত্রে ব্যবহার করা হয়েছে বলে তদন্তকারীদের দাবি। মূলত, ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের উপর নির্ভর করে তাকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। সরকারের তরফে রুদ্রদীপ্ত নন্দী এবং অভিযোগকারীর আইনজীবী সন্দিপন গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ধৃত নরেন্দ্র খারকা নামে এক ব্যবসায়ীর সাইট ইনচার্জ। খারকার সঙ্গে রাজুর ব্যবসায়িক শত্রুতা ছিল। সেই সূত্রে অভিজিৎ খুনের ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে পড়েছে। ডিজিটাল ট্র্যাকিংয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী অভিজিতের ব্যবহৃত সিমকার্ডটি রাজুকে খুনে জড়িতরা ব্যবহার করেছে। এনিয়ে বিস্তারিত তথ্য ও কল রেকর্ড তুলে ধরা হয় সরকার পক্ষের তরফে। যদিও বিচারপতিরা তাঁদের পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন, নরেন্দ্র খারকার কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ব্যবসায়িক শত্রুতার কথা বলা হয়েছে। তার নির্দেশমতো অভিযুক্তরা কাজ করেছে। চার্জশিট পেশ হয়েছে। কিন্তু, খুনের মামলায় নরেন্দ্র খারকাকে যুক্ত করা হয়নি। তাছাড়া অভিযুক্ত ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল না। বিচারপ্রক্রিয়া অদূর ভবিষ্যতে সম্পন্ন হবে বলে মনে হচ্ছে না। সেকথা এবং দীর্ঘদিন ধৃতের জেলে থাকার কথা মাথায় রেখে জামিন মঞ্জুর করা হল।
এদিকে, জামিনের আবেদনের শুনানিতে বিচারপতিদের পর্যবেক্ষণে নরেন্দ্র খারকার নাম উঠে আসায় বিষয়টি অন্য মাত্রা পেয়েছে। সিটের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এর আগে নরেন্দ্র খারকা হাইকোর্টে সিবিআই তদন্ত চেয়ে মামলা করেন। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার এজলাসে সেই মামলায় সিবিআই জানায়, কয়লা এবং গোরু পাচারের মামলার সঙ্গে খুনের মামলার যোগ থাকতে পারে। সিবিআইয়ের তরফে হাইকোর্টে জানানো হয়, কয়লা পাচারের একটি মামলায় খারকার নামে চার্জশিট জমা পড়েছে। যদিও প্রধান বিচারপতি টিএস শিবগনণম ও বিচারপতির অজয়কুমার গুপ্তর ডিভিশন বেঞ্চ, বিচারপতি মান্থার রাজু ঝা খুনের মামলার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিয়ে সিবিআই সহ সব পক্ষকে হলফনামা জমা দিয়ে বক্তব্য জানানোর নির্দেশ দেয়।